রমজান মাসের শুরুর দিকে অনেকেই খুব আগ্রহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে আমল করে থাকেন। মসজিদগুলো কানায় কানায় ভরপুর থাকে।
আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মধ্যে আমলের এক নতুন আমেজ লক্ষ করা যায়। তবে এ আগ্রহ-উদ্দীপনা বেশি দিন থাকে না। রমজানের কয়েক দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে এক ধরনের অলসভাব চলে আসে। নামাজে আগের মতো মনোযোগ থাকে না। তেলাওয়াতে মন বসে না।
অন্যান্য ইবাদতেও এক ধরনের ভাটা পড়ে যায়। আমলের আগ্রহাতিশয্য ফিরে আসে আবার রমজানের শেষের দিকে। লাইলাতুল-কদরের সময়। কিন্তু একজন সচেতন মুমিনের জন্য রমজানের মূল্যবান মুহূর্তগুলোকে এভাবে হেলায়-খেলায় ব্যয় করা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়।
নিজেকে পরিবর্তনের উদ্যোগ : আমরা সবাই নিজ জীবনের পরিবর্তন চাই। নিজেদের ঈমান-আমল চাঙ্গা করতে চাই। আরও সমৃদ্ধি কামনা করি। কিন্তু এটা তো এমনি এমনি হবে না। প্রত্যেকের নিজ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমি যখন নিজেকে পরিবর্তন করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে উদ্যোগী হব, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য অবশ্যই আসবে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।’ (সুরা রাদ : ১১)।
নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া : আমাদের উচিত নিজ থেকে মঙ্গল ও কল্যাণের দিকে এগিয়ে যাওয়া। অন্যথায় নফস ও শয়তান আমাদের ধ্বংস ও বরবাদের দিকে নিয়ে যাবে। তাই রমজানকে পুঁজি করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেলে ইনশাআল্লাহ শ্রেষ্ঠত্বের সুউচ্চ চূড়ায় পৌঁছা সম্ভব। ইরশাদ হচ্ছে, ‘এই জাহান্নাম ভয়াবহ বিপদগুলোর অন্যতম। মানুষের জন্য সতর্ককারী, তোমাদের মধ্যে যে কল্যাণের পথে এগিয়ে যেতে চায় অথবা পেছনে পড়ে থাকতে চায় তার জন্য।’ (সুরা মুদ্দাসিসর : ৩৬-৩৭)।
চেষ্টা অব্যাহত রাখা : আমরা যদি শান্তি ও কল্যাণের পথে পরিচালিত হওয়ার চেষ্টা করি তা হলে আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনিই আমাদের সাহায্য করবেন। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দরকার শুধু অদম্য আগ্রহ ও মনোবলের সঙ্গে চেষ্টা করে যাওয়া। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা আমার পথে চেষ্টা-সাধনা করে, আমি অবশ্যই তাদের আমার পথে পরিচালিত করি।’ (সুরা আনকাবুত : ৬৯)।
গুনাহ ক্ষমা করানো : হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি তার জন্য ধ্বংস। জিবরাইল (আ.) তাদের জন্য বদদোয়া করেছেন আর রাসুল (সা.) তাঁর এই বদদোয়ায় আমিন বলেছেন। অতএব অলস বসে থাকার সুযোগ নেই।
রমজানজুড়ে তওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহ থেকে গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে হবে। এমন রমজান পেয়েও যদি গুনাহ মাফ না করাতে পারি তা হলে এরচেয়ে বড় হতভাগা আর কেউ হবে না।
জীবনের শেষ রমজান মনে করা : কত রমজান হেলায়-খেলায় চলে গেছে। আরও একটি রমজান আল্লাহ তায়ালা আমাদের দান করেছেন।
কে জানে হয়তো এটিই জীবনের শেষ রমজান। চারপাশে একটু চোখ বুলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারব যে, অনেক লোক এমন ছিলেন যাদের সঙ্গে আমরা গত রমজানগুলো কাটিয়েছি। কিন্তু তারা এখন নেই। কবরে চলে গেছেন। সুতরাং আমি যে আগামী রমজান পাব এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই রমজানের একটি সেকেন্ডও অনর্থক নষ্ট না করে, সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন করে নিজের আখের গুছিয়ে নিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;