৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মো. ইউসুফ নামে এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধকে গণপিটুনি দেয় স্থানীয় জনতা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও মামলা দায়ের হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় । অন্যদিকে গণপিটুনির শিকার বৃদ্ধের পরিবারের অভিযোগ বিষয়টি একটি ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। দোকানের ভাড়া না দিতেই ভাড়াটিয়া মালিকের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মব সাজিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও এর সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি ।
সোমবার (১০ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ভাটিয়ারী রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে ওই বৃদ্ধকে পুলিশে সোপর্দ করে। একইসঙ্গে তারা বৃদ্ধের বাড়িও ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ১০ লাখ টাকায় রফাদফা করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
বৃদ্ধ ইউসুফের ছেলের অভিযোগ, শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি পরিকল্পিত ও সাজানো। অনৈতিক সুবিদা না পেয়ে স্থানীয় একটি চক্র এ ধর্ষণ ঘটনার নাটক সাজিয়ে মারধর ও ঘর ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে শিশুটির বাবা সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার দুপুরে বৃদ্ধ ইউসূফ সকলের অগোচরে একশত টাকার লোভ দেখিয়ে মেয়েকে পুকুরপাড় থেকে কোলে করে নিজের বাসার দোতালায় নিয়ে যায়। এসময় বৃদ্ধ তার মেয়েকে সেখানে ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের কিছু লোকজন বসে ১০ লাখ টাকার দফারফার চেষ্টা করে।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় জনতার পিটুনি থেকে ধর্ষককে উদ্ধার করে পুলিশ নিয়ে যায় এবং ধর্ষণের শিকার ৯ বছরের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শিশুটিকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও যুবদল নেতা মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, ইউসুফ শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে তা মেনে নেওয়ার মতো না। স্থানীয় যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ হারুনসহ কয়েকজন ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ১০ লাখ টাকায় আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করে। এতে স্থানীয়রা তা মেনে নিতে পারেনি। তার নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তুলে পুলিশকে খবর দিয়ে বৃদ্ধ ইউসুফ ও তার ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি মোহাম্মদ হারুন বলেন, ১০ লাখ টাকার আপোষ মিমাংসার কোনো কথা হয়নি। ঘটনা সত্য কি মিথ্যা তাও আমরা জানি না। আমরা সামাজিক বিচার করে প্রকৃত তথ্য জানতে চেষ্টা করেছি। এতে বৃদ্ধ ইউসুফ ও তার ছেলে কামরুল প্রভাব খাঠিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এসময় সাহাব উদ্দিন যুবদলের কোনো নেতা নয় বরং অপরাধী চক্রের সদস্য বলে জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, টাকা ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে দফারফা করতে গিয়ে বাঁধে বিপত্তি। অভিযুক্ত ইউসুফের ছেলের একটি কথাতে গ্রামবাসী দুই পক্ষে ভাগ হয়ে যায়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। রাতে তারাবির নামাজের পর বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় স্থানীয় জনতা ইউসুফকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে পিটুনি দেয়। পরে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সোহেল রানা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। আহত শিশুটিকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সোহেল রানা বলেন, জনগণের রোষানল থেকে আমরা সত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধকে উদ্ধার করি এবং ধর্ষণের শিকার ৯ বছরের আহত শিশুটিকে প্রথমে থানায় ও পরে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত বৃদ্ধ ইউসূফের ছেলে মোহাম্মদ কামরুল বলেন, আমাদের বাড়ির বাইরে একটি দোকান আবছার নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়ায় দিয়েছিলাম। ওই দোকানে গাজা-ইয়াবা ব্যবসা হতো জানতে পেরে আমার পরিবার কয়েকমাস আগে তার থেকে দোকান নিয়ে নিই। এতে ভাড়াটিয়া আবছার ও তার সহযোগী সাহাব উদ্দিন চক্র সংঘবদ্ধ নিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছিলে। এতে সফল হতে না পেরে পরিকল্পিতভাবে শিশু ধর্ষণের নাটক সাজিয়েছে। কোনো ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। শিশুটির মেডিকেল রিপোর্টে তা প্রমাণ হবে। আমরাও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মো. ইউসুফকে আসামি করে শিশুটির বাবা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আটকের পর ওই বৃদ্ধকে আদালতের মাধ্যমে জেলে হাজতে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুকেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি । খবরের কাগজ
খালেদ / পোস্টকার্ড ;