Dhaka ০৫:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
উপজেলা জুড়ে বসবে ১৫টি পশুর হাট

সীতাকুণ্ডে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৬০ হাজার পশু, চাহিদা ৪৭ হাজার

আর ক’দিন পর ঈদ উল আযহা । প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদ উল আযহা পালনে চলছে নানা রকমের প্রস্তুতি। মুসলমানরা আল্লাহর নামে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন এই ঈদে। অন্যদিকে এখনো পশু পালনে, পশু বিক্রয়ে , গরু-ছাগল মোটা তাজা করনে খামারীদের চোখে ঘুম নেই । এবারের  কোরবানির জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার পশু।

উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, দেশি ঘরোয়া পদ্ধতিতে এবং খামার পর্যায়ে পালিত এসব গবাদিপশুই এবারের কোরবানির চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হবে। চাহিদার তুলনায় পশুর মজুত বেশি থাকায় উপজেলায় পশুর সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়াসহ কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার । আর উৎপাদন হয়েছে প্রায় সীতাকুণ্ডে ৫৬ । যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৯ হাজার বেশী । গত বছর এই চাহিদা ছিল ৪৪ হাজার ৫২৬টি এবং উৎপাদন হয়েছিল ৫৩ হাজার ৮০৪ টি। তবে এটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য । কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সীতাকুণ্ডের প্রতি পাড়ায় পাড়ায় প্রতি বছরের মতো এবারো বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে পশু আনতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা । সে হিসেবে ৬০হাজার ছড়িয়ে যাবে বিক্রিযোগ্য পশু  ।

বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলায় কোরবানির পশুর হাট বসতে শুরু করেছে। ছোট-বড় খামারী ও কৃষকের ঘরে পালিত পশু বিক্রয় ক্রেতাদের জন্য উপজেলা প্রশাসন ১৫টি পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩টি স্থায়ী, ১১টি অস্থায়ী এবং পৌরসভার একটি হাট। হাটগুলো হলো—সৈয়দপুর ইউনিয়নে শেখের হাট, তোহর আলি ভূঁইয়ার হাট, মিয়াজান হাট ভূঁইয়ার হাট, মীরের হাট বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নে ছোট দারগারহাট, বাড়বকুন্ড ইউনিয়নে পরিষদ মাঠ, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে পরিষদ মাঠ, সোনাইছড়ি ইউনিয়নে মদন হাট, ভাটিয়ারী ইউনিয়নে ভাটিয়ারী উত্তর বাজার, মাদামবিবির হাট, সলিমপুর ইউনিয়নে সলিমপুর সিডিএ এলাকা। এছাড়া পৌরসভার অস্থায়ী হাট রেলওয়ে ডেবার পাড় মন্তরহাট, স্থায়ী গরু বাজার ফকিরহাট, জেলা প্রশাসক অনুমোদিত বাড়বকুন্ড স্কুল মাঠ ও বড়দারগারহাটে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় অব্যাহত থাকবে।

সীতাকুণ্ডের নিজ বাড়ির পাশে খামারে গরু লালনপালন করেন হালাল অ্যাগ্রোর মালিক আমিন শরীফ রুবেল। তিনি বলেন, পশু লালন-পালনে এবার খরচ বেশি হয়েছে। বাজারে ভালো দাম না পেলে আমাকে লোকসান গুনতে হবে।

কুমিরা ইউনিয়নের খামারী আব্দদুল হামিদ বলেন, আমার খামার থেকে ১০০টি ষাঁড় বিক্রি করবো। আমার খামার মূলত দুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। লালনপালন করা গরু-বাছুর থেকে ষাঁড়গুলো মোটাতাজা করে প্রতিবছর বিক্রি করি।

সৈয়দপুর ইউনিয়নের খামারী হাছান মাসুম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পশু মোটাতাজা করতে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে। কোরবানির পশুর দাম একটু বাড়তে পারে।

চট্টগ্রাম ডিভিশনাল ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, কোরবানির জন্য এবারও খামারে যথেষ্ট পরিমাণ গরু-মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে। পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না। চোরাই পথে দেশে পশু আসাও বন্ধ করতে হবে। এতে খামারিরা লাভবান হবেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মাওলানা তাওহীদুল হক চৌধুরী জানান, পশুর স্বাস্থ্য, ওজন ও দামের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি প্রতারণা ঠেকাতে কাজ করছে তারা। কোরবানির দিন স্বাস্থ্যবিধি ও নৈতিকতা নিশ্চিতে মাঠে থাকবেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু জানান, প্রতিটি হাটে মেডিকেল টিমসহ তদারকির জন্য চারটি ভাগে টিম গঠন করা হয়েছে। গরুর যে কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যায় তারা প্রয়োজনীয় সেবা দেবেন। চাহিদার তুলনায় এবার পশু বেশি থাকায় সংকটের আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, পশুর হাটে প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিনসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাটে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি ।

খালেদ/ পোস্টকার্ড ; 

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
ট্যাগ:
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

তকিকে সভাপতি এবং রুবেলকে সা. সম্পাদক করে চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা

উপজেলা জুড়ে বসবে ১৫টি পশুর হাট

সীতাকুণ্ডে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৬০ হাজার পশু, চাহিদা ৪৭ হাজার

আপডেটের সময় : ০৭:০৯:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

আর ক’দিন পর ঈদ উল আযহা । প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদ উল আযহা পালনে চলছে নানা রকমের প্রস্তুতি। মুসলমানরা আল্লাহর নামে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন এই ঈদে। অন্যদিকে এখনো পশু পালনে, পশু বিক্রয়ে , গরু-ছাগল মোটা তাজা করনে খামারীদের চোখে ঘুম নেই । এবারের  কোরবানির জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার পশু।

উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, দেশি ঘরোয়া পদ্ধতিতে এবং খামার পর্যায়ে পালিত এসব গবাদিপশুই এবারের কোরবানির চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হবে। চাহিদার তুলনায় পশুর মজুত বেশি থাকায় উপজেলায় পশুর সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়াসহ কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার । আর উৎপাদন হয়েছে প্রায় সীতাকুণ্ডে ৫৬ । যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৯ হাজার বেশী । গত বছর এই চাহিদা ছিল ৪৪ হাজার ৫২৬টি এবং উৎপাদন হয়েছিল ৫৩ হাজার ৮০৪ টি। তবে এটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য । কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সীতাকুণ্ডের প্রতি পাড়ায় পাড়ায় প্রতি বছরের মতো এবারো বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে পশু আনতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা । সে হিসেবে ৬০হাজার ছড়িয়ে যাবে বিক্রিযোগ্য পশু  ।

বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলায় কোরবানির পশুর হাট বসতে শুরু করেছে। ছোট-বড় খামারী ও কৃষকের ঘরে পালিত পশু বিক্রয় ক্রেতাদের জন্য উপজেলা প্রশাসন ১৫টি পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩টি স্থায়ী, ১১টি অস্থায়ী এবং পৌরসভার একটি হাট। হাটগুলো হলো—সৈয়দপুর ইউনিয়নে শেখের হাট, তোহর আলি ভূঁইয়ার হাট, মিয়াজান হাট ভূঁইয়ার হাট, মীরের হাট বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নে ছোট দারগারহাট, বাড়বকুন্ড ইউনিয়নে পরিষদ মাঠ, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে পরিষদ মাঠ, সোনাইছড়ি ইউনিয়নে মদন হাট, ভাটিয়ারী ইউনিয়নে ভাটিয়ারী উত্তর বাজার, মাদামবিবির হাট, সলিমপুর ইউনিয়নে সলিমপুর সিডিএ এলাকা। এছাড়া পৌরসভার অস্থায়ী হাট রেলওয়ে ডেবার পাড় মন্তরহাট, স্থায়ী গরু বাজার ফকিরহাট, জেলা প্রশাসক অনুমোদিত বাড়বকুন্ড স্কুল মাঠ ও বড়দারগারহাটে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় অব্যাহত থাকবে।

সীতাকুণ্ডের নিজ বাড়ির পাশে খামারে গরু লালনপালন করেন হালাল অ্যাগ্রোর মালিক আমিন শরীফ রুবেল। তিনি বলেন, পশু লালন-পালনে এবার খরচ বেশি হয়েছে। বাজারে ভালো দাম না পেলে আমাকে লোকসান গুনতে হবে।

কুমিরা ইউনিয়নের খামারী আব্দদুল হামিদ বলেন, আমার খামার থেকে ১০০টি ষাঁড় বিক্রি করবো। আমার খামার মূলত দুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। লালনপালন করা গরু-বাছুর থেকে ষাঁড়গুলো মোটাতাজা করে প্রতিবছর বিক্রি করি।

সৈয়দপুর ইউনিয়নের খামারী হাছান মাসুম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পশু মোটাতাজা করতে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে। কোরবানির পশুর দাম একটু বাড়তে পারে।

চট্টগ্রাম ডিভিশনাল ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, কোরবানির জন্য এবারও খামারে যথেষ্ট পরিমাণ গরু-মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে। পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না। চোরাই পথে দেশে পশু আসাও বন্ধ করতে হবে। এতে খামারিরা লাভবান হবেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মাওলানা তাওহীদুল হক চৌধুরী জানান, পশুর স্বাস্থ্য, ওজন ও দামের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি প্রতারণা ঠেকাতে কাজ করছে তারা। কোরবানির দিন স্বাস্থ্যবিধি ও নৈতিকতা নিশ্চিতে মাঠে থাকবেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু জানান, প্রতিটি হাটে মেডিকেল টিমসহ তদারকির জন্য চারটি ভাগে টিম গঠন করা হয়েছে। গরুর যে কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যায় তারা প্রয়োজনীয় সেবা দেবেন। চাহিদার তুলনায় এবার পশু বেশি থাকায় সংকটের আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, পশুর হাটে প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিনসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাটে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি ।

খালেদ/ পোস্টকার্ড ; 

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন