Dhaka ১১:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা’, সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা

‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা’, সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা

আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের মূল বৈশিষ্ট্য হলো- পৃথিবীর অন্যান্য বর্ষপঞ্জি যেখানে কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলা নববর্ষ সেদিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কৃষিকাজ ও খাজনা সংগ্রহের নিমিত্তে এর প্রচলন এবং দিনে দিনে তা হয়ে ওঠে সর্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসব। তাই পুরোনোকে পেছনে ফেলে এসেছে নতুন দিন। সেই নতুনকে লোকাচার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল আলোয় বরণ করে নেবে বাঙালি।
১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন  আজ। আজ পুরোনো দিনের শোক-তাপ-বেদনা-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে, স্বপ্নের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দিন। সব ভয়কে জয় করার মানসে নতুন করে জেগে ওঠার কাক্সিক্ষত সময়। কবিগুরুর ভাষায়- ‘নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে/শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে…। একই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে নজরুল লিখেছেন, তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর…।’
তবে  এবারের প্রেক্ষাপট একটু  ভিন্ন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ একটি আশাব্যঞ্জক নতুন ধারায় বিনির্মাণ হবে। আমাদের বর্ষবরণের রীতিনীতি বদলে গিয়ে জাতীয় মূল চেতনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে এ প্রত্যাশা দেশবাসীর। তারপরও রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের আসর জমবে। আয়োজন করা হবে আনন্দ শোভাযাত্রার। বাঙালি তার মনের রংটুকু ধরে রাখবে। হতাশায় না ডুবে সবাই মিলে একসঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। সুন্দর আরও বর্ণাঢ্যে নববর্ষ উদযাপন করবে বাঙালি। আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষি, ব্যবসা, পার্বণসহ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাংলা সনের ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাঙালির জীবনে বাংলা নববর্ষের আবেদন তাই চিরন্তন ও সর্বজনীন। বাংলা নববর্ষ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জনগোষ্ঠী বর্ষবরণ উৎসবকে ঐতিহ্যগতভাবে ধারণ করে থাকে।
বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার এই উৎসব, তা আজ বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। নানা আয়োজনে দেশজুড়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। বাঙালির এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব জাতীয় ইতিহাসেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলা নববর্ষের হাত ধরে প্রায় একই সময়ে পাহাড়ে উদযাপন হয় বৈসাবি, বিজু ইত্যাদি উৎসব। নববর্ষে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে দোকানে দোকানে হালখাতা খোলার রীতি আজও প্রচলিত। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রাণসঞ্চার হয় প্রতি বছর। হস্তশিল্পের প্রসারে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। শহরাঞ্চলে বুটিক ও ফ্যাশন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ার খবরও উৎসাহব্যঞ্জক। এসব কর্মকা- আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে যুক্ত করছে নতুন মাত্রা।
বাঙালির জীবনে বৈশাখ একটি অনন্য বার্তা নিয়ে আসে। বিগত জীবনের দীনতা, হীনতা ও জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে উদ্যমী হওয়ার আহ্বান জানায় বৈশাখ। দুঃখ-কষ্ট, বেদনাকে মুছে ফেলে নতুন করে বাঁচার নির্দেশনা দেয়। পাতা ঝরে পড়ার পর সেখানে নতুন পাতার আগমন যেমন বৃক্ষকে সাজিয়ে তোলে, তেমনি বৈশাখ বছরকে নতুন করে সাজায়। আমরা প্রত্যাশা করি, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ প্রত্যেক বাঙালির জীবনে সজীবতা বয়ে আনবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলি, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা’। পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক। সবার জন্য মঙ্গলময় হোক নতুন বছর। সকল পাঠক, লেখক শুভানুধ্যায়ীদের জানাই- শুভ নববর্ষ।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;
আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
ট্যাগ:
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইশরাককে শপথ পড়ানো যাবে না: রিটকারীর আইনজীবী

‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা’, সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা

আপডেটের সময় : ০৩:৫৭:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের মূল বৈশিষ্ট্য হলো- পৃথিবীর অন্যান্য বর্ষপঞ্জি যেখানে কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলা নববর্ষ সেদিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কৃষিকাজ ও খাজনা সংগ্রহের নিমিত্তে এর প্রচলন এবং দিনে দিনে তা হয়ে ওঠে সর্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসব। তাই পুরোনোকে পেছনে ফেলে এসেছে নতুন দিন। সেই নতুনকে লোকাচার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল আলোয় বরণ করে নেবে বাঙালি।
১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন  আজ। আজ পুরোনো দিনের শোক-তাপ-বেদনা-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে, স্বপ্নের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দিন। সব ভয়কে জয় করার মানসে নতুন করে জেগে ওঠার কাক্সিক্ষত সময়। কবিগুরুর ভাষায়- ‘নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে/শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে…। একই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে নজরুল লিখেছেন, তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর…।’
তবে  এবারের প্রেক্ষাপট একটু  ভিন্ন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ একটি আশাব্যঞ্জক নতুন ধারায় বিনির্মাণ হবে। আমাদের বর্ষবরণের রীতিনীতি বদলে গিয়ে জাতীয় মূল চেতনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে এ প্রত্যাশা দেশবাসীর। তারপরও রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের আসর জমবে। আয়োজন করা হবে আনন্দ শোভাযাত্রার। বাঙালি তার মনের রংটুকু ধরে রাখবে। হতাশায় না ডুবে সবাই মিলে একসঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। সুন্দর আরও বর্ণাঢ্যে নববর্ষ উদযাপন করবে বাঙালি। আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষি, ব্যবসা, পার্বণসহ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাংলা সনের ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাঙালির জীবনে বাংলা নববর্ষের আবেদন তাই চিরন্তন ও সর্বজনীন। বাংলা নববর্ষ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জনগোষ্ঠী বর্ষবরণ উৎসবকে ঐতিহ্যগতভাবে ধারণ করে থাকে।
বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার এই উৎসব, তা আজ বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। নানা আয়োজনে দেশজুড়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। বাঙালির এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব জাতীয় ইতিহাসেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলা নববর্ষের হাত ধরে প্রায় একই সময়ে পাহাড়ে উদযাপন হয় বৈসাবি, বিজু ইত্যাদি উৎসব। নববর্ষে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে দোকানে দোকানে হালখাতা খোলার রীতি আজও প্রচলিত। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রাণসঞ্চার হয় প্রতি বছর। হস্তশিল্পের প্রসারে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। শহরাঞ্চলে বুটিক ও ফ্যাশন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ার খবরও উৎসাহব্যঞ্জক। এসব কর্মকা- আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে যুক্ত করছে নতুন মাত্রা।
বাঙালির জীবনে বৈশাখ একটি অনন্য বার্তা নিয়ে আসে। বিগত জীবনের দীনতা, হীনতা ও জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে উদ্যমী হওয়ার আহ্বান জানায় বৈশাখ। দুঃখ-কষ্ট, বেদনাকে মুছে ফেলে নতুন করে বাঁচার নির্দেশনা দেয়। পাতা ঝরে পড়ার পর সেখানে নতুন পাতার আগমন যেমন বৃক্ষকে সাজিয়ে তোলে, তেমনি বৈশাখ বছরকে নতুন করে সাজায়। আমরা প্রত্যাশা করি, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ প্রত্যেক বাঙালির জীবনে সজীবতা বয়ে আনবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলি, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা’। পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক। সবার জন্য মঙ্গলময় হোক নতুন বছর। সকল পাঠক, লেখক শুভানুধ্যায়ীদের জানাই- শুভ নববর্ষ।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;
আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন