Dhaka ০৬:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পোয়া ছা বে আগ্গুন বড় অই গেইয়ি, কিঅইরে চিনিত ন পারি : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

পোয়া ছা বে আগ্গুন বড় অই গেইয়ি, কিঅইরে চিনিত ন পারি ( এলাকার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা অনেক বড় গেছে। কাউকে এখন আর চেনা যাচ্ছে না ) ‘আবদুর রশিদ টেন্ডলের ঠাঁট, নজু মিয়া হাট; টুনু মিয়ার জালাবারি, ফুরক মিয়ার মডর গাড়ি। ফুনগই হত্তিয়ার কথা এগিন (শোন এগুলি কবেকার কথা)। হেঁত্তে অ্যারার দাদা অলত্তে মডর গাড়ি আইশ্যি (তখন আমাদের দাদার কাছে মোটরগাড়ি এসেছিল)। এহথা চিন্তা গইত্তে কেন লাগে (একথা চিন্তা করতে কেমন লাগে)। এখন কিয়াই মডর গাড়ি কি? ন চিনে (এই প্রজন্ম মোটরগাড়ি চিনে না)। এসব কথা এক্কানর পর এক্কান মনত আইয়্যি (এসব কথা একের পর এক মনে আসছে)।’

বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন শেষে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে এসে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এ সময় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সময়ে কয়েকটি শ্লোক উল্লেখ করে বলেন,*আবদুর রশিদ টেন্ডলের ঠাট, ‘নজু মিয়ার হাট’। ‘জুনু মিয়ার জালা বাড়ি, ‘ফোরক মিয়ার মোটরগাড়ি’ – চিন্তা গরন হওিয়ার হ-তা এগিন। এঁত্তে আঁরার দাদা অলরত্তে মোটর গাড়ি আইসসি। এই হ-তা চিন্তা গইত্তে কেন লাগে। দেশত মধ্যি এত্তে মোটরগাড়ি কেউ ন’চিনে। এসব হ-তা মনত আইয়্যির। এক্কানর পর এক্কান দেশত মধ্যি পরিবর্তন অর; দেহির। পরে উনি নজু মিয়ার হাট শঅর অই গেইয়ি, শঅর বলে বিলাত অই গেইয়ি। এহন ত নজু মিয়া হাট শঅর অই গেইয়ি ফান-লার, ন-লাগের? আরো অইবু, খুব ভালা লাই-লু । বিয়াগগুন অর লয় দেহা অইল। আজিয়ে আইলাম দে চাঁটগা বিশ্ববিদ্যালয়ত মধ্যি সমাবর্তন সভা আছিল। আঁই অইলাম দে বাড়ির ডাহে আইসসি, আঁরে এক্কেনা বাড়িত লই যাইত পারননি ছন । নড়াচড়া গরন মুশকিল, বউত ডইল্লা আয়োজন গরন পরে। এ উপলক্ষে আইলাম, বেয়াগুনর লই দেহা গইরলাম আজিয়ে। আশা গরির ভবিষ্যতে আর-অ আসা-যাওয়া অইব। আঁরলাই বেয়াগ্‌গুনে দোআ রাইক্কুন। আজিয়ে অনরাত্তুন বিদায় লই যাইর, অনারা বেয়াল্গুন রই-দত বঅই বঅই হষ্ট গইজ্জুন।’

অর্থাৎ-‘আবদুর রশিদ টেন্ডলের ঠাট, নজুর মিয়ার হাট’। ‘জুনু মিয়ার জালা বাড়ি, ‘ফোরক মিয়ার মোটরগাড়ি’- চিন্তা করেন কখনকার কথা এগুলো। তখন আমাদের দাদাদের মোটরগাড়ি ছিল, এ কথা চিন্তা করতে কেমন লাগে। দেশের মধ্যে তখন মোটরগাড়ি কেউ চিনে না। এসব কথা মনে পড়ে। একটার পর একটা দেশের মধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে, দেখতেছি। পরবর্তীতে শুনলাম নজু মিয়া হাট শহর হয়ে গেছে, শহর নাকি বিলাত হয়ে গেছে । এখন তো নজু মিয়া হাট শহর হয়ে গেছে মনে হচ্ছে, হচ্ছে না? আরো হবে, খুব ভাল লাগলো। সবার সাথে দেখা হলো। আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এসে ছিলাম। আমি বললাম- বাড়ির পাশে যাবো, আমাকে একটু বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন কিনা দেখেন; নড়াচড়া করা মুশকিল, অনেক রকমের আয়োজন করতে হয়। এ উপলক্ষে আসলাম, আজ সবার সাথে দেখা হলো; আশা করি ভবিষ্যতে আরো আসা-যাওয়া হবে। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আজ আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। আপনারা সবাই রোদে বসে কষ্ট করেছেন।

এর আগে বিকেল ৪টা ৫৮ মিনিটে তিনি তাঁর বাপের ভিটা হাজি মোহাম্মদ দুলা মিয়া সওদাগর বাড়িতে এসে পৌঁছান। সেখানে তিনি ২৩ মিনিটের মত সময় নিকট আত্মীয় স্বজনের সাথে অতিবাহিত করেন। এরপর বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি তাঁর পিতামহ হাজি মোহাম্মদ নজু মিঞা সওদাগর বাড়ির অদূরে নূরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন কবরস্থানে শায়িত দাদা-দাদির কবর জেয়ারত করেন। তারপর কোন প্রকার ফুল, ব্যানার, পতাকা ও স্লোগান ছাড়াই প্রায় ৭ মিনিটের মতো তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করে উপস্থিত সকলের কাছ থেকে বিদায় নেন।

এরমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করে উপস্থিত সকলের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে এক প্রকার প্রটোকল ভেঙ্গে মঞ্চের সামনে থাকা দর্শকের গ্যালারি থেকে চাচা হাজি মো. শফিকে বুকে টেনে নেন । এদিকে, সারাদিনের প্রখর রোদ আর তীব্র গরম উপেক্ষা করে তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকার শতশত মানুষ তাদের বহুল প্রত্যাশিত বাথুয়া গ্রামের কৃ তিসন্তান, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানাতে এবং এক নজর দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। তবে, নুরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন মাঠে তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময়ের জন্য যারা নিরাপত্তা পাস পায়নি তারা অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে এবং বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদে ও বেলকনিতে অবস্থান নেন।

‘অ্যার লাই দোয়া রাইক্কুন বিয়াগ্গুনে (আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন)। আজিয়ে অনারুত্তুন বিদায় লাইজার (আজ বিদায় নিচ্ছি)। এই বলে বক্তব্য শেষ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইশরাককে শপথ পড়ানো যাবে না: রিটকারীর আইনজীবী

পোয়া ছা বে আগ্গুন বড় অই গেইয়ি, কিঅইরে চিনিত ন পারি : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আপডেটের সময় : ০৭:০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

পোয়া ছা বে আগ্গুন বড় অই গেইয়ি, কিঅইরে চিনিত ন পারি ( এলাকার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা অনেক বড় গেছে। কাউকে এখন আর চেনা যাচ্ছে না ) ‘আবদুর রশিদ টেন্ডলের ঠাঁট, নজু মিয়া হাট; টুনু মিয়ার জালাবারি, ফুরক মিয়ার মডর গাড়ি। ফুনগই হত্তিয়ার কথা এগিন (শোন এগুলি কবেকার কথা)। হেঁত্তে অ্যারার দাদা অলত্তে মডর গাড়ি আইশ্যি (তখন আমাদের দাদার কাছে মোটরগাড়ি এসেছিল)। এহথা চিন্তা গইত্তে কেন লাগে (একথা চিন্তা করতে কেমন লাগে)। এখন কিয়াই মডর গাড়ি কি? ন চিনে (এই প্রজন্ম মোটরগাড়ি চিনে না)। এসব কথা এক্কানর পর এক্কান মনত আইয়্যি (এসব কথা একের পর এক মনে আসছে)।’

বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন শেষে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে এসে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এ সময় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সময়ে কয়েকটি শ্লোক উল্লেখ করে বলেন,*আবদুর রশিদ টেন্ডলের ঠাট, ‘নজু মিয়ার হাট’। ‘জুনু মিয়ার জালা বাড়ি, ‘ফোরক মিয়ার মোটরগাড়ি’ – চিন্তা গরন হওিয়ার হ-তা এগিন। এঁত্তে আঁরার দাদা অলরত্তে মোটর গাড়ি আইসসি। এই হ-তা চিন্তা গইত্তে কেন লাগে। দেশত মধ্যি এত্তে মোটরগাড়ি কেউ ন’চিনে। এসব হ-তা মনত আইয়্যির। এক্কানর পর এক্কান দেশত মধ্যি পরিবর্তন অর; দেহির। পরে উনি নজু মিয়ার হাট শঅর অই গেইয়ি, শঅর বলে বিলাত অই গেইয়ি। এহন ত নজু মিয়া হাট শঅর অই গেইয়ি ফান-লার, ন-লাগের? আরো অইবু, খুব ভালা লাই-লু । বিয়াগগুন অর লয় দেহা অইল। আজিয়ে আইলাম দে চাঁটগা বিশ্ববিদ্যালয়ত মধ্যি সমাবর্তন সভা আছিল। আঁই অইলাম দে বাড়ির ডাহে আইসসি, আঁরে এক্কেনা বাড়িত লই যাইত পারননি ছন । নড়াচড়া গরন মুশকিল, বউত ডইল্লা আয়োজন গরন পরে। এ উপলক্ষে আইলাম, বেয়াগুনর লই দেহা গইরলাম আজিয়ে। আশা গরির ভবিষ্যতে আর-অ আসা-যাওয়া অইব। আঁরলাই বেয়াগ্‌গুনে দোআ রাইক্কুন। আজিয়ে অনরাত্তুন বিদায় লই যাইর, অনারা বেয়াল্গুন রই-দত বঅই বঅই হষ্ট গইজ্জুন।’

অর্থাৎ-‘আবদুর রশিদ টেন্ডলের ঠাট, নজুর মিয়ার হাট’। ‘জুনু মিয়ার জালা বাড়ি, ‘ফোরক মিয়ার মোটরগাড়ি’- চিন্তা করেন কখনকার কথা এগুলো। তখন আমাদের দাদাদের মোটরগাড়ি ছিল, এ কথা চিন্তা করতে কেমন লাগে। দেশের মধ্যে তখন মোটরগাড়ি কেউ চিনে না। এসব কথা মনে পড়ে। একটার পর একটা দেশের মধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে, দেখতেছি। পরবর্তীতে শুনলাম নজু মিয়া হাট শহর হয়ে গেছে, শহর নাকি বিলাত হয়ে গেছে । এখন তো নজু মিয়া হাট শহর হয়ে গেছে মনে হচ্ছে, হচ্ছে না? আরো হবে, খুব ভাল লাগলো। সবার সাথে দেখা হলো। আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এসে ছিলাম। আমি বললাম- বাড়ির পাশে যাবো, আমাকে একটু বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন কিনা দেখেন; নড়াচড়া করা মুশকিল, অনেক রকমের আয়োজন করতে হয়। এ উপলক্ষে আসলাম, আজ সবার সাথে দেখা হলো; আশা করি ভবিষ্যতে আরো আসা-যাওয়া হবে। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আজ আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। আপনারা সবাই রোদে বসে কষ্ট করেছেন।

এর আগে বিকেল ৪টা ৫৮ মিনিটে তিনি তাঁর বাপের ভিটা হাজি মোহাম্মদ দুলা মিয়া সওদাগর বাড়িতে এসে পৌঁছান। সেখানে তিনি ২৩ মিনিটের মত সময় নিকট আত্মীয় স্বজনের সাথে অতিবাহিত করেন। এরপর বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি তাঁর পিতামহ হাজি মোহাম্মদ নজু মিঞা সওদাগর বাড়ির অদূরে নূরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন কবরস্থানে শায়িত দাদা-দাদির কবর জেয়ারত করেন। তারপর কোন প্রকার ফুল, ব্যানার, পতাকা ও স্লোগান ছাড়াই প্রায় ৭ মিনিটের মতো তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করে উপস্থিত সকলের কাছ থেকে বিদায় নেন।

এরমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করে উপস্থিত সকলের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে এক প্রকার প্রটোকল ভেঙ্গে মঞ্চের সামনে থাকা দর্শকের গ্যালারি থেকে চাচা হাজি মো. শফিকে বুকে টেনে নেন । এদিকে, সারাদিনের প্রখর রোদ আর তীব্র গরম উপেক্ষা করে তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকার শতশত মানুষ তাদের বহুল প্রত্যাশিত বাথুয়া গ্রামের কৃ তিসন্তান, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানাতে এবং এক নজর দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। তবে, নুরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন মাঠে তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময়ের জন্য যারা নিরাপত্তা পাস পায়নি তারা অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে এবং বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদে ও বেলকনিতে অবস্থান নেন।

‘অ্যার লাই দোয়া রাইক্কুন বিয়াগ্গুনে (আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন)। আজিয়ে অনারুত্তুন বিদায় লাইজার (আজ বিদায় নিচ্ছি)। এই বলে বক্তব্য শেষ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন