গত চার দিনের টানা বর্ষণে সীতাকুণ্ডে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৃত্যুঝুঁকি বাড়লেও পাহাড় চূড়ায় বসবাসকারী কিছু পরিবারকে অনেকটা জোর করে পাহাড় থেকে নামিয়েও আনা হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকি সত্বেও তারা আবার ফিরে যাচ্ছে পাহাড়ে। তাছাড়া গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন সড়ক, বসতঘর ও ফসলি জমি। এখনো পানির নীচে আট ইউনিয়ন। এসব গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির বড় অংশই এখন পানির নিচে। এসব জায়গায় ঘরে পানি উঠার কারণে চুলা জ্বালাতে পারছেন না। করতে পারছেন না নিত্ত দিনের কাজ । উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ধান, শাকসবজিসহ এ মৌসুমের প্রায় সব ধরনের ফসলের মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত সর্বত্র জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পৌরসদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সবদিকে পানি আর পানি। অসংখ্য বাড়ি ঘরসহ পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর সবজি ক্ষেত। বন্ধ হয়ে গেছে বহু বাড়ি ঘরের রান্না-বান্না।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার প্রায় সর্বত্রই বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নানামুখী দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার জঙ্গল ভাটিয়ারী এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে অবস্থান করা ৫০টি পরিবার। প্রবল পাহাড়ি ঢলের পানি তাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় তাদের রান্না বন্ধ হওয়াসহ সেখানে থাকাও কঠিন হয়ে গেছে। এর মধ্যে বারৈয়ারঢালা, সৈয়দপুর ও মুরাদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হেক্টর সবজিখেত পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া কুমিরা ও সোনাইছড়ির যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ, সেখানে প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে অনেক জমিতেই ফসলের আর তেমন কোনো চিহ্ন নেই। চারদিকে শুধুই থইথই পানি। মনে হচ্ছে যেন বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ছোট ছোট নদীতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের উত্তর মছজিদ্দা গ্রামের ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া এলাকায় পানি আর পানি। এই এলাকায় অনন্ত শ খানেক বসতঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক পরিবারেই রান্না হয়নি। ডুবে যাওয়া সড়কে অনেককে জাল ফেলে মাছ ধরতেও দেখা গেছে।
সীতাকুণ্ড আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সীতাকুণ্ডে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে অতি ভারী বর্ষণ বলা হয়। আর সেই প্রভাব পড়েছে সীতাকুণ্ডে ।
বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, তাঁর ব্লকে সব কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষিজমিতে এখন ধুন্দল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, করলা ও লাউ চাষ রয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ না হলে জলাবদ্ধতায় এসব ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবীব উল্লাহ বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় উপজেলার প্রচুর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। দুয়েকদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষতির আশংকা কম। আর পানি না কমলে অবশ্যই কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম জানান, অতি ভারী বৃষ্টির কারণে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে ।বৃষ্টিতে পুরো উপজেলায় জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, কুমিরা ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দুটি এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় সেখানে ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের মাধ্যমে পুরো এলাকার খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা বেশি উদ্বিগ্ন জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো নিয়ে। তারাসহ প্রত্যেক ইউনিয়নের পাহাড়িদের সমতলে নেমে আসতে বলেছি এবং জঙ্গল সলিমপুর পাহাড় থেকে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে সমতলে স্কুলে এনে আশ্রয় দেয়া হলেও তারা গোপনে গোপনে আবারো পাহাড়ে ফিরে গেছে। তবুও আমরা আবারো ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যদিও সেভাবে সাড়া পাচ্ছি না।
খালেদ/ পোস্টকার্ড ;