চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কাস্টমসের হয়রানি, সবজি রপ্তানি বন্ধ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।
চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের কাস্টম্স ইউনিটে দায়িত্বরত এসিস্ট্যান্ট কমিশনার জয়নাল আবেদীনের হয়রানির অভিযোগ তুলে রপ্তানিকারকরা আজ (মঙ্গলবার) থেকে সবজি রপ্তানির সকল কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে । চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন প্রায় ১৫ টন সবজি রপ্তানি করে রপ্তানিকারকরা। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
রপ্তানিকারকরা জানান, বিমান চলাচল স্বাভাবিক থাকলে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়। সেসব দেশে সবজির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু রপ্তানিতে নানা জটিলতা ও হয়রানির কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন রপ্তানিকারকরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস এন্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপ্রোটার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান উদ্দিন রুবেল বলেন, ‘চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে কয়েক যুগ ধরে সবজি রপ্তানি হয়ে আসছে। সবজি রপ্তানির আগে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বিল অব এন্ট্রি করতে হয়। এরপর এটি বিমান বন্দরে সিভিল এভিয়েশন, বিমানের অথরিটি, কাস্টম্স কর্তৃপক্ষ, বিমানের সিকিউরিটি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে রপ্তানিকৃত সবজির পরিমাণ ও কার্টন নির্ধারণ করে আলাদা চার্জ ধার্য্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিমানে আগে থেকে রপ্তানিকৃত মালের নির্ধারিত বুকিং থাকলেও যাত্রার প্রারম্ভে অনেক ক্ষেত্রে বিমান কর্তৃপক্ষ রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এ সময় রপ্তানি পণ্য কয়েকটি বিমানে ভাগ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। বিমান বন্দর দিয়ে সবজি রপ্তানির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ম চলে আসছে। একই নিয়ম চলে ঢাকাসহ দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরেও। কিন্তু এ নিয়ম মানতে নারাজ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাস্টম্স ইউনিটে দায়িত্বরত এসিস্ট্যান্ট কমিশনার। তিনি বলে আসছেন- ‘সবজি রপ্তানির আগে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নির্ধারিত বিল অব এন্ট্রি অনুযায়ী রপ্তানিকৃত মাল বুকিং দিতে হবে। তাহলেই তিনি সংশ্লিষ্ট পেপারে স্বাক্ষর করবেন। এর ব্যত্যয় হলে তিনি স্বাক্ষর করবেন না। কাস্টমস এসিস্ট্যান্ট কমিশনারের এ ঘোষণায় বেকায়দায় পড়ে যান রপ্তানিকারকরা। তাই বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার (আজ) থেকে সবজি রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিতে হয়েছে।’
এই প্রসঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস এন্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপ্রোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা বলেন, ‘সবজি রপ্তানির ক্ষেত্রে এক দেশে দুই আইন থাকতে পারে না। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে যে নিয়মে সবজি রপ্তানি হচ্ছে, আমরাও চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে একই নিয়মে সবজি রপ্তানি করতে চাচ্ছি। কিন্তু চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের কাস্টম্স ইউনিটে দায়িত্বরত এসিস্ট্যান্ট কমিশনার সেই নিয়ম মানতে নারাজ। তাই আর্থিক ক্ষতির কারণে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার (আজ) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সবজি রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছি। চলমান সমস্যা নিরসনে মঙ্গলবার (আজ) আমরা কাস্টমস কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বৈঠক করবো।’
অন্যদিকে সবজি রপ্তানিকারকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিমান বন্দরের কাস্টম্স ইউনিটে দায়িত্বরত এসিস্ট্যান্ট কমিশনার জয়নাল আবেদীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আইন ও বিধি মোতাবেক সবজি রপ্তানি করতে রপ্তানিকারকদের বলেছি। সবজি রপ্তানিকালে কিছু অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি নিরসনের কথা বলেছি। এটি আমরা উভয় পক্ষ বসে সমাধান করতে পারি। কিন্তু রপ্তানিকারকরা তা না করে সবজি রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবজি ও মৌসুমী ফলমূল রপ্তানি হলেও চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইনে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে ওইসব দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে দেশি সবজি ও ফলমূলের চাহিদা বেশি। তাদের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১৫টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সবজি রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০ ধরনের তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে চাহিদা বেশি দেশি আলু, কচু, কচুর লতি, কচুর ফুল, কচুরমুখী, করোলা, তিত করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, বেগুন, ঝিঙ্গা, শসা, শিম বিচি ইত্যাদি সবজি। তাজা ফলমূলের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, লিচু, জলপাই, কালোজাম, আনারস, পানিফল, পান ইত্যাদি।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;