Dhaka ০২:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের কাটছে নির্ঘুম রাত

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের কাটছে নির্ঘুম রাত

কদিন পরই মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে টুং টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন সীতাকুণ্ডের কামার শিল্পীরা। চলছে হাপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামার তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম।পৌরসভা ও গ্রাম-গঞ্জে সব জায়গায় কামাররা নতুন তৈরির সঙ্গে পুরোনো দা-বঁটি, ছুরি ও চাপাতিতে সান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার মোটর চালিত মেশিনে শান দেওয়ার কাজও চলছে। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় তাদের কাজ বেড়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা। তাদের এ ব্যস্ততা চলবে ঈদুল আজহার দিন পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জামের। এ চাহিদা পূরণে ব্যস্ততা বেড়েছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের কামারের দোকানগুলোতে। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

সীতাকুণ্ড পৌরসভার মনোরঞ্জন দাস বলেন, সারা বছরের মধ্যে কোরবানি ঈদেই আমাদের বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম বেশি। তাই তৈরি করা সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়। আমরা বছরজুড়ে এ সময়ের অপেক্ষায় থাকি। সারা বছর আমাদের তেমন বিক্রি হয় না। তবে কোরবানি ঈদের এক মাস আমাদের বিক্রি বেড়ে যায়। তবে উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় লাভ আগের চেয়ে অনেক কম।

মনোরঞ্জন দাস আরও বলেন, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০-২০০ টাকা, দা ২৫০-৮০০ টাকা, বঁটি ৩০০-৫৫০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০-১৫০০ টাকা, চাপাতি ৬০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজি ওপরের নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়।

কামারপল্লির কারিগররা জানান, কয়লা ও লোহার দাম অনেক বেশি। তাই তৈরি করা সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়।কারিগররা অভিযোগ , তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারা দিন আগুনের পাশে বসে থেকে কাজ করতে হয়, এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়ের মানুষ। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে।

সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড বাজারে কথা হয় কামার অনিরুদ্ধ দাশের সাথে । তিনি বলেন, প্রতি বছর কোরবানি ঈদে আমরা বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করে থাকি। এবারও এসব উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। সারা বছর আমরা যে আয় করি কোরবানি ঈদের এক মাসে তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারি। কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কিন্তু এ কয়লা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে কয়লা সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সেই তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি ।

কুমিরা বাজারে বঁটি বানাতে আসা সাজ্জাদ বলেন, আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি। আগে যে বঁটি বানাতাম ২০০-৩০০ টাকা সেটি এখন বানাতে লাগছে ৪০০-৫০০ টাকা।

চাপাতি বানাতে আসা ফকিরহাট বাজারে আসা মহিউদ্দীন জানান, আর কিছুদিন পর কোরবানির ঈদ। তাই চাপাতি বানাতে কামারের দোকানে এসেছি। আগে যে চাপাতি কিনতাম ৪০০-৫০০ টাকায়, সেই চাপাতি এখন নিজের লোহা দিয়ে বানিয়ে নিলাম ৬৫০ টাকা করে। কেজি প্রতি লোহা নিচ্ছে ৭০০ টাকা।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের কাটছে নির্ঘুম রাত

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের কাটছে নির্ঘুম রাত

আপডেটের সময় : ০২:২৯:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

কদিন পরই মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে টুং টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন সীতাকুণ্ডের কামার শিল্পীরা। চলছে হাপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামার তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম।পৌরসভা ও গ্রাম-গঞ্জে সব জায়গায় কামাররা নতুন তৈরির সঙ্গে পুরোনো দা-বঁটি, ছুরি ও চাপাতিতে সান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার মোটর চালিত মেশিনে শান দেওয়ার কাজও চলছে। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় তাদের কাজ বেড়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা। তাদের এ ব্যস্ততা চলবে ঈদুল আজহার দিন পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জামের। এ চাহিদা পূরণে ব্যস্ততা বেড়েছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের কামারের দোকানগুলোতে। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

সীতাকুণ্ড পৌরসভার মনোরঞ্জন দাস বলেন, সারা বছরের মধ্যে কোরবানি ঈদেই আমাদের বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম বেশি। তাই তৈরি করা সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়। আমরা বছরজুড়ে এ সময়ের অপেক্ষায় থাকি। সারা বছর আমাদের তেমন বিক্রি হয় না। তবে কোরবানি ঈদের এক মাস আমাদের বিক্রি বেড়ে যায়। তবে উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় লাভ আগের চেয়ে অনেক কম।

মনোরঞ্জন দাস আরও বলেন, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০-২০০ টাকা, দা ২৫০-৮০০ টাকা, বঁটি ৩০০-৫৫০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০-১৫০০ টাকা, চাপাতি ৬০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজি ওপরের নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়।

কামারপল্লির কারিগররা জানান, কয়লা ও লোহার দাম অনেক বেশি। তাই তৈরি করা সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়।কারিগররা অভিযোগ , তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারা দিন আগুনের পাশে বসে থেকে কাজ করতে হয়, এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়ের মানুষ। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে।

সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড বাজারে কথা হয় কামার অনিরুদ্ধ দাশের সাথে । তিনি বলেন, প্রতি বছর কোরবানি ঈদে আমরা বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করে থাকি। এবারও এসব উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। সারা বছর আমরা যে আয় করি কোরবানি ঈদের এক মাসে তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারি। কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কিন্তু এ কয়লা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে কয়লা সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সেই তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি ।

কুমিরা বাজারে বঁটি বানাতে আসা সাজ্জাদ বলেন, আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি। আগে যে বঁটি বানাতাম ২০০-৩০০ টাকা সেটি এখন বানাতে লাগছে ৪০০-৫০০ টাকা।

চাপাতি বানাতে আসা ফকিরহাট বাজারে আসা মহিউদ্দীন জানান, আর কিছুদিন পর কোরবানির ঈদ। তাই চাপাতি বানাতে কামারের দোকানে এসেছি। আগে যে চাপাতি কিনতাম ৪০০-৫০০ টাকায়, সেই চাপাতি এখন নিজের লোহা দিয়ে বানিয়ে নিলাম ৬৫০ টাকা করে। কেজি প্রতি লোহা নিচ্ছে ৭০০ টাকা।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন