ফেরি কপোতাক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৪ মার্চ সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট থেকে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া নৌপথে চলাচল শুরু করার পর থেকে নৌ যাতায়াত খরচ কমে যাওয়া এবং লালবোট দিয়ে ওঠানামার দুর্ভোগ না থাকায় সন্দ্বীপের বাসিন্দারা ফেরিতে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। যাত্রীরা যেমন ফেরিতে সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, তেমনি দ্বীপের ব্যবসায়ীরা কাঠের তৈরি মালবোটের চেয়ে ফেরিযোগে কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপ দিয়ে পণ্য আনা–নেওয়া লাভজনক মনে করছেন। ফেরিতে মালামাল আনলে সাশ্রয়ী। এছাড়া সাগরের পানি লেগে পণ্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও থাকে না। আবার ট্রলার দিয়ে পণ্য আনলে মালামালগুলো কয়েক দফা লোড–আনলোড করতে গিয়ে মালামালের বস্তাসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই ঝুঁকি এড়াতে, পণ্যের ক্ষতি কমাতে, পণ্য আনা–নেওয়ার খরচ কমাতে ব্যবসায়ীরা ফেরির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
স্ক্র্যাপ, প্লাস্টিক, পুরাতন কাগজ–কার্টন ব্যবসা সন্দ্বীপে কয়েক বছর ধরে প্রসার লাভ করেছে। নাঈম নামে এক পাইকারি কার্টন ব্যবসায়ী জানান, কার্টনের গাইডগুলোর ওজন প্রায় ১৫ টন। ফেরি চালু হওয়ার পর এখন ট্রাকে ঢাকা পাঠালে প্রায় ২০ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়। প্রতি টনে প্রায় দেড় হাজার টাকা সাশ্রয় হওয়ায় সন্দ্বীপের স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীরা এসব মালামাল সংগ্রহ করার সময় আগের দামের চেয়ে কেজিপ্রতি দুই টাকা বাড়তি দেন বলে জানান তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও রড–সিমেন্টসহ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সন্দ্বীপে আমদানির খরচ অনেক কম হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ফেরি চলাচলকে কেন্দ্র করে সন্দ্বীপের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোতে পরিবর্তনের ছোয়া লাগছে। সন্দ্বীপের প্রধান সড়ক গুপ্তছড়া ও দেলোয়ার খাঁ সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। ১২ ফুট চওড়া সড়ক এখন ৫০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়গুলোকে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফেরির পন্টুন সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় গুপ্তছড়া ঘাটে ব্রিজের মাথায় কাদামাটি আর কোমর পানি মাড়িয়ে স্পিডবোট, লালবোট, সার্ভিস বোটে ওঠার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছেন যাত্রীরা। সেই সাথে লালবোটে করে স্টিমারে ওঠার ঝুঁকিও এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
তবে যে ফেরি ঘিরে সন্দ্বীপে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, সেই ফেরি সার্ভিস সারা বছর চালু রাখা চ্যালেঞ্জের বিষয়। সন্দ্বীপ চ্যানেলের উপযোগী সারা বছর চলতে পারে এমন কোস্টাল ফেরি প্রয়োজন। এছাড়া সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ও সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটের পন্টুন পর্যন্ত নাব্যতা ধরে রাখতে ড্রেজিং করতে হবে।
এদিকে সন্দ্বীপ চ্যানেল দিন দিন উত্তাল হচ্ছে। ফেরি উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল এটি মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে। তবে আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় ও সন্দ্বীপবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে এখনো চলছে। তবে জুন থেকে আগস্ট মাসের উত্তাল সময়ে এ রুটে চলাচলের জন্য ফেরি কপোতাক্ষ উপযুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।
ফেরি উদ্বোধনের ৪০ দিনের মাথায় আবারও পলি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে উভয় পাশের খাল। সেজন্য ভাটায় পন্টুনে ভিড়তে পারে না ফেরি। সেই সাথে সরকারি স্টিমার এমবি মালঞ্চ ও স্পিডবোটের যাত্রীদের কাদামাটি মাড়িয়ে ওঠানামার সুযোগও ভাটায় থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন গুপ্তছড়া ঘাট সংশ্লিষ্টরা।
ড্রেজিংয়ের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বছরে কমপক্ষে তিনবার বাঁশবাড়িয়া ও গুপ্তছড়া ঘাটের পন্টুন পর্যন্ত ড্রেজিং করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;