সীতাকুণ্ডে সোমবার গভীর রাতে উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশের একটি ভাড়া বাসা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ২ ডাকাতকে আটক করেছে পুলিশ।। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আটককৃতরা হল, উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর আকিলপুর এলাকার মো. হানিফের ছেলে মো. নাহিদ পারভেজ (২৫) ও একই এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. ডাকাত মারুফ হোসেন (২৬)।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে, সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দায়িত্ব পালনকালে জানতে পারি, মহাসড়ক সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে বেশ কিছু যুবক সংগঠিত হচ্ছে। পরে অভিযানকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সঙ্ঘবদ্ধ দলের সদস্য জসীম ও রিয়াদসহ অজ্ঞাত ৩/৪ জন পালিয়ে গেলেও পারভেজ ও মারুফকে আটক করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘরের ভেতর তল্লাশি চালিয়ে ২টি চাইনিজ কুড়াল, ২টি ছুরি, ৩টি প্লাসসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এমন ঘটনা এখন নিয়মিত ঘাটছে । হয়তো কিছু পুলিশ জানতে পারছে নয়তো পুলিশের অগোচরে ঘঠে যাচ্ছে । দেশের পণ্য পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। সম্প্রতি এ মহাসড়কে ডাকাত-ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতি রাতেই খবর আসছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের। বিষয়টি স্বীকার করেছে পুলিশও। তাদের ভাষ্য, অনেক সময় গাড়ির চালক জড়িত থাকেন ডাকাতির সঙ্গে। যদিও ভুক্তভোগীদের দাবি, মহাসড়কে হাইওয়ে কিংবা থানা-পুলিশের কোনো নজরদারি নেই। বিশেষ করে রাত গভীর হলেই মহাসড়ক অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
বিভিন্ন সূত্রে গত ৭ মাসের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগরের ইপিজেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে প্লাস্টিক দানা নিয়ে যায় চোরেরা। ২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ১৫ টন ঢেউটিন নিয়ে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয় বিসমিল্লাহ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিকানাধীন একটি ট্রাক। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে দাউদকান্দি ব্রিজ পার হওয়ার পর ডাকাতেরা ট্রাকটি আটকে ট্রাকচালক শিমুলকে বেঁধে ফেলে। পরে পণ্যসহ ট্রাকটি নিয়ে যায়। পরদিন গাড়িটি গাজী গ্রুপের টায়ার ফ্যাক্টরির (রূপগঞ্জ) সামনে খালি অবস্থায় পাওয়া যায়। ৬ অক্টোবর দুপুরে রপ্তানি পণ্য নিয়ে সীতাকুণ্ডের নেমশন ডিপোতে অবস্থান করলে কিছু দুষ্কৃতকারী তিনটি গাড়ির ভেতর থেকে ডকুমেন্ট চুরি করে নিয়ে যায়। পরে তিন গাড়ির চালককে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে ডকুমেন্টস ফেরত নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার করে ৪৫ হাজার টাকা দিতে বলে। ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য লোড করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় আরমান ট্রেডার্সের একটি গাড়ি। রাত সাড়ে ৯টার সময় মীরসরাই বাজার এলাকায় এলে কিছু দুষ্কৃতকারীরা এতে হামলা করে। দুষ্কৃতকারীরা চালকের মোবাইল, মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে গাড়িটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। চালক ৯৯৯-এ কল দিলে দুষ্কৃতকারীরা চালককে কুপিয়ে জখম করে এবং গাড়ির গ্লাস ভেঙে পালিয়ে যায় । গত ১৩ জানুয়ারি গভীর রাতে এই মহাসড়কের উপজেলার পন্থিছিলা এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় একজন নিহতও হন। তার আগে শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মেসার্স আকবর ট্রেড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টের একটি গাড়ি ৫০০ বস্তা প্লাস্টিক দানা নিয়ে গাজীপুর যাওয়ার পথে কুমিল্লায় ছিনতাই হয়। পরদিন কুমিল্লা জেলা পুলিশের সহায়তায় মালপত্রসহ গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে ১৭ নভেম্বর রাতে সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা থেকে কাভার্ড ভ্যানের গতি রোধ করে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালপত্র লুট করা হয়। সম্প্রতি আবুল খায়ের স্টিল মিলের কাঁচামাল বন্দর থেকে কারখানায় যাওয়ার পথে মদনহাট এলাকা থেকে ছিনতাই হয় এবং পরে ট্রাকটি বায়েজিদ স্টিল মিলে পাওয়া যায়। সম্প্রতি কেডিএস গ্রুপের একটি ট্রাক মালপত্রসহ হারিয়ে যায়, যদিও পরে সেটি উদ্ধার করা হয়।
রাত হলেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলে ডাকাতি । ভুক্তভোগীদের বলছে পুলিশের নজরদারি নেই অন্যদিকে পুলিশের দাবী গাড়ির চালকও জড়িত ডাকাত চক্রের সাথে । ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বর্তমানে গাড়ি চালকদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম। মহাসড়কে মীরসরাই, সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় অহরহ ঘটছে ছিনতাই-ডাকাতি । দুর্ঘটনা ও হামলার শিকার হচ্ছেন চালকরা। আর ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার মালামাল হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এই মহাসড়কে বিগত পাঁচ মাসে প্রায় ২০টির বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যদিও ভুক্তভোগীদের দাবি, মহাসড়কে হাইওয়ে কিংবা থানা-পুলিশের কোনো নজরদারি নেই। বিশেষ করে রাত গভীর হলেই মহাসড়ক অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
পণ্য পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসা কাভার্ড ভ্যানচালক ইয়াজ উদ্দিন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটা এখন সম্পূর্ণ অনিরাপদ মনে হয়। বিশেষ করে সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, কুমিল্লা এলাকায় বেশি ছিনতাই হচ্ছে। কোনো কারণে গাড়ির গতি কমালে ছিনতাইকারীরা গাড়িতে উঠে চুরি করে। আবার অনেক সময় মহাসড়কের দুই পাশে আড়ালে লুকিয়ে থেকে সুযোগ বুঝে হামলা চালায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, জনবল কম থাকায় কিছু ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া অনেক সময় চালকদের যোগসাজশেও কিছু ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে নিয়মিত টহল পুলিশ থাকে বলে জানান তিনি ।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;