Dhaka ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীতাকুণ্ডে ৯ স্লুইস গেট অকেজো, অজানা আতঙ্কে এলাকাবাসী !

সীতাকুণ্ডে ১৬টি স্লুইস গেটের মধ্যে ৯ টিই অকেজো!

সীতাকুণ্ডে ১৬টি স্লুইস গেটের মধ্যে ৯টি অকার্যকর হয়ে আছে। স্থাপনের পর হতে রক্ষণা-বেক্ষণের উদ্যোগ না নেয়ায় স্লুইস গেটগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভিন্ন কথা । তাদের মতে সীতাকুণ্ড উপজেলার বাপাউবো’র উপকূলীয় বাঁধের পোল্ডার নম্বর–৬১/১ এ অবস্থিত স্লুইস গেটসমূহ ষাটের দশকে নির্মিত হয়েছিল। যে কারণে এগুলো কার্যকারিতা বা গেট ভেঙে পড়তেই পারে। তবে এলাকার অধিকাংশ কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড আশির দশকের শেষ দিকে চাষাবাদের প্রয়োজনে এসব স্লুইসগেট স্থাপন করেছিল। ওই সময় এলাকার খালগুলো প্রতিবছর খনন করা হতো। নব্বই দশকের শেষের সময় পর্যন্ত এসব স্লুইসগেট রক্ষণাবেক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তীকালে নিয়োজিত জনবল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর থেকে স্লুইসগেটগুলো অভিভাবকহীন ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ।

উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনের ছোট-বড় ১৬টি খালের মুখে স্লুইস গেট স্থাপিত হয়েছে। উপরিভাগ থেকে বয়ে আসা ছরার পানি ও পাহাড়ি ঢল খাল হয়ে স্লুইস গেটের মধ্য দিয়ে সমূদ্র গর্ভে প্রবাহিত হয়। সমতল ও সমুদ্রের পানির স্থিতিশীলতা স্লুইস গেট সমূহ বজায় রাখে। অথচ জনগুরুত্বপূর্ন স্লুইস রক্ষণাবেক্ষণে না থাকায় গেটের লোহার পাত গুলোতে মরিচা ধরে অচল হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে অকেজো স্লুইস গেট ভেঙে মাটিতে বসে যাওয়ায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে আবাদী জমির চাষ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে কৃষি জমি অনাবাদী পড়ে থাকায় বেকারত্বে কবলে পড়েছে চাষী ও দিন মজুররা। এছাড়া দুর্যোগ দেখা দিলে জলোচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা।

তারা বলেন, ‘বর্ষা শুরু হলে আতংকে দিন কাটে। ভাঙা স্লুইস গেট দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি একত্রিত হয়ে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকে কৃষি জমি । পুরো বর্ষায় খালে বিলের পানি এককার হয়ে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। আবাদী জমি অনাবাদী হয়ে পড়ায় এলাকাজুড়ে খাদ্য অভাব দেখা দেয়। কাজকর্মের অভাবে দৈনন্দিন আয় বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়।

মুরাদপুর ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, গত বছর জলাবদ্ধতায় আমার বীজতলায় থাকা সকল চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে জমিতে চাষাবাদের জন্য বাধ্য হয়ে চড়া দামে বীজ কিনে দ্বিতীয়বারের মতো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্ষা আসার আগেই যদি স্লুইসগেটটি সংস্কার করা না হয় তাহলে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া গত বছর আমন খেত তলিয়ে থাকায় পচন ধরে অনেক খেতের ধানগাছে পচন ধরেছিল। ফলে এ বছর প্রয়োজনীয় আগাম উদ্যোগ না নিলে অনেক কৃষকের পরিবার না খেয়ে থাকবে।

মুরাদপুর, বাড়বকুন্ড, সৈয়দপুর, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়ন এর ১৬ টি সুইস গেটের ৯টি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বাঁশবাড়িয়া শিকদার খাল ও গুলিয়াখালী খালের স্লুইস গেট সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ায় জোয়ারের সাথে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। প্রতি বছর জোড়াতালির বৃথা চেষ্টায় নষ্ট করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার অর্থ। রক্ষনা-বেক্ষনের নামে অর্থ ব্যয় করে মাটির নিচে আটকা পড়ে আছে গেটের প্লেট।

বিশেষ করে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বশরতনগর গ্রামে ছোটকুমিরা খালের উপর নির্মিত স্লুইস গেটটি গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় এলাকার মানুষের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে শুধুমাত্র কৃষিপ্রধান সৈয়দপুর ইউনিয়ন নয় পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বারৈয়ারঢালা, মুরাদপুর ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার বেশিরভাগ গ্রাম ডুবে যায়। শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে পানি ধরে রেখে কৃষিতে সেচের জন্য ২০০৩ সালে স্লুইসগেটটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। স্লুইসগেটটি দিয়ে আটকানো পানি কয়েকবছর সেচের কাজেও ব্যবহার করেছিল কৃষকেরা।

স্থানীয়দের দাবি, ১০০ ফুটের খাল দখল হতে হতে সেটি এখন কোথাও এখন ২০ ফুটের নিচে নেমে গেছে। এছাড়া বর্ষায় পলি জমে সেটি গভীরতা একেবারে কমে গেছে। ফলে খালটি দখলমুক্ত, খননকাজ করা ও রাবার ড্যামটি অপসারণ করে সেখানে সেতু নির্মাণ করতে জরুরী। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য, খালটি খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাশ হলে জুনের মধ্যে খালটি খনন করা হবে।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, খাল খনন কাজ শুরু হলে সিট অনুযায়ী দখলমুক্ত করে খালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইস গেইটটির সামনে খালের পানিতে ভাসমান ময়লার স্তুপ। যা পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। রাবার ড্যামটির তিনটি দরজার একটিরও কপাট নেই। কপাট আটকানোর রড ছাড়া অন্যান্য যন্ত্রাংশ নেই। খালের পানি আটকে রাবার ড্যামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে সেখানে চারটি সিমেন্টের পাইপ বসানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান , রাতের আধারে স্লুইসগেইটটির কপাটসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে চোরের দল। ফলে শীতে সেখানে পানি জমে থাকে না। বর্ষায় পৌরসভার ময়লা এসে রাবার স্লুইসগেইটটির দরজায় জড়ো হয়ে পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে পানি জমে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। তারা আরও বলেন, খালটির দুই তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়ে সেখানে গাছ লাগিয়েছে স্থানীয়দের অনেকে। ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত সাগরে যেতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।এদিকে, ৬৫ বছর পর সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বদরখালে স্লুইস গেটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ স্লুইস গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। যদিও আগামী জুন মাসের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কিন্তু ধীর গতিতে কাজ চলায় বর্ষার আগে কাজ শেষ করার সম্ভব হবে না। ফলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা আরও চরম রূপ নিবে। যদিও ৭০% শেষ হয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি স্লুইস গেটের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে যান সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, সৈয়দপুর ইউনিয়নের বদরখালের স্লুইস গেট অকেজো হয়ে পড়ার কারণে কৃষকদের জমিতে সাগরের লোনা পানি প্রবেশ করে অনেক ক্ষতির শিকার হন। তবে এখন এ স্লুইস গেট নির্মাণ হওয়ার পর কৃষকরা জমিতে নানান রকম ফসল উৎপাদন করে অনেক লাভবান হবেন।

অন্যদিকে উপ-বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ডা. তানজির শরীফ আহমেদ বলেন,’ ভেঙে পড়া স্লুইস গেট পুনঃনির্মাণের চেষ্টা চলছে। চলতি বরাদ্ধে বদরখালী খালের স্লুইস গেইট পূর্ণ নির্মাণ কাজ হচ্ছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া গেলে অন্যান্য গেটের কাজ শুরু করা হবে । তবে প্রজেক্টের অধীনে কুমিরা থেকে মিরসরাই পর্যন্ত একসাথে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদি তা না হলে একটা একটা করে শেষ করার চিন্তা রয়েছে বলে জানান ।

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার বলেন, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার বাপাউবো’র উপকূলীয় বাঁধের পোল্ডার নম্বর–৬১/১ এ অবস্থিত স্লুইস গেটসমূহ ষাটের দশকে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ৬টি স্লুইস অকেজো হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে বদরখালের স্লুইসটি চলতি অর্থবছরে জুনের শেষ দিকে নির্মাণকাজ শেষ হবে আশা করা যাচ্ছে। আর বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের শিকদার খালের উপর অবস্থিত স্লুইসটির কাজ বাস্তবায়নের নিমিত্ত ডিজাইন প্রণয়ন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে। বরাদ্দ ও অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে বাকি স্লুইসসমূহ পর্যায়ক্রমে পুনঃনির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

মিরসরাইয়ে অর্থাভাবে সানজিদার লেখাপড়া বন্ধ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ!

সীতাকুণ্ডে ৯ স্লুইস গেট অকেজো, অজানা আতঙ্কে এলাকাবাসী !

আপডেটের সময় : ০৮:৩৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

সীতাকুণ্ডে ১৬টি স্লুইস গেটের মধ্যে ৯টি অকার্যকর হয়ে আছে। স্থাপনের পর হতে রক্ষণা-বেক্ষণের উদ্যোগ না নেয়ায় স্লুইস গেটগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভিন্ন কথা । তাদের মতে সীতাকুণ্ড উপজেলার বাপাউবো’র উপকূলীয় বাঁধের পোল্ডার নম্বর–৬১/১ এ অবস্থিত স্লুইস গেটসমূহ ষাটের দশকে নির্মিত হয়েছিল। যে কারণে এগুলো কার্যকারিতা বা গেট ভেঙে পড়তেই পারে। তবে এলাকার অধিকাংশ কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড আশির দশকের শেষ দিকে চাষাবাদের প্রয়োজনে এসব স্লুইসগেট স্থাপন করেছিল। ওই সময় এলাকার খালগুলো প্রতিবছর খনন করা হতো। নব্বই দশকের শেষের সময় পর্যন্ত এসব স্লুইসগেট রক্ষণাবেক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তীকালে নিয়োজিত জনবল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর থেকে স্লুইসগেটগুলো অভিভাবকহীন ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ।

উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনের ছোট-বড় ১৬টি খালের মুখে স্লুইস গেট স্থাপিত হয়েছে। উপরিভাগ থেকে বয়ে আসা ছরার পানি ও পাহাড়ি ঢল খাল হয়ে স্লুইস গেটের মধ্য দিয়ে সমূদ্র গর্ভে প্রবাহিত হয়। সমতল ও সমুদ্রের পানির স্থিতিশীলতা স্লুইস গেট সমূহ বজায় রাখে। অথচ জনগুরুত্বপূর্ন স্লুইস রক্ষণাবেক্ষণে না থাকায় গেটের লোহার পাত গুলোতে মরিচা ধরে অচল হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে অকেজো স্লুইস গেট ভেঙে মাটিতে বসে যাওয়ায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে আবাদী জমির চাষ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে কৃষি জমি অনাবাদী পড়ে থাকায় বেকারত্বে কবলে পড়েছে চাষী ও দিন মজুররা। এছাড়া দুর্যোগ দেখা দিলে জলোচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা।

তারা বলেন, ‘বর্ষা শুরু হলে আতংকে দিন কাটে। ভাঙা স্লুইস গেট দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি একত্রিত হয়ে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকে কৃষি জমি । পুরো বর্ষায় খালে বিলের পানি এককার হয়ে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। আবাদী জমি অনাবাদী হয়ে পড়ায় এলাকাজুড়ে খাদ্য অভাব দেখা দেয়। কাজকর্মের অভাবে দৈনন্দিন আয় বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়।

মুরাদপুর ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, গত বছর জলাবদ্ধতায় আমার বীজতলায় থাকা সকল চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে জমিতে চাষাবাদের জন্য বাধ্য হয়ে চড়া দামে বীজ কিনে দ্বিতীয়বারের মতো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্ষা আসার আগেই যদি স্লুইসগেটটি সংস্কার করা না হয় তাহলে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া গত বছর আমন খেত তলিয়ে থাকায় পচন ধরে অনেক খেতের ধানগাছে পচন ধরেছিল। ফলে এ বছর প্রয়োজনীয় আগাম উদ্যোগ না নিলে অনেক কৃষকের পরিবার না খেয়ে থাকবে।

মুরাদপুর, বাড়বকুন্ড, সৈয়দপুর, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়ন এর ১৬ টি সুইস গেটের ৯টি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বাঁশবাড়িয়া শিকদার খাল ও গুলিয়াখালী খালের স্লুইস গেট সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ায় জোয়ারের সাথে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। প্রতি বছর জোড়াতালির বৃথা চেষ্টায় নষ্ট করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার অর্থ। রক্ষনা-বেক্ষনের নামে অর্থ ব্যয় করে মাটির নিচে আটকা পড়ে আছে গেটের প্লেট।

বিশেষ করে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বশরতনগর গ্রামে ছোটকুমিরা খালের উপর নির্মিত স্লুইস গেটটি গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় এলাকার মানুষের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে শুধুমাত্র কৃষিপ্রধান সৈয়দপুর ইউনিয়ন নয় পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বারৈয়ারঢালা, মুরাদপুর ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার বেশিরভাগ গ্রাম ডুবে যায়। শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে পানি ধরে রেখে কৃষিতে সেচের জন্য ২০০৩ সালে স্লুইসগেটটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। স্লুইসগেটটি দিয়ে আটকানো পানি কয়েকবছর সেচের কাজেও ব্যবহার করেছিল কৃষকেরা।

স্থানীয়দের দাবি, ১০০ ফুটের খাল দখল হতে হতে সেটি এখন কোথাও এখন ২০ ফুটের নিচে নেমে গেছে। এছাড়া বর্ষায় পলি জমে সেটি গভীরতা একেবারে কমে গেছে। ফলে খালটি দখলমুক্ত, খননকাজ করা ও রাবার ড্যামটি অপসারণ করে সেখানে সেতু নির্মাণ করতে জরুরী। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য, খালটি খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাশ হলে জুনের মধ্যে খালটি খনন করা হবে।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, খাল খনন কাজ শুরু হলে সিট অনুযায়ী দখলমুক্ত করে খালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইস গেইটটির সামনে খালের পানিতে ভাসমান ময়লার স্তুপ। যা পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। রাবার ড্যামটির তিনটি দরজার একটিরও কপাট নেই। কপাট আটকানোর রড ছাড়া অন্যান্য যন্ত্রাংশ নেই। খালের পানি আটকে রাবার ড্যামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে সেখানে চারটি সিমেন্টের পাইপ বসানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান , রাতের আধারে স্লুইসগেইটটির কপাটসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে চোরের দল। ফলে শীতে সেখানে পানি জমে থাকে না। বর্ষায় পৌরসভার ময়লা এসে রাবার স্লুইসগেইটটির দরজায় জড়ো হয়ে পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে পানি জমে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। তারা আরও বলেন, খালটির দুই তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়ে সেখানে গাছ লাগিয়েছে স্থানীয়দের অনেকে। ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত সাগরে যেতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।এদিকে, ৬৫ বছর পর সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বদরখালে স্লুইস গেটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ স্লুইস গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। যদিও আগামী জুন মাসের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কিন্তু ধীর গতিতে কাজ চলায় বর্ষার আগে কাজ শেষ করার সম্ভব হবে না। ফলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা আরও চরম রূপ নিবে। যদিও ৭০% শেষ হয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি স্লুইস গেটের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে যান সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, সৈয়দপুর ইউনিয়নের বদরখালের স্লুইস গেট অকেজো হয়ে পড়ার কারণে কৃষকদের জমিতে সাগরের লোনা পানি প্রবেশ করে অনেক ক্ষতির শিকার হন। তবে এখন এ স্লুইস গেট নির্মাণ হওয়ার পর কৃষকরা জমিতে নানান রকম ফসল উৎপাদন করে অনেক লাভবান হবেন।

অন্যদিকে উপ-বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ডা. তানজির শরীফ আহমেদ বলেন,’ ভেঙে পড়া স্লুইস গেট পুনঃনির্মাণের চেষ্টা চলছে। চলতি বরাদ্ধে বদরখালী খালের স্লুইস গেইট পূর্ণ নির্মাণ কাজ হচ্ছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া গেলে অন্যান্য গেটের কাজ শুরু করা হবে । তবে প্রজেক্টের অধীনে কুমিরা থেকে মিরসরাই পর্যন্ত একসাথে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদি তা না হলে একটা একটা করে শেষ করার চিন্তা রয়েছে বলে জানান ।

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার বলেন, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার বাপাউবো’র উপকূলীয় বাঁধের পোল্ডার নম্বর–৬১/১ এ অবস্থিত স্লুইস গেটসমূহ ষাটের দশকে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ৬টি স্লুইস অকেজো হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে বদরখালের স্লুইসটি চলতি অর্থবছরে জুনের শেষ দিকে নির্মাণকাজ শেষ হবে আশা করা যাচ্ছে। আর বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের শিকদার খালের উপর অবস্থিত স্লুইসটির কাজ বাস্তবায়নের নিমিত্ত ডিজাইন প্রণয়ন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে। বরাদ্দ ও অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে বাকি স্লুইসসমূহ পর্যায়ক্রমে পুনঃনির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন