আগামী মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে শিবচতুর্দশী তিথি উপলক্ষে শুরু হবে তিন দিনের তীর্থযাত্রা । তীর্থযাত্রা উপলক্ষে ১৫ দিনের মেলা চলবে যা দোলপূর্ণিমার মধ্য দিয়ে শেষ হবে । তীর্থযাত্রা ও মেলা উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রশাসন ও মেলা কমিটির সমন্বয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা । তীর্থযাত্রা ও মেলাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরা সীতাকুণ্ডে আসছেন। মেলায় প্রতি বছর ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাধু- সন্ন্যাসী ও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। কয়েকশ’ বছরের প্রাচীন এই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর লাখ লাখ ভক্তের আগমন ঘটে । সবচেয়ে বৃহৎ এ তীর্থভূমি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মহামানবের মিলন তীর্থে পরিণত হয়। ফলে এই মেলার নিরাপত্তা রক্ষায় প্রশাসনও যথেষ্ট তৎপর থাকে।
এদিকে মেলায় স্টল তৈরির কাজ মোটামুটি শেষ। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চন্দ্রনাথ মন্দির পর্যন্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তাসহ মেলার যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা কমিটি ।
এই দিকে মেলার বিষয় নিয়ে কথা হয় তীর্থ পরিচালনাকারী সীতাকুণ্ড স্রাইন (তীর্থ) কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশের সাথে। তিনি বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি এ তীর্থের মূল তিথি শিবচতুর্দশী। এ দিনেই তীর্থযাত্রীরা শিবরাত্রির ব্রত রেখে মূল তীর্থ করবেন। পরদিন অমাবস্যা তিথিতে মৃত পূর্বপুরুষের জন্য শ্রাদ্ধ করবেন। এবার অন্তত ১২ লাখ ভক্তের সমাগমের আশা করছেন তিনি । এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
আয়োজকরা জানান, সারা বিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে চন্দ্রনাথ ধাম একটি পুণ্যতীর্থ পীঠ। আনুমানিক ৩০০ বছর আগের ফাল্গুন মাসের শিবচতুর্দশী তিথিতে (শিবরাত্রি) চন্দ্রনাথ ধামকে ঘিরে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী শিবচতুর্দশী মেলা। তখন থেকে এ মেলাকে ঘিরে দেশ-বিদেশের লাখো পুণ্যার্থী সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার ২০০ ফুট ওপরের পথ হেটে কলিযুগের মহাতীর্থ খ্যাত এ চন্দ্রনাথ ধাম দর্শনের পাশাপাশি শিবরাত্রিতে দেবাদিদেব মহাদেবের পূজা-অর্চনা করেন। এ ছাড়া মেলার চতুর্দশী তিথিতে সনাতনী পুণ্যার্থীরা ব্যাস কুণ্ডে স্নান-তর্পণ, গয়াকুণ্ডে পিণ্ডদান করেন। সীতাকুণ্ডে থাকা অন্তত ৫০টি মঠ-মন্দির পরিক্রমা করবেন তারা।
ধর্মীয় এ মেলাকে ঘিরে বসে তৈজসপত্র, পাঠ্যপুস্তক, খাবারের দোকান, খেলনা, আসবাবপত্রসহ নানা পণ্যের দোকান। মেলায় আগত পুণ্যার্থীরা ধর্মীয় আচার শেষ করে কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরেন।
মেলার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠ -সুন্দরভাবে যাতে শিবচতুর্দশী মেলা সম্পন্ন হয়, সে লক্ষ্যে সব দপ্তরের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান জানান, শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে এবার মোট ৬০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মেলায় জনসমাগম গতবারের তুলনায় বেশি হবে ধরে নিয়েই এই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, মেলা কেন্দ্রিক সকল প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। সকলে মিলে একটি সুন্দর-সুষ্ঠ মেলা সম্পন্ন করতে মেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম শিবচতুর্দশী মেলায় দোকান, যানবাহন বা অন্য কোনো কিছু থেকে যেন কোনো চাঁদাবাজি না হয়।
তিনি সকল রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা ও মেলার স্বেচ্ছাসেবকদের কঠোরভাবে মনিটরিং করার আহবান জানান । কেউ চাঁদাবাজি করলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান। এক্ষেত্রে কোনো দলীয় তদবির গ্রহণ করা হবে না। বরং কেউ তদবির করলে তাকে তদবিরকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, এজন্য আমি একটি ফরম তৈরি করেছি। সেখানে তদবিরকারীকে স্বাক্ষর করতে হবে। অপরাধীকে বাঁচানোর সহযোগী হিসেবে তদবিরকারীর নাম স্থায়ীভাবে লিখে রাখা হবে যেন ভবিষ্যতে তদবিরকারীও ভালো কোনো অবস্থানে যেতে না পারে।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমি চাই এবারের মেলাটি হবে সম্প্রীতির উদাহরণ। এখানে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ পূণ্যার্থী আসেন। তাদেরকে নিরাপদে তীর্থ করে ফিরে যেতে আমরা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবো। পুলিশ ১১টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পুরো নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেবে।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;
মেজবাহ উদ্দীন খালেদ।। 

















