বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ক্রীড়া সংগঠক ও ষাটের দশকে চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ ছাত্রনেতা প্রফেসর শায়েস্তা খান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। নগরীর সার্জিস্কোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার ভোর পাঁচটায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রফেসর শায়েস্তা খান কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল বাদ আসর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় । পরে মিসকিন শাহ মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
প্রফেসর শায়েস্তা খানের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১০ জুন চট্টগ্রাম নগরের আলকরণে। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ষাটের দশকে সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ ছাত্রনেতা ছিলেন শায়েস্তা খান। গণঅভ্যুত্থানসহ তৎকালীন রাজনীতিতে তিনি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা রাখেন ।
পেশাগত জীবনে প্রফেসর শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ, ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
খেলা অন্তপ্রাণ মানুষ ছিলেন প্রফেসর শায়েস্তা খান। ১৯৬১-৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে একই কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন । ১৯৬৭ সালে সরকারি কমার্স কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সাংঠনিক কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ সাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার আমৃত্যু সাধারণ সম্পাদক ছিলেন । চিটাগং মেট্রোপলিটন কমার্স কলেজ ও উদয়ন ছোটদের স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি । ২০০১ সালে তাঁকে বর্ষসেরা ক্রীড়া সংগঠক নির্বাচিত করে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ‘দৈনিক মিছিল’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন। প্রথমে স্বনামে পরে সরকারি কলেজে চাকরির কারণে নেপথ্যে থেকে পত্রিকাটির সম্পদনার কাজ চালিয়েছেন। তিনি ‘স্মৃতির জানালা খুলে চেয়ে দেখি’ শিরোনামে সুপ্রভাত বাংলাদেশে (২০০৫-২০০৭), ‘দেখা শোনা ভাবা’ শিরোনামে দৈনিক আজাদীতে (২০০৭-২০১২) এবং ‘ষাট দশকের ছাত্র রাজনীতি ও আমি’ শিরোনামে দৈনিক পূর্বদেশে (২০১৩-২০১৫) ধারাবাহিক কলাম লেখেন । সুপ্রভাতে ছাপা হওয়া লেখা নিয়ে ‘পঞ্চাশ দশকের চট্টগ্রাম এবং আমার ছেলেবেলা’ বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে । তিনি বিকম (অনার্স ও পাস কোর্স) শিক্ষার্থীদের জন্য রচনা করেন ‘বাণিজ্যিক ও শিল্প আইন’ নামে একটি বই ।
প্রফেসর শায়েস্তা খানের আদি নিবাস নগরের চান্দগাঁওয়ের হায়দার আলী নাজির বাড়ি। তাঁর পিতা মরহুম আজিজ উল্লাহ খান এবং মাতা মরহুমা মোহসেনা বেগম। তিনি এক পুত্র ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ ডা. ইশতেয়াক আজিজ খান, কন্যা ফারজানা জেসমিন খান, জামাতা মেরিনার ক্যাপ্টেন ফসিউর রহমান ও নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার শোক
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ক্রীড়া সংগঠক ও চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শায়েস্তা খানের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি (সাবেক) এ. এইচ এম আবদুল হাকিম, সহ সভাপতি সালমান ইস্পাহানি, যুগ্ম সম্পাদক সাহাবউদ্দিন আহামদ চৌধুরী, ইবাদুল হক লুলু, সদস্য তৈয়বুর রহমান, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, সেকান্দর কবির, ওচমান গনি মনসুর, রুশো মাহমুদ ও ফরিদ আহামদ প্রমুখ।
সংস্থার পক্ষ থেকে গতকাল প্রেরিত এক বিবৃতিতে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয় ।
সরকারি কমার্স কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির শোক
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ক্রীড়া সংগঠক ও চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর শায়েস্তা খানের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন সরকারি কমার্স কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম. এ. মালেক, সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান, সহ সভাপতি আবুল হাসেম, নুরুল আমিন খান, অধ্যাপক আবু মো. রহিমুল্যা, সোলায়মান খান, ও যুগ্ম সম্পাদক আ.ন.ম. ওয়াহিদ দুলাল প্রমুখ। শোক বিবৃতিতে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মরহুমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয় ।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;
বিশেষ প্রতিবেদক ।। 














