Dhaka ১২:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজিবির ১০৩ তম রিক্রুট ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ সম্পন্ন

দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় সৈনিকরা প্রয়োজনে জীবন দেবে: বিজিবি মহাপরিচালক

দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় সৈনিকরা প্রয়োজনে জীবন দেবে: বিজিবি মহাপরিচালক

সন্তান দেশের জন্য জীবনবাজি রাখবে এমন স্বপ্ন ছিল কারও বাবা-মায়ের , কেউ ভাই না থাকার অভাব মিটাতে সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন, আবার কেউ ছোটবেলা থেকেই দেশমাতৃকার সীমান্ত রক্ষার স্বপ্ন বুনেছে। পরিবারের অভাব-অনটন বা সংকীর্ণতা তাদের স্বপ্নকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তারা এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গর্বিত সৈনিক। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে তাদের স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়েছে। পদে পদে চ্যালেঞ্জ ও জীবনের ঝুঁকি থাকলেও হাসিমুখে তা বরণ করে নবীন সৈনিকরা দৃপ্ত শপথ নিয়েছেন-শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মাতৃভূমি রক্ষা করবেন, সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করবেন এবং নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও অর্পিত দায়িত্ব পালন ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন।

তাদেরই একজন সাইফ মিয়া। কুমিল্লার মুরাদনগরের সাহেদাগোপ গ্রামের কৃষক মো. জামাল মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় সাইফ ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণে সর্ব বিষয়ে সেরা হয়েছেন। সাইফ মিয়া বলেন, বাবা কৃষিকাজ করে অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়ালেখা করিয়েছেন। আমার জন্মের পর থেকেই বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হলে আমি যেন সৈনিক হই। আজ আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন থেকে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষায় জীবনবাজি রেখে হলেও শত্রুকে প্রতিহত করব। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে যখন যে নির্দেশনা আসবে তা পালন করব।

শুধু সাইফ মিয়া নয়, ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচে দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের কঠোর ও কষ্টসাধ্য প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে ৬৫৮ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারীসহ সর্বমোট ৬৯৪ জন রিক্রুট সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিয়ে সৈনিক জীবনে পদার্পণ করল।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে এ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীকে সশস্ত্র সালাম দেওয়ার মধ্য দিয়ে ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের শপথগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি ডিজি নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন।

অনুষ্ঠানে বিজিটিসিঅ্যান্ডসির কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী নাহিদুজ্জামানসহ বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে প্রশিক্ষণে সর্ববিষয়ে সেরা সাইফ মিয়া বলেন, প্রশিক্ষক এক স্যার বলতেন, তোমার শরীরে হাড্ডি থাকলে মাংসের অভাব হবে না। এই কথাটি আমার মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন ট্রেনিং শেষে ক্লান্ত শরীরে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত, তখন আমি নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়ার বিষয়ে ভাবতাম। বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করে গেছি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা সবাই প্রস্তুত। দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিতে কোনো ধরনের কুণ্ঠাবোধ নেই। প্রশিক্ষণ সমাপনীতে পুরুষ সৈনিকদের মধ্যে শারীরিক উৎকর্ষতায় সেরা হয়েছেন সৈনিক মো. মইনুর রহমান, নারী সৈনিকদের মধ্যে শারীরিক উৎকর্ষতায় সেরা হয়েছেন শাপলা খাতুন।

চাঁদনী আক্তার নামের এক সৈনিক জানান, কিশোরগঞ্জের দিকদ্বার এলাকার কৃষক নজরুল ইসলামের মেয়ে তিনি। নুসরাত ও রোজা নামের তার ছোট দুটি বোন রয়েছে। পরিবারে কোনো ভাই না থাকায় ছোটবেলায় তিনি স্বপ্ন দেখেন এমন কিছু করবেন যাতে বাবা-মা ছেলে সন্তান না থাকার আফসোস নাম করে। এভাবেই তার মনে সৈনিক হওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। পরে বিজিবিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে এখন তিনি বিজিবির গর্বিত সৈনিক।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের শুরুতে মনে হয়েছে, এই চ্যালেঞ্জে আমি হেরে যাব। কিন্তু প্রশিক্ষকদের সহযোগিতা আর পরিবারের অনুপ্রেরণায় আমি হারিনি। বরং ভয়কে জয় করেছি। তিনি জানান, এখন কোনো কিছুতেই পিছপা হতে চান না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

সৈনিকদের প্যারেড দেখে আপ্লুত স্বজনরা :

১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন নবীন সৈনিকদের স্বজনরাও। সন্তানকে প্যারেড গ্রাউন্ডে দেখে অনেকেই আপ্লুত হয়ে পড়েন। জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও গর্ববোধ করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। নবীন সৈনিক আজিম হোসেনের বাবা মুদি দোকানদার মো. মাসুদ বলেন, আমার ছেলে সবসময় সৈনিক হতে চেয়েছে। আজ ওর স্বপ্ন পূরণ হলো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হায়াত মউত আল্লাহর হাতে, ছেলে দেশের জন্য কাজ করবে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়। পাশেই আঙুল দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে থাকা ছেলেকে দেখিয়ে চোখ মুছলেন সৈনিক পারভেজের বাবা আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, চোখের এই পানি আনন্দের। আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হতে দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারছি না।

নবীনদের উদ্দেশে বিজিবির ডিজি যা বললেন :

বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, দেশমাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষায় নবীন সৈনিকরা প্রয়োজনে তাদের জীবন দেবে, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে না। নবীন সৈনিকরা কখনো দেশবাসীকে হতাশ ও নিরাশ করবে না। তাদের দেওয়া নিñিদ্র নিরাপত্তাই দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ঘুম নিশ্চিত করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ খ্যাত এই বাহিনী বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সুদীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষাসহ সীমান্ত-ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, মাদক ও অস্ত্রসহ অন্যান্য অবৈধ পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ যেকোনো ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। শুধু তাই নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার ক্ষেত্রেও বিজিবি অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হচ্ছে।

নবীন সৈনিকদের ‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’ বিজিবির এই চারটি মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালনের নির্দেশ দেন বিজিবি ডিজি।

বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের তেজদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, বৃহত্তর কর্মজীবনে কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। নবীন সৈনিকরা যখন সীমান্তে নিয়োজিত থাকবে তখন তাদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার ওপরই নির্ভর করবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব।

পরিশেষে বিজিবির প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবির সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকস দল কর্তৃক বিজিবি মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম দেওয়ার মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

আনোয়ারা সাংবাদিক সমিতির নতুন কমিটি গঠন, সভাপতি নাবিদ ও সম্পাদক ফরহাদুল

বিজিবির ১০৩ তম রিক্রুট ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ সম্পন্ন

দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় সৈনিকরা প্রয়োজনে জীবন দেবে: বিজিবি মহাপরিচালক

আপডেটের সময় : ০২:০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

সন্তান দেশের জন্য জীবনবাজি রাখবে এমন স্বপ্ন ছিল কারও বাবা-মায়ের , কেউ ভাই না থাকার অভাব মিটাতে সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন, আবার কেউ ছোটবেলা থেকেই দেশমাতৃকার সীমান্ত রক্ষার স্বপ্ন বুনেছে। পরিবারের অভাব-অনটন বা সংকীর্ণতা তাদের স্বপ্নকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তারা এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গর্বিত সৈনিক। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে তাদের স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়েছে। পদে পদে চ্যালেঞ্জ ও জীবনের ঝুঁকি থাকলেও হাসিমুখে তা বরণ করে নবীন সৈনিকরা দৃপ্ত শপথ নিয়েছেন-শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মাতৃভূমি রক্ষা করবেন, সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করবেন এবং নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও অর্পিত দায়িত্ব পালন ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন।

তাদেরই একজন সাইফ মিয়া। কুমিল্লার মুরাদনগরের সাহেদাগোপ গ্রামের কৃষক মো. জামাল মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় সাইফ ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণে সর্ব বিষয়ে সেরা হয়েছেন। সাইফ মিয়া বলেন, বাবা কৃষিকাজ করে অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়ালেখা করিয়েছেন। আমার জন্মের পর থেকেই বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হলে আমি যেন সৈনিক হই। আজ আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন থেকে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষায় জীবনবাজি রেখে হলেও শত্রুকে প্রতিহত করব। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে যখন যে নির্দেশনা আসবে তা পালন করব।

শুধু সাইফ মিয়া নয়, ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচে দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের কঠোর ও কষ্টসাধ্য প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে ৬৫৮ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারীসহ সর্বমোট ৬৯৪ জন রিক্রুট সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিয়ে সৈনিক জীবনে পদার্পণ করল।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে এ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীকে সশস্ত্র সালাম দেওয়ার মধ্য দিয়ে ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের শপথগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি ডিজি নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন।

অনুষ্ঠানে বিজিটিসিঅ্যান্ডসির কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী নাহিদুজ্জামানসহ বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে প্রশিক্ষণে সর্ববিষয়ে সেরা সাইফ মিয়া বলেন, প্রশিক্ষক এক স্যার বলতেন, তোমার শরীরে হাড্ডি থাকলে মাংসের অভাব হবে না। এই কথাটি আমার মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন ট্রেনিং শেষে ক্লান্ত শরীরে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত, তখন আমি নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়ার বিষয়ে ভাবতাম। বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করে গেছি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা সবাই প্রস্তুত। দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিতে কোনো ধরনের কুণ্ঠাবোধ নেই। প্রশিক্ষণ সমাপনীতে পুরুষ সৈনিকদের মধ্যে শারীরিক উৎকর্ষতায় সেরা হয়েছেন সৈনিক মো. মইনুর রহমান, নারী সৈনিকদের মধ্যে শারীরিক উৎকর্ষতায় সেরা হয়েছেন শাপলা খাতুন।

চাঁদনী আক্তার নামের এক সৈনিক জানান, কিশোরগঞ্জের দিকদ্বার এলাকার কৃষক নজরুল ইসলামের মেয়ে তিনি। নুসরাত ও রোজা নামের তার ছোট দুটি বোন রয়েছে। পরিবারে কোনো ভাই না থাকায় ছোটবেলায় তিনি স্বপ্ন দেখেন এমন কিছু করবেন যাতে বাবা-মা ছেলে সন্তান না থাকার আফসোস নাম করে। এভাবেই তার মনে সৈনিক হওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। পরে বিজিবিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে এখন তিনি বিজিবির গর্বিত সৈনিক।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের শুরুতে মনে হয়েছে, এই চ্যালেঞ্জে আমি হেরে যাব। কিন্তু প্রশিক্ষকদের সহযোগিতা আর পরিবারের অনুপ্রেরণায় আমি হারিনি। বরং ভয়কে জয় করেছি। তিনি জানান, এখন কোনো কিছুতেই পিছপা হতে চান না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

সৈনিকদের প্যারেড দেখে আপ্লুত স্বজনরা :

১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন নবীন সৈনিকদের স্বজনরাও। সন্তানকে প্যারেড গ্রাউন্ডে দেখে অনেকেই আপ্লুত হয়ে পড়েন। জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও গর্ববোধ করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। নবীন সৈনিক আজিম হোসেনের বাবা মুদি দোকানদার মো. মাসুদ বলেন, আমার ছেলে সবসময় সৈনিক হতে চেয়েছে। আজ ওর স্বপ্ন পূরণ হলো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হায়াত মউত আল্লাহর হাতে, ছেলে দেশের জন্য কাজ করবে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়। পাশেই আঙুল দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে থাকা ছেলেকে দেখিয়ে চোখ মুছলেন সৈনিক পারভেজের বাবা আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, চোখের এই পানি আনন্দের। আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হতে দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারছি না।

নবীনদের উদ্দেশে বিজিবির ডিজি যা বললেন :

বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, দেশমাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষায় নবীন সৈনিকরা প্রয়োজনে তাদের জীবন দেবে, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে না। নবীন সৈনিকরা কখনো দেশবাসীকে হতাশ ও নিরাশ করবে না। তাদের দেওয়া নিñিদ্র নিরাপত্তাই দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ঘুম নিশ্চিত করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ খ্যাত এই বাহিনী বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সুদীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষাসহ সীমান্ত-ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, মাদক ও অস্ত্রসহ অন্যান্য অবৈধ পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ যেকোনো ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। শুধু তাই নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার ক্ষেত্রেও বিজিবি অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হচ্ছে।

নবীন সৈনিকদের ‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’ বিজিবির এই চারটি মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালনের নির্দেশ দেন বিজিবি ডিজি।

বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের তেজদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, বৃহত্তর কর্মজীবনে কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। নবীন সৈনিকরা যখন সীমান্তে নিয়োজিত থাকবে তখন তাদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার ওপরই নির্ভর করবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব।

পরিশেষে বিজিবির প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবির সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকস দল কর্তৃক বিজিবি মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম দেওয়ার মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন