Dhaka ১২:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ জাহাজ ভাঙা শিল্প টানা সপ্তমবার শীর্ষে, অবস্থান ধরে রাখতে গ্রিন শিপইয়ার্ড এর উপর গুরুত্বরোপ

বাংলাদেশ জাহাজ ভাঙা শিল্প ২০২৪ সালেও বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জাহাজ রিসাইকেল করে টানা সপ্তমবারের মতো শীর্ষ অবস্থান অর্জন করেছে । ২০১৮ সালে ভারতকে টপকে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে আসে। এরপর টানা সাত বছর এই অবস্থান ধরে রেখেছে।

বুধবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর ) প্রকাশিত জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা ‘আঙ্কটাড’ প্রকাশিত ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এই তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সারাবিশ্বে প্রায় ৬ দশমিক ৩৪ মি- লিয়ন টন জাহাজ রিসাইকেল করা হয়। এর মধ্যে মোট জাহাজ রিসাইক্লিংয়ের ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্কে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত একাই বাজারের ৭৭ শতাংশের বেশি অংশ দখল করেছে।

বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে থেকে একাই ২ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন গ্রস টন জাহাজ রিসাইক্লিং করেছে, যা বৈশ্বিক মোট জাহাজ ভাঙার ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ। এরপর ভারত ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ, পাকিস্তান ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং তুরস্ক ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী স্ক্র্যাপিংয়ের পরিমাণ প্রায় একই রকম থাকলেও বাংলাদেশ কিছুটা কম জাহাজ স্ক্র্যাপ করেছে (২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৪২ মিলিয়ন গ্রস টন থেকে ২০২৪ সালে ২ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন এস টিন)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামীতে জাহাজ রিসাইক্লিং খাত কিছুটা চাপে পড়তে পারে, কারণ চলতি ২০২৫ সালের ২৬ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে হংকং কনভেনশন, যা পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ উপায়ে জাহাজ রিসাইক্লিং বাধ্যতামূলক করেছে। একসময় বৈশ্বিক জাহাজ ভাঙা শিল্পে বাংলাদেশের আধিপত্য থাকলেও এখন সেই অবস্থান হারাতে বসেছে।

উন্নত কমপ্লায়েন্স, ভালো দাম ও দ্রুত কার্যপ্রক্রিয়ার সুবাদে এই বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে নিচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের স্ক্র্যাপ জাহাজ গুলোর ব্যস্ততম গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। ভারতের ইয়ার্ডগুলো নিজেদের সুনাম বাড়াচ্ছে, পাকিস্তানে ফের গতি পাচ্ছে, আর মাত্র ১৪টি গ্রিন ইয়ার্ড নিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে ২৪ টি জাহাজ ভাঙার জন্য আনা হয়, যেখানে ভারতে আসে ২১টি ও পাকিস্তানে তিনটি। কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে এই সংখ্যা কমে ২২ টিতে দাঁড়ায়, অথচ ভারত ২১ টি জাহাজ নিয়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে এবং পাকিস্তানে সংখ্যা বেড়ে চারে দাঁড়ায়। ২৬ জুন হংকং কনভেনশন কার্যকর হওয়ার পর এই মন্দা আরও গভীর হয়।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সহ- সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা জাহাজ ভাঙা শিল্পকে কৌশলগত খাত হিসেবে দেখে কিনা। আমরা যদি গড়িমসি করতে থাকি, তাহলে বাংলাদেশ এমন এক শিল্প হারাবে যা কর্মসংস্থান, ইস্পাত ও বৈশ্বিক পরিচিতি এনে দিচ্ছে। গ্রিন শিপইয়ার্ড না বাড়লে আমাদের এই টানা শীর্ষ অবস্থানের ধারাবাহিকতা আর বজায় থাকবে না ।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জাহাজ আমদানি তীব্রভাবে কমে গেছে। জুনে ৯০ হাজার টন ওজনের সাতটি ও জুলাইয়ে ৮০ হাজার টন ওজনের আটটি জাহাজ আনা হলেও আগস্টে সীতাকুণ্ডে জাহাজ আমদানির জন্য নতুন কোন এনওসি দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;
আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

বাংলাদেশ জাহাজ ভাঙা শিল্প টানা সপ্তমবার শীর্ষে, অবস্থান ধরে রাখতে গ্রিন শিপইয়ার্ড এর উপর গুরুত্বরোপ

আপডেটের সময় : ০৬:১৬:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশ জাহাজ ভাঙা শিল্প ২০২৪ সালেও বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জাহাজ রিসাইকেল করে টানা সপ্তমবারের মতো শীর্ষ অবস্থান অর্জন করেছে । ২০১৮ সালে ভারতকে টপকে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে আসে। এরপর টানা সাত বছর এই অবস্থান ধরে রেখেছে।

বুধবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর ) প্রকাশিত জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা ‘আঙ্কটাড’ প্রকাশিত ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এই তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সারাবিশ্বে প্রায় ৬ দশমিক ৩৪ মি- লিয়ন টন জাহাজ রিসাইকেল করা হয়। এর মধ্যে মোট জাহাজ রিসাইক্লিংয়ের ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্কে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত একাই বাজারের ৭৭ শতাংশের বেশি অংশ দখল করেছে।

বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে থেকে একাই ২ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন গ্রস টন জাহাজ রিসাইক্লিং করেছে, যা বৈশ্বিক মোট জাহাজ ভাঙার ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ। এরপর ভারত ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ, পাকিস্তান ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং তুরস্ক ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী স্ক্র্যাপিংয়ের পরিমাণ প্রায় একই রকম থাকলেও বাংলাদেশ কিছুটা কম জাহাজ স্ক্র্যাপ করেছে (২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৪২ মিলিয়ন গ্রস টন থেকে ২০২৪ সালে ২ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন এস টিন)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামীতে জাহাজ রিসাইক্লিং খাত কিছুটা চাপে পড়তে পারে, কারণ চলতি ২০২৫ সালের ২৬ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে হংকং কনভেনশন, যা পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ উপায়ে জাহাজ রিসাইক্লিং বাধ্যতামূলক করেছে। একসময় বৈশ্বিক জাহাজ ভাঙা শিল্পে বাংলাদেশের আধিপত্য থাকলেও এখন সেই অবস্থান হারাতে বসেছে।

উন্নত কমপ্লায়েন্স, ভালো দাম ও দ্রুত কার্যপ্রক্রিয়ার সুবাদে এই বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে নিচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের স্ক্র্যাপ জাহাজ গুলোর ব্যস্ততম গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। ভারতের ইয়ার্ডগুলো নিজেদের সুনাম বাড়াচ্ছে, পাকিস্তানে ফের গতি পাচ্ছে, আর মাত্র ১৪টি গ্রিন ইয়ার্ড নিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে ২৪ টি জাহাজ ভাঙার জন্য আনা হয়, যেখানে ভারতে আসে ২১টি ও পাকিস্তানে তিনটি। কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে এই সংখ্যা কমে ২২ টিতে দাঁড়ায়, অথচ ভারত ২১ টি জাহাজ নিয়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে এবং পাকিস্তানে সংখ্যা বেড়ে চারে দাঁড়ায়। ২৬ জুন হংকং কনভেনশন কার্যকর হওয়ার পর এই মন্দা আরও গভীর হয়।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সহ- সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা জাহাজ ভাঙা শিল্পকে কৌশলগত খাত হিসেবে দেখে কিনা। আমরা যদি গড়িমসি করতে থাকি, তাহলে বাংলাদেশ এমন এক শিল্প হারাবে যা কর্মসংস্থান, ইস্পাত ও বৈশ্বিক পরিচিতি এনে দিচ্ছে। গ্রিন শিপইয়ার্ড না বাড়লে আমাদের এই টানা শীর্ষ অবস্থানের ধারাবাহিকতা আর বজায় থাকবে না ।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জাহাজ আমদানি তীব্রভাবে কমে গেছে। জুনে ৯০ হাজার টন ওজনের সাতটি ও জুলাইয়ে ৮০ হাজার টন ওজনের আটটি জাহাজ আনা হলেও আগস্টে সীতাকুণ্ডে জাহাজ আমদানির জন্য নতুন কোন এনওসি দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;
আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন