ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডে বাতি আছে ঠিকই, কিন্তু নেই আলো। সড়কবাতি স্থাপনের কয়েক মাসের মধ্যেই দেখতে অনেকটা খেলনা বাতির মতো হয়ে গেছে। দেখভালের অভাবে কাক্সিক্ষত সুফল মিলছিল না। লক্ষ লক্ষ টাকার সড়কবাতি পড়েছিল খাম্বার ওপরে। এতে বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ।
অবশেষে পোস্টকার্ডসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরে টনক নড়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড এখন সড়কবাতিতে আলোকিত হয়ে জ্বলছে রাতের বেলায়। স্বস্তি ফিরেছে সন্ধ্য রাতে চলাচলকারীদের মাঝে ।
সম্প্রতি ‘সড়কবাতি না থাকায় ছিনতাই-ডাকাতি’ শিরোনামে বায়েজিদ লিংক রোড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় পোস্টকার্ডসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়। এতে টনক নড়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তোড়জোড় করে শুরু হয় সড়ক বাতির কাজ। গত কয়েক দিনে সংশ্লিষ্ট মেরামতের কাজ শেষে পুরোদমে জ্বলছে সড়ক বাতি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা বায়েজিদ লিংক রোড, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করেছে নগরকে। সড়কটির কারণে যান্ত্রিক জীবনে যেমনটি সহজ করেছে তার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ যেন জনজীবনের জন্য একের ভিতর ডাবল স্বস্তি। যার কারণে প্রতিদিন পাহাড়ঘেরা ৬ কিলোমিটার সড়কটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা ও মনোরম দৃশ্য দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায়। কিন্তু দীর্ঘ আট মাস ধরে এই রোডে সড়ক বাতির গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম চুরি হয়ে যাওয়ায় জ্বলত না সড়কবাতি। যার কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকত রাতের বেলায় সড়কটি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসের দিকে এই সড়ক বাতিগুলোর মিটার, তার ও গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম চুরি হয়ে যায়। পুনরায় সেগুলো মেরামত করে ঠিক করা হয়। বর্তমানে সড়ক বাতিগুলো সচল রয়েছে বলে জানান তিনি ।
প্রসঙ্গত, ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক নির্মাণ করেছে সিডিএ। সড়কটি ব্যবহার করে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলার গাড়ি মূল শহরে প্রবেশ না করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারে। এখনও পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও এক বছর আগে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সড়কটি। চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর পাহাড়ধসের কারণে গত বছরের বর্ষায় ফৌজদারহাটমুখী লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে আবার খুলে দেওয়া হয়।
তাছড়া , এই ৬ কিলোমিটারের ফৌজহারহাট-বায়েজিদ লিঙ্ক মােড় নির্মাণে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়। একেবারে নতুন রাস্তাটি নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন নিয়ে সিডিএ ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটে। পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি এবং ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করার দায়ে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করে পরিবেশ অধিদফতর। একইভাবে আরেক শুনানিতে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদফতর। যদিও জরিমানাম দুই মামলা আপিল শুনানিতে এখনও নিস্পত্তি হয়নি। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে আগে কাটা ১৬টি পাহাড় ২২.৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কাটার প্রস্তাবনা দিলেও পরিবেশ অধিদফতর না করে দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অনুমোদন চাওয়া হলেও ২২.৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে পাহাড় কাটার সম্মতি মেলেনি। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো কাটা ও সংরক্ষণ কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেয় পরিবেশ অধিদফতর। এরপর সিডিএর প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয় ।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;