এবারও প্রতিবছরের মতো থার্টি ফার্স্ট নাইটে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ফানুস না উড়াতে এবং আতশবাজি না ফুটাতে নির্দেশনা দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি । ঠিকই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ফানুস, আতশবাজি ও পটকা নামে ‘শব্দবোমা’ ফুটিয়ে ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করেছেন নগরবাসী। এছাড়া উচ্চ শব্দে নাচ-গানে আনন্দ উল্লাস চলেছে পাড়া-মহল্লায়।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার পরপরই নগরের আকাশজুড়ে আলোর ঝলকানি শুরু হয়। সঙ্গে যোগ হয় পশু পাখি, শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের আতঙ্ক কানফাটানো আতশবাজি-পটকার শব্দ।
চট্টগ্রামের বন্দর থানার হালিশহর এলাকার একটি বাড়ির ছাদে উঠে দেখা যায়, ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁতেই রঙ-বেরঙের আতশবাজির ঝলকানিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের আকাশ। একযোগে বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদ থেকে পোড়ানো শুরু হয় আতশবাজি। পাশাপাশি পটকার শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, খুলশী, আকবর শাহ, আগ্রাবাদ, বন্দর ও পতেঙ্গাসহ প্রায় সব এলাকাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফুটানো হয়েছে আতশবাজি, পটকা। কিছু কিছু স্থানে উড়ানো হয়েছে ফানুস।
এদিকে, আতশবাজি ও বাজির কানফাটা শব্দের আওয়াজে সদ্যোজাত শিশু সন্তানকে নিয়ে অনেক মা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রাত পার করছেন। শিশু ছাড়াও এই শাব্দবোমার অত্যাচার থেকে রেহাই পাননি বৃদ্ধ, এমনকি রোগীরাও।
২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে আতশবাজির শব্দে ঢাকার মোহাম্মদপুরের তানজিম উমায়ের ছটফট করতে করতে মারা গিয়েছিল। হৃদরোগে ভুগতে থাকা বাচ্চাটি টানা বাজির শব্দ সইতে পারেনি। সারারাত সে ছটফট করছিল। পরদিন সকালে উমায়েরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে এলে চিকিৎসকরা দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যান। সেখানেই কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।
এছাড়া ঘিঞ্জি এলাকায় আতশবাজি ও আগুন ধরিয়ে ফানুস ওড়ানো ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ফানুস উড়তে উড়তে বাড়ির ছাদে বা বৈদ্যুতিক তারে পড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে—এমন উদাহরণও আছে।
অন্যদিকে, নগরবাসীর অনেকে ঘরোয়াভাবে নানা আয়োজনে খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৫-কে স্বাগত জানাচ্ছেন। আতশবাজি-ফানুস না উড়ালেও তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। অনেকে বাসার ছাদে বারবিকিউ পার্টি, কেক কাটাসহ নানা আয়োজন করেছেন।
আতশবাজি এবং পটকা ফুটানোর নির্দেশনা কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ কিনা এবং রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে সোমবার নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) রইছ উদ্দিন বলেছিলেন, ‘বিস্ফোরণ আইন অনুযায়ী আতশবাজি-পটকা এমনিতেই নিষিদ্ধ। আমরা নির্দেশনা দেওয়ার পর আইনটা মানার দায়িত্ব জনগণের। এই আতশবাজি অনেক দুর্ঘটনারও জন্ম দেয়। জনগণের সচেতনতা না থাকলে আইন দিয়ে সবকিছু সমাধান করা সম্ভব নয়।’
এর আগে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) আতশবাজি, ফানুস উড়ানোসহ ১৩টি বিষয়ে বিধিনিষেধ জারি করেছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। কিন্তু পুলিশের সেই নিষেধাজ্ঞাকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়েছে নগরবাসী।
পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়, থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে নগরের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন, গীর্জা, হোটেল, ক্লাব, বিনোদনকেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন, টহল জোরদার, ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ/দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য তৎক্ষণাৎ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুম অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ জানাতে অনুরোধ করা হয়। কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর: ০৩১-৬৩৯০২২, ০৩১-৬৩০৩৫২, ০৩১-৬৩০৩৭৫, ০১৬৭৬-১২৩৪৫৬, ০১৩২০-০৫৭৯৯৮।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;