ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সারাদেশের নির্বাচন কার্যালয়। ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত সংস্কারের তালিকা তৈরিসহ চলছে নানা তোড়জোড়। চট্টগ্রাম শহরের আকবর শাহ, খুলশীর একাংশ আর সীতাকুণ্ড উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৪ সংসদীয় আসন। প্রায় তিনশ শিল্প কারখানা থাকায় আসনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সংসদীয় নির্বাচনে ১৯৭০ সাল থেকে এই আসনে যে দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে, সেই দলই সরকার গঠন করেছে। এতে আসনটিতে থাকে বাড়তি নজর।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেও চট্টগ্রাম-৪ আসনে শুরু হয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপ। নানাভাবে এসব প্রার্থী ভোটার ও রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এখনও পর্যন্ত মাঠে বিএনপি থেকে দলের চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা লায়ন মো. আসলাম চৌধুরীর এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরীকে ঘিরেই চলছে আলোচনা।
এবার নির্বাচন ঘিরে নানা আলোচনা চলছে সাধারণের ভেতর। দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই এলাকার মানুষের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ পাবে তাঁরা। এক্ষেত্রে এলাকার উন্নয়নে ব্যক্তিগত ক্যারিশমাই গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছে ভোটাররা।
এই আসনে বিএনপি থেকে দলের চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা লায়ন মো. আসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত এবং তিনি এখানে একক প্রার্থী হিসাবেই আছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরীকে। এছাড়া জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে প্রার্থী দিতে পারে। তবে আপাতত বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থী কর্মী সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়ে যাচ্ছেন ।
রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, এ আসনে বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন চাইবেন এবং হাইভোল্টেজ ও একক প্রার্থী হিসাবে তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে দলীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। দলীয় কর্মকাণ্ডে স্বোচ্চার থাকার কারণে ২০১২ সাল থেকে অন্তত চারবার কারাবরণ করেন এই বিএনপি নেতা। সর্বশেষ গ্রেফতার হয়ে টানা ৮ বছর ৩ মাস ৫ দিন জেল খাটেন তিনি। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
লায়ন আসলাম চৌধুরী অতীতে নির্যাতন এবং আগামীর নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি। আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। মানুষের পাশে ছিলাম। আগামী দিনেও থাকব, এটাই আমার প্রত্যয়।
সীতাকুণ্ডে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নানা কর্মসূচি পালনে জামায়াতের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এই সংগঠনের কেন্দ্র ঘোষিত একক প্রার্থী আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, সাংগঠনিক মতামতের ভিত্তিতেই আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমি টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থান বেশ ভালো বলে জানান তিনি।
বিভিন্ন আন্দোলনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের অবস্থান ছিল লক্ষনীয় । বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মোমবাতি) সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. মুজিব উদ্দিন বলেন, দলীয়ভাবে এখনো প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ আসন থেকে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবুল আসাদ মো. জোবাইর রজভীর নাম শোনা যাচ্ছে।
সীতাকুণ্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি রেজাউল করিম বাহার বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে নির্বাচনে তাদের অংশ্রগহণ করা-না-করার বিষয়টি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে চটগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ মনোনয়ন প্রত্যাশী।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (এমআর সিদ্দিকী, বর্তমানে প্রয়াত) এমপি নির্বাচিত হন এবং তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার লুৎফুল কবির সিদ্দিকী (এল কে সিদ্দিকী)। তিনি এমআর সিদ্দিকীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের ৭ মের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আইনুল কামাল, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ নির্বাচনে জয়ী হন মো. আইনুল কামাল। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপির এল কে সিদ্দিকী, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবিএম আবুল কাশেম মাস্টার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপির এল কে সিদ্দিকী, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন এবিএম আবুল কাসেম মাস্টার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ‘বিনা ভোটে’ এমপি নির্বাচিত হন মো. দিদারুল আলম। একইভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আবারও এমপি নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালে নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে এসএম আল মামুন।
চট্টগ্রাম-৪ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ০৯ ও ১০ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত । ২০২৪ সালের তালিকা অনুযায়ী এখানে মোট ভোটার – ৪,২৭,১৭২ , নারী ভোটার -২,০২,৩৩৭ , পুরুষ ভোটার – ২,২৪,৮২৭, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার – ৮ ;
খালেদ / পোস্টকার্ড ;