ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা ১৮ মাস ধরে অব্যাহত হামলা ও অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই দীর্ঘমেয়াদি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। পাশাপাশি ইসরায়েলি অবরোধের ফলে গাজায় তৈরি হয়েছে নজিরবিহীন মানবিক সংকট, যেখানে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।
শনিবার (৩ মে) গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, ইসরায়েলের আরোপিত সর্বাত্মক অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, শিশুদের দুধ, পুষ্টিকর উপাদান ও জরুরি ওষুধ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। গাজার কর্মকর্তারা জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুধার কারণে অন্তত ৫৭ জন ফিলিস্তিনি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি।
গাজা সিটির আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, শনিবার অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বলছে, টানা ৬৩ দিন ধরে চলা কঠোর অবরোধের ফলে গাজার ২৪ লাখেরও বেশি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত রোগী, শিশু এবং প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খাদ্যকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে গাজার মিডিয়া অফিস। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার কঠোর সমালোচনা করে অবিলম্বে সীমান্ত খুলে দেওয়ার ও জরুরি খাদ্য-চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে গাজায় ৯ হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। শুধুমাত্র মার্চ মাসেই এই সংখ্যা ৮০ শতাংশ বেড়েছে। অবরোধের কারণে কমিউনিটি কিচেন, খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম এবং চিকিৎসা সহায়তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। সংকট এতটাই ভয়াবহ যে, হাসপাতালগুলোতে শুধুমাত্র সবচেয়ে গুরুতর অবস্থা থাকা শিশুদেরই ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইসরায়েলের আগ্রাসন ও মানবিক অপরাধ নিয়ে জবাবদিহির আহ্বান উঠছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একই সঙ্গে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা চলমান রয়েছে।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;