Dhaka ১২:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাহাড় কেটে ৪০০ কোটি টাকার ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড ,পাহাড়ধসের শঙ্কায় বন্ধ ২৭ দিন

পাহাড়ধসের শঙ্কায় বন্ধ ২৭ দিন

ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড রফিক সওদাগর বাড়ির মৃত মো. জাফরের ছোট ছেলে জুনাইদ । তার পরিবারের কারও কাছে বাইক নেই। সে নিজেও এখনো ভালোভাবে বাইক চালাতে পারত না। স্থানীয় গ্যারেজে বয়স বিবেচনা না করে যারা ভালোভাবে চালাতে জানে না তাদেরও টাকার বিনিময়ে বাইক ভাড়া দেওয়া হয় জেনে এ সুযোগে গত ২০ জুন ছয় বন্ধু দুইটি বাইকে সাগরপাড়ে বেড়াতে যাচ্ছিল । পথিমধ্যে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের জিরো পয়েন্টে লরির চাকার নিচে পড়ে জুনাইদ (১৭) এর মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ।

এর আগে চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা জাহান জেবা শনিবার দুপুরে বাবা ফারুকের পেছনে মোটরসাইকেলে চড়ে যাচ্ছিল কলেজে। নগরীর সীতাকুণ্ড ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় আসতেই হঠাৎ কাদা মাটিতে পিছলে যায় মোটরসাইকেল। সামনের দিকে বাবা আর পেছনে ছিটকে সড়কে পড়ে যায় ফাতেমা। আর মুহূর্তের মধ্যে দ্রুতগতির একটি লরি চাপা দিয়ে চলে যায় তাকে। ঘটনাস্থলেই বাবার চোখের সামনেই ছটফট করতে করতে মৃত্যু হয় মেয়েটির। কলিজার টুকরো মেয়েকে হারিয়ে রাস্তার ওপরই বিধ্বস্ত আর দিশেহারা হয়ে পড়েন বাবা মোহাম্মদ ফারুক। চোখের সামনে মেয়ের ছটফট করতে করতে মৃত্যু দেখে উদভ্রান্তের মতো আচরণ করতে থাকেন ফারুক।

শুধু জুনাইদ বা ফাতেমা নয়, গত এক বছরে এ সড়কে ঘটেছে এমন ডজনখানেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ সংখ্যা ৩০-এর কম নয় মোটেই ।

রাস্থায় যেমন কোনো সড়ক বাতি জ্বলে না। তেমনি নেই কোন ট্রাফিক ব্যবস্থা। তাছাড়া এ সড়কে জ্বলেনা সড়কবাতি আর তাই রাতের বেলায় ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। প্রায় সময় অপরাধ সংঘটিত হয়। যাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নিতে ছিনতাইকারী, কিশোর গ্যাং চক্র ওত পেতে থাকে।

এদিকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দুটি লেন ২৭ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ধসের শঙ্কায় গত ৩০ মে থেকে সড়কটির চার লেনের মধ্যে বায়েজিদমুখী দুই লেন বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরপর থেকে দুই পাশের যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে একপাশ দিয়ে চলাচল করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামমুখী দুই জেলা ও চট্টগ্রাম শহরের কিছু জায়গার উদ্দেশে প্রচুর পরিমাণে ট্রাক ও বাস এই পথে চলাচল করে। এ ছাড়া দ্রুত গতিতে চালানো বাইকারদের কাছে এই পথটি খুবই পছন্দের! কিন্তু এই সড়কে কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুই লেন বন্ধের পর থেকে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। তাছাড়া বৃষ্টি একেবারে বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত দুই লেন খোলার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সিডিএ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, এ সড়কের পাশেই জঙ্গল সলিমপুর (ছিন্নমূল) এলাকার শত শত সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, শেরশাহ, বাংলাবাজার, আরেফিন নগর, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ বাইপাস সড়কটি বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে এসব যান এখন উল্টো পথে চলাচল করছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঈদের আগে ও পরে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা আলোচনায় আসেনি। অনেকে মুখোমুখি সংঘর্ষে মারাত্মক আহত হয়েছেন। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের সঙ্গে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ অনেক দিন ধরে রাস্তাটির একপাশ বন্ধ। মাঝে বৃষ্টি হয়নি। এরপরও বন্ধ ছিল। কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে লম্বা সময় বন্ধ রাখা অনিরাপদ। বরাবরের মতো গাফিলতি করছে সিডিএ।

এইসব প্রসঙ্গে কথা হয় ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদ রানার সঙ্গে । তিনি বলেন, গত বছর সড়কটির একটি অংশ বন্ধ করে দেয় সিডিএ। এরপর এক লাইনে দ্বিমুখী গাড়ি চলতে গিয়ে ঘটে গেছে বেশ কিছু দুর্ঘটনা। যদিও ফাঁড়ি পর্যন্ত আসেনি এসব দুর্ঘটনায় অভিযোগ। আর তাই মামলা না হওয়ায় নথিভুক্ত হয়নি দুর্ঘটনাগুলো।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন শেরশাহ বাংলাবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পর্যন্ত নির্মিত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক নির্মাণের সময় পাহাড় কাটায় মানা হয়নি কোনো নিয়মনীতি। একের পর এক পাহাড় কাটা হয়েছে খাড়াভাবে। ফলে বৃষ্টি হলেই খাড়া পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ছে সড়কের ওপর। গত বছর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন ক্যাম্পাসের পেছনে চারটি পাহাড় ধসে পড়ে সড়কের ওপর। দীর্ঘদিনেও ধসে পড়া সেই মাটি সড়কের পাশ থেকে সরায়নি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ফলে ওই চার স্থানসহ আরও নতুন পাঁচটি স্থানে বৃষ্টি হলেই সড়কে মাটি এসে জমা হয় পাহাড়ি পানির স্রোতের সঙ্গে। এতে ঝুঁকিও বাড়তে থাকে ।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে  জানা যায়,  ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়ক নির্মাণ করেছে সিডিএ। সড়কটি ব্যবহার করে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলার গাড়িগুলো সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে যায় মূল শহরে প্রবেশ না করেই। এখনও পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও দুই বছর আগে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সড়কটি। তবে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর পরই পাহাড়ধসের কারণে গত বছরের বর্ষায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ফৌজদারহাটমুখী লেন। পরে শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে আবারও খুলে দেওয়া হয় ।

এর আগে এই ৬ কিলোমিটার ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক মোড় নির্মাণে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়। একেবারে নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন নিয়ে ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটে সিডিএ। পরে পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি এবং ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করার দায়ে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করে পরিবেশ অধিদফতর। একইভাবে আরেক শুনানিতে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদফতর। যদিও মামলা দুটি আপিল শুনানিতে নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে আগে কাটা ১৬টি পাহাড় ২২.৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কাটার প্রস্তাবনা দিলেও পরিবেশ অধিদফতর না করে দেয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, সড়ক প্রকল্পের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তা ছাড়া কিছু অংশে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ বাকি আছে। এ ছাড়া পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সড়কটির ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ১১ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
এই সড়কে কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষের পর ট্রাফিক সঙ্কেত দেওয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া  বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত সড়কের একপাশ বন্ধ রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;
আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

আনোয়ারা সাংবাদিক সমিতির নতুন কমিটি গঠন, সভাপতি নাবিদ ও সম্পাদক ফরহাদুল

পাহাড় কেটে ৪০০ কোটি টাকার ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড ,পাহাড়ধসের শঙ্কায় বন্ধ ২৭ দিন

আপডেটের সময় : ০৮:০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড রফিক সওদাগর বাড়ির মৃত মো. জাফরের ছোট ছেলে জুনাইদ । তার পরিবারের কারও কাছে বাইক নেই। সে নিজেও এখনো ভালোভাবে বাইক চালাতে পারত না। স্থানীয় গ্যারেজে বয়স বিবেচনা না করে যারা ভালোভাবে চালাতে জানে না তাদেরও টাকার বিনিময়ে বাইক ভাড়া দেওয়া হয় জেনে এ সুযোগে গত ২০ জুন ছয় বন্ধু দুইটি বাইকে সাগরপাড়ে বেড়াতে যাচ্ছিল । পথিমধ্যে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের জিরো পয়েন্টে লরির চাকার নিচে পড়ে জুনাইদ (১৭) এর মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ।

এর আগে চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা জাহান জেবা শনিবার দুপুরে বাবা ফারুকের পেছনে মোটরসাইকেলে চড়ে যাচ্ছিল কলেজে। নগরীর সীতাকুণ্ড ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় আসতেই হঠাৎ কাদা মাটিতে পিছলে যায় মোটরসাইকেল। সামনের দিকে বাবা আর পেছনে ছিটকে সড়কে পড়ে যায় ফাতেমা। আর মুহূর্তের মধ্যে দ্রুতগতির একটি লরি চাপা দিয়ে চলে যায় তাকে। ঘটনাস্থলেই বাবার চোখের সামনেই ছটফট করতে করতে মৃত্যু হয় মেয়েটির। কলিজার টুকরো মেয়েকে হারিয়ে রাস্তার ওপরই বিধ্বস্ত আর দিশেহারা হয়ে পড়েন বাবা মোহাম্মদ ফারুক। চোখের সামনে মেয়ের ছটফট করতে করতে মৃত্যু দেখে উদভ্রান্তের মতো আচরণ করতে থাকেন ফারুক।

শুধু জুনাইদ বা ফাতেমা নয়, গত এক বছরে এ সড়কে ঘটেছে এমন ডজনখানেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ সংখ্যা ৩০-এর কম নয় মোটেই ।

রাস্থায় যেমন কোনো সড়ক বাতি জ্বলে না। তেমনি নেই কোন ট্রাফিক ব্যবস্থা। তাছাড়া এ সড়কে জ্বলেনা সড়কবাতি আর তাই রাতের বেলায় ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। প্রায় সময় অপরাধ সংঘটিত হয়। যাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নিতে ছিনতাইকারী, কিশোর গ্যাং চক্র ওত পেতে থাকে।

এদিকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দুটি লেন ২৭ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ধসের শঙ্কায় গত ৩০ মে থেকে সড়কটির চার লেনের মধ্যে বায়েজিদমুখী দুই লেন বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরপর থেকে দুই পাশের যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে একপাশ দিয়ে চলাচল করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামমুখী দুই জেলা ও চট্টগ্রাম শহরের কিছু জায়গার উদ্দেশে প্রচুর পরিমাণে ট্রাক ও বাস এই পথে চলাচল করে। এ ছাড়া দ্রুত গতিতে চালানো বাইকারদের কাছে এই পথটি খুবই পছন্দের! কিন্তু এই সড়কে কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুই লেন বন্ধের পর থেকে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। তাছাড়া বৃষ্টি একেবারে বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত দুই লেন খোলার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সিডিএ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, এ সড়কের পাশেই জঙ্গল সলিমপুর (ছিন্নমূল) এলাকার শত শত সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, শেরশাহ, বাংলাবাজার, আরেফিন নগর, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ বাইপাস সড়কটি বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে এসব যান এখন উল্টো পথে চলাচল করছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঈদের আগে ও পরে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা আলোচনায় আসেনি। অনেকে মুখোমুখি সংঘর্ষে মারাত্মক আহত হয়েছেন। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের সঙ্গে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ অনেক দিন ধরে রাস্তাটির একপাশ বন্ধ। মাঝে বৃষ্টি হয়নি। এরপরও বন্ধ ছিল। কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে লম্বা সময় বন্ধ রাখা অনিরাপদ। বরাবরের মতো গাফিলতি করছে সিডিএ।

এইসব প্রসঙ্গে কথা হয় ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদ রানার সঙ্গে । তিনি বলেন, গত বছর সড়কটির একটি অংশ বন্ধ করে দেয় সিডিএ। এরপর এক লাইনে দ্বিমুখী গাড়ি চলতে গিয়ে ঘটে গেছে বেশ কিছু দুর্ঘটনা। যদিও ফাঁড়ি পর্যন্ত আসেনি এসব দুর্ঘটনায় অভিযোগ। আর তাই মামলা না হওয়ায় নথিভুক্ত হয়নি দুর্ঘটনাগুলো।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন শেরশাহ বাংলাবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পর্যন্ত নির্মিত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক নির্মাণের সময় পাহাড় কাটায় মানা হয়নি কোনো নিয়মনীতি। একের পর এক পাহাড় কাটা হয়েছে খাড়াভাবে। ফলে বৃষ্টি হলেই খাড়া পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ছে সড়কের ওপর। গত বছর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন ক্যাম্পাসের পেছনে চারটি পাহাড় ধসে পড়ে সড়কের ওপর। দীর্ঘদিনেও ধসে পড়া সেই মাটি সড়কের পাশ থেকে সরায়নি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ফলে ওই চার স্থানসহ আরও নতুন পাঁচটি স্থানে বৃষ্টি হলেই সড়কে মাটি এসে জমা হয় পাহাড়ি পানির স্রোতের সঙ্গে। এতে ঝুঁকিও বাড়তে থাকে ।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে  জানা যায়,  ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়ক নির্মাণ করেছে সিডিএ। সড়কটি ব্যবহার করে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলার গাড়িগুলো সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে যায় মূল শহরে প্রবেশ না করেই। এখনও পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও দুই বছর আগে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সড়কটি। তবে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর পরই পাহাড়ধসের কারণে গত বছরের বর্ষায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ফৌজদারহাটমুখী লেন। পরে শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে আবারও খুলে দেওয়া হয় ।

এর আগে এই ৬ কিলোমিটার ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক মোড় নির্মাণে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়। একেবারে নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন নিয়ে ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটে সিডিএ। পরে পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি এবং ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করার দায়ে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করে পরিবেশ অধিদফতর। একইভাবে আরেক শুনানিতে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদফতর। যদিও মামলা দুটি আপিল শুনানিতে নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে আগে কাটা ১৬টি পাহাড় ২২.৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কাটার প্রস্তাবনা দিলেও পরিবেশ অধিদফতর না করে দেয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, সড়ক প্রকল্পের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তা ছাড়া কিছু অংশে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ বাকি আছে। এ ছাড়া পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সড়কটির ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ১১ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
এই সড়কে কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষের পর ট্রাফিক সঙ্কেত দেওয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া  বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত সড়কের একপাশ বন্ধ রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;
আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন