স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ইউনিয়ন ও পৌরসভা বিলুপ্ত করে উপজেলার অধীনে সরাসরি ওয়ার্ড যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
সোমবার (১২ মে) বিকেলে জাতীয় সংসদ এলাকার এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ শব্দটি পরিহার এবং সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৮ বছর প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
বৈঠকের পর নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মাজেদ আতাহারী বলেন, ‘কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের বেশির ভাগের সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করেছি। ছয়টি বিষয়ে আমরা পরিস্কারভাবে দ্বিমত পোষণ করেছি। আবার ১০টি বিষয়ে আংশিক একমত হয়েছি। কমিশনকে আমরা জানিয়েছি, শহরে কাউন্সিলর আর গ্রামে মেম্বার থাকলে বৈষম্য করা হয়, এই বৈষম্য দূর করতে হলে উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন ও পৌরসভা বিলুপ্ত করা জরুরি।
এ ছাড়া সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে, আমাদের প্রস্তাবনা ছিল এই শব্দটিকে কেন্দ্র করে। যেহেতু আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এজন্য এই শব্দটা পরিহার করার সুপারিশ করেছি। সংবিধানে ইতোপূর্বে মহান আল্লাহর ওপরে আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে যাবতীয় কার্যাবলির ভিত্তি, সেটাকে পুনর্বহাল করার সুপারিশ করেছি।’
মাজেদ আতাহারী জানান, সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৮ বছর প্রস্তাব দিয়েছেন। কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল ২১, আমরা বলেছি যেহেতু একজন নাগরিক ১৮ বছরে ভোট দিতে পারে সেক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বয়স ন্যূনতম ১৮ করার প্রস্তাব করেছি।
ইউনিয়ন ও পৌরসভা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসন প্রস্তাবের মধ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং আমূল পরিবর্তন আনা। স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন এবং পৌরসভার যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে এগুলোকে বিলুপ্ত করে আরেকটু শক্তিশালী করে এবং উপজেলা সরাসরি ওয়ার্ডের সাথে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছি। আমরা চাই এই বৈষম্য বিলুপ্ত হোক।’
এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘কাঠামোগত রূপান্তর ছাড়া এ দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদী শাসকের পলায়নের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ শাসনের পতন হয়েছে। একটি সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চায় কমিশন।
এর আগে সরকারের পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়ে মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন।
এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন। আমন্ত্রিত রাজনৈতিক দলগুলোকে গত ২০ মার্চ থেকে চলা কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের এই আলোচনা শেষ হবে আগামী ১৫ মে। এরপর পুনরায় দ্বিতীয় ধাপে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;