নবম ওয়েজ বোর্ড: রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি ১৯ আগস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

নবম ওয়েজ বোর্ড: রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি ১৯ আগস্ট
নবম ওয়েজ বোর্ড: রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি ১৯ আগস্ট
সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশের ওপর হাই কোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি হবে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে।
 
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে ১৯ আগস্ট শুনানির জন্য রাখেন।
 
চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
 
অন্যদিকে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি হিসেবে রিটকারী দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন এ এফ হাসান আরিফ।
 
অমিত তালুকদার পরে বলেন, “চেম্বার বিচারপতি বলেছেন, তিনি এক সময় মতিউর রহমানের আইনজীবী ছিলেন। তাই আবেদনটি না শুনে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দিতে চাইলে দুই পক্ষই আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর জন্য বলে। পরে আদালত ১৯ আগস্ট তারিখ রেখে নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।”
 
মতিউর রহমানের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ৬ অগাস্ট ওয়েজবোর্ডের গেজেট প্রকাশের ওপর দুই মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে।
 
পাশাপাশি সেদিন একটি রুলও জারি করে হাই কোর্ট। শ্রম আইনের ১২৮ বিধি অনুযায়ী ‘অংশীজনদের আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে’ নবম ওয়েজবোর্ড চূড়ান্তকরণ এবং গেজেট জরির সুপারিশ করে তা সরকারের কছে পাঠানো কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
 
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য সচিব, শ্রম সচিব এবং নবম ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
 
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমবিধির ১২৮ বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ‘আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ না দিয়ে’ নবম ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যান একতরফাভাবে নবম ওয়েজবোর্ড চূড়ান্ত করেছেন; যা ‘কতৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি’।
 
“এজন্য নবম ওয়েজবোর্ড চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াটি একতরফা, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতমূলক। সুতরাং চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া গেজেট প্রকাশের অনুমতি দেওয়া যায় না।
 
“তাছাড়া ওয়েজবোর্ড সংক্রান্ত বিচারাধীন একটি রিট মামলায় জবাব না দিয়ে কমিটি মজুরি কাঠামোর সুপারিশ একতরফাভাবে চূড়ান্ত করে দিয়েছে যা আইন সমর্থন করে না। সুতরাং এটি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই করা হয়ছে বলে ঘোষণা করা উচিত।”
 
সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য গঠিত নবম মজুরি কাঠামো (ওয়েজ বোর্ড) কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বছরের ২ জুলাই রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।
 
তথ্য সচিব, শ্রম সচিব ও ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল, যা এখনও বিচারাধীন।
 
২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন।
 
দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গতবছর ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়।
 
পরে নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মতিউর রহমান গত বছরের মে মাসে এ রিট আবেদন করেন।
 
এরপর গতবছর ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়।
 
বিচারপতি নিজামুল হক গত ৪ নভেম্বর তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
 
ওই প্রতিবেদন গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে মন্ত্রিসভা তা পরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে ওই সময়কর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করে দেয়।
 
নতুন সরকার গঠনের পর গত ২১ জানুয়ারির মন্ত্রিসভা বৈঠকে আগের মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি করে সরকার।
 
গত ২৫ জুলাই ওই কমিটির এক বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নবম ওয়েজবার্ডের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই সুপারিশ এখন মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভার সম্মতি পেলেই তা গেজেড আকারে প্রকাশ করা হবে।
 
তবে মন্ত্রিসভা কমিটি গড়ে কত শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে- সে তথ্য সেদিন প্রকাশ করেননি ওবায়দুল কাদের।