মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের নথি অনুযায়ী ৬ষ্ট শ্রেনীর শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার (১৩ )। ভর্তীর ধাবাবাহিকতা অনুযায়ী ৬ষ্ট শ্রেণীতে তার ক্রমিক নং-৭৬। বিদ্যালয়ের কাগজে কলমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি সে। কিন্তু বাস্তবে তা নয় । সে দিব্যি চোখে দেখতে পায়। সানজিদা দৃষ্টি প্রতিবন্ধি নয় ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, (পিবিজিএসআই) স্কিমের আওতায় সরকারী অনুদানের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সানজিদাকে প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়া দেখিয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হিসেবে এবং টাকা উত্তোলনের জন্য নিয়েছেন অভিনব পন্থা। সানজিদাকে বিদ্যালয়ের পরিচয় পত্র সরবরাহের প্রয়োজনে একটি রেভিনিউ স্টাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন। সেই স্বাক্ষর জুড়ে দেন টাকা প্রাপ্তির রশিদে। সেই টাকা সানজিদা কে না দিয়ে নিজেই করেছেন আত্মসাৎ।
চট্টগ্রামের মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল সানজিদা আক্তার । পিতা মাতার উদ্দেশ্য মেয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে উপযুক্ত শিক্ষা অর্জন করবে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু সানজিদা জানেই না তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কলাকৌশুলিরা দূর্ণীতিগ্রস্থ।
তাদের পড়ালেখা বিদ্যা আর জ্ঞান বিতরনের আডালে অন্য রুপ। তাদের পন্য করে বেচা বিক্রিকরাই যেন তাদের মুল পেশা। স্কুল পড়ুয়ার সানজিদার দিন মজুর পিতা নুরুল ইসলাম ২০২২ সালে লিভার ক্যান্সারে মারা যান। দরিদ্র পিতা নুরুল ইসলাম শত বাধা বিপত্তিতেও হার মানেনি তাঁর মা । চরম দারিদ্রতাকে উপক্ষো করে ৩ সন্তানের পড়ালেখার খরচ বহন করেছেন । তার মৃত্যুতে ৪ সদস্যর পরিবারের হাত ধরেন সানজিদার মা রাশেদা আক্তার (৪০)। সড়ক শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। মাসিক যে আয় হয় তা দিয়ে কোন প্রকারে পরিবারের সদস্যদের খাবারের যোগাড় করতে পারলেও পড়ালেখার খরচ বহন করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। তার মধ্যেই আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় বড় মেয়ে মর্জিনা আক্তারকে এস এসসি শেষে বিয়ে দিয়েদেন মা রাশেদা। ছেলে মেহেদি হাসান এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে এখন একটি পেট্রোল পাম্পে সামান্য বেতনে চাকরী করেন। মা রাশেদা আক্তার সড়ক শ্রমিকের কাজ করে যে আয় করেন তা দিয়ে ঘরভাড়া পরিবার পরিচালনা করতেই হিমশিম খান। তাই সানজিদার পড়ালেখার খরচ পরিচালনা করতে তিনি আর পারছেন না। মা রাশেদা বলেন মিরসরাই বালিকা বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি করান সানজিদাকে। সে প্রাইমারিতে থাকা কালিন উপবৃত্তির টাকা পেত।
কিন্তু হাইস্কুলে উঠার পর থেকে আর উপবৃত্তির টাকা পায় না। তাই প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়া বরাবরে বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য একটি লিখিত আবেদন ও করেছেন। কিন্তু সেই আবেদনে কোন কাজ হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রতি মাসের বেতন যথা সময়ে পরিশোধ করতে না পারলে বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে অপমান করতেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয় থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সহযোগীতার সুযোগ থাকলেও কোন সহযোগীতাই করেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পক্ষান্তরে বিদ্যালয়ের ঝাড়ু ক্রয়, বৈদ্যুতিক পাখা মেরামত থেকে শুরু করে নামে বেনামে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অযুহাতে টাকা আদায় করেছে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সানজিদার পরিবার থেকে। বিদ্যলয়ের অনৈতিক বাড়তি টাকার চাহিদা যোগান দিতে অক্ষম হয়ে সানজিদার পরিবার তাকে কম খরচের অন্যত্র একটি বিদ্যালয়ে স্থানন্তর করেন। কিন্ত সেখানেও আশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেনি। স্থানীয় এক আওয়ামী জনপ্রতিনিধি বিনা বেতনে অধ্যায়নের সুযোগ করে দিবে বলে স্থানীয় এমপি পরিবারের চ্যারিটেবল ফান্ড পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করেলেও আর্থিত সহায়তা বা কোন প্রকার ছাড় দেয়নি।
ফলে বর্তমান দারদ্রতার মধ্যে সানজিদার মা রাশেদা আক্তার ছোট কন্যার শিক্ষার ব্যয় পরিশোধে অক্ষম হয়ে তার বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন নিরুপায় হয়ে ছোট মেয়ে সানজিদার পড়ালেখা বন্ধ করেদিতে বাধ্য হয়েছি। তবে মেয়েটি পড়ালেখায় ভালো সে বিদ্যালয়ে যেতে চায় পড়তে চায়। এখন কেউ যদি সহায়তা করে তাহলে আমারা তার পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে পারি। তিনি মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সামাজের অবস্থাসম্পন্ন দানবির ব্যাক্তিদেরে সহযোগীতা কামনা করেছেন।
শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, তার চোখে কোন সমস্যা নেই। তার দৃষ্টি শক্তি খুবই ভালো। কিন্তু প্রধান শিক্ষক টাকা মেরে দেয়ার জন্য তাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বিদ্যালয়ের পরিচয় পত্র বিতরনে কথা বলে রেভিনিউ স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা আদায়ের রশিদে লাগিয়েছেন। সানজিদা বলেন টাকাটা যদি তার পড়ালেখার খরচের জন্য বিদ্যালয় থেকে দেয়া হতো তাহলে তার পড়ালেখার খরচের অভাবে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হতো না। সানজিদা বলেন তিনি আবার বিদ্যালয়ে যেতে যান। আবার পড়ালেখা শুরু করতে চায়। এজন্য কেউ এগিয়ে আসলে তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;