পলি আকতারের দুই দিন পর কোলজুড়ে সন্তান আসবে । এর আগেই স্বামী মো. রাশেদ বাড়িতে ফিরবেন, পাশে থাকবেন সন্তান জন্মের সময় এমনটা আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন পলি আকতার কিন্তু এর মধ্যেই একটি দুঃসংবাদ সবকিছু এলোমেলো করে দিলো । রাশেদ আর নেই । সে পাড়ি দিয়েছেন না–ফেরার দেশে। শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের নয়তলা ভবন থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তিন নির্মাণশ্রমিকের। তিনজনই নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বাসিন্দা। এদের মধ্যে নোয়াখালী জেলার চরজব্বর চরকালাক এলাকার ফিরোজ গোয়ালের ছেলে মো হাসান, নোয়াখালী জেলার চরজব্বর চর নাঙ্গলিয়া এলাকার সেলিমের ছেলে ফখরুল ইসলাম এবং একই এলাকার আবুল কালামের ছেলে মো. রাশেদ।
স্বামী রাশেদের মৃত্যুর খবরে শুক্রবার দুপুর থেকে অনাগত সন্তানের প্রতীক্ষায় দিন কাটানো পলিকে অপেক্ষা করতে হয় স্বামীর লাশের জন্য। প্রতিটা মুহুর্তে বাড়িতে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন আর জ্ঞান হারান পলি আকতার। এর মধ্যে রাত যায়, ভোর হয়। স্বামীর লাশ তখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
এর মধ্যেই শনিবার ভোরে প্রসবব্যথা তীব্র হয় পলির। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বাড়িতেই এক ছেলেসন্তানের জন্ম নেয় । অন্যদিকে শনিবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে তিন নির্মাণশ্রমিকের লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সুবর্ণচরের উদ্দেশে রওনা দেন আত্মীয় স্বজনেরা।
এ সময় রাশেদের চাচা মো. জামাল গণমাধ্যমকে বলেন, রাশেদ মারা গেল, আর তার স্ত্রী ছেলের জন্ম দিল। প্রসবের তারিখ ছিল ২২ জুলাই মঙ্গলবার, তবে রাশেদের মৃত্যুর ১৮ ঘণ্টা পর ছেলেটির জন্ম হয়েছে। ছেলের মুখটা দেখে যেতে পারল না রাশেদ । ছেলেটিও কখনো বাবাকে পাবে না।
তিনি বলেন, রাশেদ-পলি দম্পতির এটি দ্বিতীয় সন্তান। তাঁদের তিন বছরের একটি মেয়ে আছে। বাবা যে মারা গেছে, মেয়েটি এসব কিছুই বুঝতে পারছে না। এর মধ্যে ছেলের জন্মে যদিও পুরো বাড়ী খুশি হওয়ার কথা কিন্তু চারিদিকে বিষাদের ছায়া।
রাশেদরা দুই ভাই ও দুই বোন। রাশেদ সবার বড়। তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা আবুল কালাম কৃষক। তিনিও অসুস্থ। রাশেদের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই কান্নাকাটি বাড়িজুড়ে। মা নিলুফা আকতার ছেলের জন্য কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন।
চাচা মো. জামাল আরো বলেন, একমাত্র আয়রোজগার করত রাশেদ। নির্মাণশ্রমিক হিসেবে চট্টগ্রামে থাকত। তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিপদ যে এভাবে আসবে কে জানত। আজ (শনিবার) ছেলের জন্মে কত আনন্দ হতো বাড়িতে। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।
গতকাল রাতে রাশেদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স বাড়ি পৌঁছাতেই রাশেদের নিথর দেহ জড়িয়ে আহাজারি করতে থাকেন পলি আকতার। প্রতিবেশীরা তখন ভোরে জন্ম নেওয়া ছেলের কথা বলে তাঁকে সান্ত্বনা দেন। কেউ আবার আফসোস করতে থাকেন জন্মের ১৮ ঘণ্টা আগে বাবাহারা নবজাতকের জন্য।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;