বৃষ্টি আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অমূল্য নেয়ামত। বৃষ্টিতে পরিবেশ শীতল হয়। প্রকৃতি সতেজ সবুজ হয়। বৃষ্টির পানিতে মাটি উর্বর হয়। গাছে আসে ফুল ও ফল। এই বৃষ্টির পানি আমের মুকুলে পড়লে আম হয় মিষ্টি বা টক। লটকন হয় অম্লমধুর। করলার বুকে পড়লে তা হয় তিতা। বৃষ্টির পানি পানে গরু-ছাগলের উলানে আসে দুধ। হরিণের বুকে জন্মায় কস্তুরি। এই বৃষ্টির পানি পানে সাপের মুখে হয় বিষ।
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর আমি এর মাধ্যমে সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। আমি তা থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি, সৃষ্টি করি জায়তুন ও আনার, যা পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত ও সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ করো, যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ করো। নিশ্চয় এগুলোতে ইমানদারদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৯৯)
রাসুলুল্লাহ (দ.) বৃষ্টিতে ভিজতেন। তিনি বৃষ্টি পছন্দ করতেন। বৃষ্টিতে ভেজা সুন্নত।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (দ.)-এর সঙ্গে ছিলাম, এমন সময় আমাদের ওপর বৃষ্টি নামল। রাসুলুল্লাহ (দ.) শরীরের ওপরিভাগ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলেন। ফলে তাঁর শরীর বৃষ্টিতে ভিজে গেল। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি উত্তরে বললেন, যেহেতু তা মহান প্রভুর পক্ষ থেকে সদ্য আগত, তাই আমি বরকতের জন্য শরীরে লাগিয়ে নিলাম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৯৮)
বৃষ্টি নামলে দেহের ওপরিভাগ অবমুক্ত করে বৃষ্টিস্নান করা সুন্নত। যেন সরাসরি বৃষ্টির বরকত লাভ করা যায়। অর্থাৎ কোনো ছাতা বা কাপড় যেন গায়ে না থাকে। তবে সতর খোলা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (দ.) এর কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, এটি মহান প্রভুর পক্ষ থেকে সদ্য আগত। কারণ, বৃষ্টি আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আসমান থেকে।
বৃষ্টি হলো নতুন পানি ও নতুন সৃষ্টি। বৃষ্টি দয়া ও কল্যাণের বার্তাবাহক। আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। বৃষ্টি এসে জমিন, মানুষ ও সব সৃষ্টির মাঝে প্রাণ সঞ্চার করে।
বৃষ্টি সৃষ্টিকর্তার একনিষ্ঠ সৈনিক। কারও ওপর তা বর্ষে রহমত ও নেয়ামত হয়ে। আর কারও ওপর বর্ষে প্রতিশোধ ও আজাব হয়ে। কাজেই রাসুলুল্লাহ (দ.)-এর এই আনন্দ উদযাপন দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাদের মনে এই ধারণা তৈরি করেছেন যে, মানুষ ও বৃষ্টি একই সুতায় গাঁথা। উভয়েই আল্লাহর ইবাদত করছে অবিরাম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই, যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পারো না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল এবং ক্ষমাপরায়ণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৪৪)
বৃষ্টির এই সুখময় নেয়ামত পেয়ে আল্লাহর বন্দনা করা উচিত। আমরা নিজেদের ও সন্তানদের শরীরকে অবমুক্ত করে দেব বৃষ্টিস্নানের জন্য। মনে রাখতে হবে, বৃষ্টি এলে নবীজি (দ.) শরীর মেলে ধরতেন। বৃষ্টি ছুঁয়ে দিতেন। বৃষ্টিতে ভিজতেন।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;