গত চার মাস ধরে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চিড়িংঘাটা থেকে ধোপাছড়ি সড়কটির প্রশস্তকরণের কাজ। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বর্ষার আগে প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করতে না পারলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চন্দনাইশ উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সড়কটির ৭ কিলোমিটার প্রশস্তকরণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই সময় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার চুক্তিতে কাজটি পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস কে এম ইন্টারন্যাশনাল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজটি শুরু করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কয়েক মাস দেরিতে কাজ শুরু করে। ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে কাজটি এখনো শেষ হয়নি।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে অর্ধশতাধিক পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বান্দরবানের ডলুপাড়া হয়ে ধোপাছড়ি ইউনিয়নের শঙ্খরকুল গ্রামে প্রবেশ করেন। পরে তারা তিনটি পিকআপযোগে ধোপাছড়ি বাজারে আসেন। এ সময় চিড়িংঘাটা থেকে ধোপাছড়ি সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারকে মোবাইল ফোনে তিন দিনের মধ্যে দেখা করার নির্দেশ দিয়ে চলে যান তারা। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধোপাছড়ি ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, ‘চিড়িংঘাটা থেকে ধোপাছড়ি পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ ঠিকঠাকভাবে চলছিল। হঠাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে অর্ধশতাধিক পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমাদের এলাকায় আসেন। তারা সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারকে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন এবং কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। কিছুদিন পর আমরা জানতে পারলাম ওই দিন চাঁদা আদায়ের জন্য তারা এখানে এসেছিলেন। চাঁদা না পেয়ে তারা সড়কের কাজ বন্ধ দেন। সড়কের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষায় এ দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে। সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কাশেম বলেন, ‘উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন আমাদের ইউনিয়নটির একপাশে বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়ন ও অপর পাশে সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়ন অবস্থিত। সড়ক না থাকায় আগে আমরা নৌকাযোগে সাঙ্গু নদী পার হয়ে সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়ন হয়ে চন্দনাইশ উপজেলায় যাতায়াত করতাম। পরবর্তী সময়ে ধোপাছড়ি ইউনিয়ন থেকে সরাসরি চন্দনাইশ উপজেলায় যাতায়াতের জন্য দুর্গম পাহাড়ের ওপর একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হয়। ওই সড়ক দিয়ে শুষ্ক সময় কোনো রকমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক প্রশস্তকরণ ও কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়। কাজ শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
মেসার্স এস কে এম ইন্টারন্যাশনালের ঠিকাদার তৌহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘আমি শুরুতেই ধোপাছড়ি অংশ হতে কাজ শুরু করেছিলাম। কয়েক মাস পর পাহাড়ের একটি সশস্ত্র সংগঠন মোবাইল ফোনে আমার কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা শ্রমিকদের তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। এ জন্য আমি সড়কের কাজ বন্ধ রেখেছি।’
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তা মুহাম্মদ জুনাইদ আবছার চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সড়কের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। এ কারণে সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব হোসেন বলেন, এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ওই এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি ঠিক হলে কাজ শুরু হবে।’
খালেদ / পোস্টকার্ড ;