সীতাকুণ্ডের ঝর্ণাগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিসের দেয়া নির্দেশনার কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা বন বিভাগের অধীন থাকা ইজারা দেওয়া চারটি ঝরনায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁশ দিয়ে বেড়া, সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ও মাইকিং নিরাপত্তাকর্মী বাড়ানো হয়েছে ।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বন বিভাগের বারৈয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, প্রতিটি ঝরনায় ইউনিফর্ম পরা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁদের দেওয়া হয়েছে ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডমাইক ।
১৪ জুন ও ১৫ জুন পরপর দুই দিনে দুই পর্যটকের মৃত্যুর পর স্পটগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও দর্শনার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। তাছাড়া চোখে পড়ে বন বিভাগের গাফিলতিও । কেননা গত বছরের ১৭ এপ্রিল সহস্রধারা–২ ঝরনায় এক তরুণের মৃত্যুর পর দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বন বিভাগকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে ছিল- বিপজ্জনক স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন, সাঁতার না জানা পর্যটকদের পানিতে নামতে না দেওয়া এবং ইজারাদারের লোকবল বাড়ানো।
সোমবার সকালে সহস্রধারা-২ ঝরনার পাড়ে থাকা কর্মী জয়নাল আবেদীন হ্যান্ডমাইকে বলছিলেন, এই লেক অত্যন্ত গভীর। পানি ঠান্ডা। লেকে নামা কিংবা সাঁতার কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লেকে নামলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে।
ঝরনার ইজারাদার ওহিদুল ইসলাম শরীফ বলেন, তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করেছেন। ব্যানার–ফেস্টুন বাড়ানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে পর্যটকদের উঠতে নিষেধ করা হচ্ছে। লেকে না নামার জন্য পর্যটকদের নিষেধ করে মাইকিং করা হচ্ছে। এরপরও কিছু ভ্রমণপিপাসু লেকে নেমে গোসল করতে চান। তাঁদের জন্য যে পর্যন্ত লেকে নামলে নিরাপদ হবে, সেখানে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে দেওয়া হচ্ছে । সাঁতার না জানা দর্শনার্থীদের পানিতে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।
গত দুই বছরে ঝরনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের প্রায় সবাই ৩০ বছরের নিচে উল্লেখ করে রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, এই বয়সের পর্যটকেরা বেপরোয়া। ঝরনায় গিয়ে অনেক সময় কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করেন। তাঁরা ঝরনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজনের কথা শুনতে চান না।
সীতাকুণ্ডে মোট সাতটি ঝরনা রয়েছে। ঝরনাগুলো হলো ঝরঝরি, মধুখায়া, সহস্রধারা–২, সহস্রধারা–১, সুপ্তধারা, অগ্নিকুণ্ড ও বিলাসী। আর সীতাকুণ্ডের লাগোয়া মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুরে রয়েছে রূপসী ঝরনা। এর মধ্যে যাতায়াতের সহজ হওয়ায় পর্যটকেরা সহস্রধারা–২ ঝরনায় বেশি যান। যাঁরা একটু পাহাড়ে অ্যাডভেঞ্চার করতে চান, তাঁরা ঝরঝরি, রূপসী ও বিলাসী ঝরনায় গা ভাসান। সহস্রধারা–১ ও সুপ্তধারা ঝরনা যেটি দেখা যায় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কে গেলে।
আটটি ঝরনার মধ্যে চারটি ঝরনা বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারা দেওয়া ঝরনাগুলো হলো সহস্রধারা–১, সহস্রধারা-২, রূপসী ও সুপ্তধারা ঝরনা। এর মধ্যে সহস্রধারা–২ ঝরনাটি যাতায়াতে সহজ হলেও পর্যটকদের নৌকায় চেপে একটি বড় হ্রদ পার হতে হয়। কখনো কখনো নিয়ম অমান্য করে হ্রদে গোসল করতে নেমে পড়েন পর্যটকেরা। ফলে পর্যটকের মৃত্যু হয়। আবার কখনো নৌকা থেকে পড়েও মৃত্যু হয়। হ্রদটি কমপক্ষে ৩০ ফুট গভীর। সাঁতার না জানা পর্যটকদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
উল্লেখ্য যে , এই ঝরনাগুলোতে গত দুই বছরে ৮ পর্যটক মারা গেছেন, তার মধ্যে ২০২৩ সালের ২ জুলাই ঝরঝরি ঝরনায় এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। ২৮ অক্টোবর সহস্রধারা–২ ঝরনায় আরও এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। ৯ সেপ্টেম্বর বিলাসী ঝরনায় সেলফি তুলতে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। ৪ অক্টোবর রূপসী ঝরনায় একসঙ্গে দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ১৭ এপ্রিল দুই পর্যটকের মৃত্যু হয় এবং সর্বশেষ গত ১৪ জুন ও ১৫ জুন দুই পর্যটকের মৃত্যু হয় ।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;