নিউ ইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন উদ্বোধন

আব্দুল হামিদ, নিউইয়র্ক ।।

নিউ ইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন উদ্বোধন
ছবিঃ সংগ্রহ

মানুষকে আকর্ষণ করার অসম্ভব এক ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন ‘হুমায়ূন আহমেদ । সেই ক্ষমতা তার লেখায়, তার ব্যক্তিত্বে। তিনি ছিলেন একজন জাদুকর। তিনি নেই, কিন্তু তার কাজে তিনি অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন’- নিউ ইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন উদ্বোধন করে এমনটাই বললেন বিশিষ্টজনেরা।

শনিবার নিউ ইয়র্কের পিএস ১৩১ এ দুইদিনের হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় দুপুর ১টায়। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় সন্ধ্যায়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। কথাসাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এছাড়া সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি চিফ মাহবুব হাসান সালেহ, নিউ ইয়র্কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।

 

 

লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিনের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়ক মেহের আফরোজ শাওন, সমন্বয়ক আলমগীর খান আলম এবং আহবায়ক ডা. সিনহা মনসুর।

বেলুন উড়িয়ে এবং ফিতা কেটে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পর্বে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ করে নিউ ইয়র্কে যখন হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা চলছিল, তখন তিনি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। সেই সময়ের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানুষটা ছিলেন বিনয়ী, রসিকতাও করতেন। তার কাজ চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে হুমায়ূন আহমেদকে।   

অন্য বক্তারাও হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে কথা বলেন। তারা বলেন, জনপ্রিয়তায় তিনি ছিলেন তুঙ্গস্পর্শী। সবসময়ই ছিলেন আগ্রহের কেন্দ্রস্থলে। উপন্যাস, ছোট গল্পে কেবল নয়, নাটক, সিনেমা কিংবা সঙ্গীত রচনায় হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন।

মানুষকে বই পড়তে শিখিয়েছেন তিনি। জ্যোৎস্না বন্দনা, বৃষ্টিকে ভালোবাসা, হাসি, কান্না এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যেন মনে হয়, তিনি সবার কথা বলছেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি যেন তার লেখা। লেখকের কাজকে অনুবাদ করে আগামী প্রজন্মের কাছে, বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা।

সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, গোটা বিশ্বে হুমায়ূনকে ছড়িয়ে দিতে এমন আয়োজন আরও করা হবে।

 

 

দুইদিনের এই সম্মেলনে ছিল প্রবাসীদের ঢল। শো টাইম মিউজিকের আয়োজন এবং হুমায়ূন আহমেদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সম্মেলনে একই সঙ্গে তারার হাটও বসেছিল। যোগ দিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় চরিত্ররা। স্মৃতিচারণ করেন জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীরা। ছিলেন লুৎফুন নাহার লতা, মাহফুজ আহমেদ, মীর সাব্বির, স্বাধীন খসরু, সালমা রোজী, তৃষ্ণা মাহমুদ, সিরাজুল কবির চৌধুরী কমল এবং শামীম শাহেদ।

দিনের মধ্যভাগে সম্মেলনটি শুরু হয় হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র ‘আমার আছে জল’ দেখানোর মধ্য দিয়ে। এরপর মঞ্জুর কাদেরের সঞ্চালনায় ছিল শিশুদের পর্ব। এতে ছিল হুমায়ূন আহমেদের ‘বোকাভূ’ বইটি থেকে শিশুদের পাঠ এবং চিত্র প্রদর্শনী। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন পূরবী বসু ও লুৎফর রহমান রিটন।

গোটা আয়োজন জুড়ে ছিল কয়েকটি সেমিনার। তার মধ্যে রয়েছে- ‘হুমায়ূন সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মননে হুমায়ূন আহমেদ এবং তার প্রভাব’, ‘হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যে নারী’। বিভিন্ন পর্যায়ে এসব আলোচনায় আরও অংশ নেন ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, বেলাল বেগ, হাসান ফেরদৌস, কৌশিক আহমেদ, ফাহিম রেজা নূর, মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, সেজান মাহমুদ, আনিস আহমেদ, মোশাররফ হোসেন, মুনিয়া মাহমুদ, রওশন হাসান প্রমুখ। ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলেবেলার দুই বন্ধু ফানসু মণ্ডল, হামিদ রেজা খান, সম্মেলনের সদস্য সচিব মিশুক সেলিম।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল হুমায়ূন আহমেদের মঞ্চনাটক ‘ঘটনা সামান্য’। এতে অভিনয় করেছেন কাজী খুরশিদ উজ জামান উৎপল, শিরিন বকুল, টনি ডায়েস, প্রিয়া ডায়েস, স্বাধীন খসরু, নাজিয়া জাহান এবং শাহ জুলফিকার। পরিচালনায় ছিলেন ফরহাদ হোসেন।

 

নৃত্যের মূর্ছনায় দর্শকদের মন ভরিয়ে তোলে শতদল, নৃত্যাঞ্জলি ও স্বরলিপি। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন মেহের আফরোজ শাওন, সেলিম চৌধুরী, শাহ মাহবুব, চন্দন চৌধুরী, কামরুজ্জামান বকুলসহ অনেকে। দুই দিনের আয়োজনটি পরিণত হয় হুমায়ূন ভক্তদের মহামিলনমেলায়। সম্মেলনে আসা ব্যক্তিরা বললেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে এমন অসাধারণ আয়োজন এর আগে হয়নি গোটা আমেরিকায়।