হানিকুইন আনারস থেকে তৈরি হচ্ছে ‘আনানাস’ চিপস

হানিকুইন আনারস থেকে তৈরি হচ্ছে ‘আনানাস’ চিপস

বিজয় ধর, রাঙামাটি ।। 

আনারসের রাজধানী খ্যাত রাঙামাটির নানিয়ারচরে এবার তৈরি হচ্ছে আনারসের চিপস। নানিয়ারচরের পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত হয় বিভিন্ন জাতের আনারস। এর মধ্যে সবচে বেশি উৎপাদন হয় হানিকুইন জাতের আনারস। পাহাড়ের এ আনারস দিয়ে বাংলাদেশে এই প্রথম উৎপাদন হচ্ছে আনারসের চিপস ‘আনানাস’।

সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, নানিয়ারচরের হর্টিকালচার সেন্টারের ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে আনারসের চিপস উৎপাদন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ চিপস তৈরি করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে সফলতা আসলে পরবর্তীতে বাজারজাত করা হবে। রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাঙামাটিতে ২১৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫৫ হাজার আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং নানিয়ারচরে সবেচেয়ে বেশি আনারস উৎপাদন হয়েছে।

নানিয়ারচরের কৃষক রিপন চাকমা জানান, আনারসের প্রচুর উৎপাদন হয় রাঙামাটিতে। এখানকার আনারস দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এরপরেও বেশিরভাগ সময় আমরা আনারসের ন্যায্য মূল্য পাই না। আশা করছি, এ চিপস কারখানার ফলে আমরা নানিয়ারচরের কৃষকরা ভাল দামে আনারস বিক্রি করতে পারবো।

রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, নিজেদের চেষ্টায় এবং বাংলাদেশে এটাই প্রথম আনারসের চিপস উৎপাদন কেন্দ্র। তিনি জানিয়েছেন, এটা পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছে। বাংলাদেশে এ প্রথম হানিকুইন জাতের আনারসের মাধ্যমে এবং কোন কেমিক্যাল ছাড়া এ চিপস উৎপাদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে প্রচুর আনারস উৎপাদন হয়। কিন্তু কৃষকরা সবসময় ভাল দাম পান না। তাই সারা বছর আনারসকে প্রক্রিয়াজাত করে যাতে চিপস তৈরি করা যায় এবং কৃষকরা লাভবান হন সে লক্ষ্যে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করা।

নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, আনারসের জন্য বিখ্যাত নানিয়ারচর উপজেলা। আমি আশা করব কৃষকরা যাতে আনারস বিক্রির মাধ্যমে তাদের ন্যায্যমূল্য পান এবং সরকারি -বেসরকারিভাবে লাভবান হন।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, নানিয়ারচর বিখ্যাত আনারসের জন্য। একসময় চাষিরা ক্ষেত থেকে আনারস উঠাতে চাইতেন না বাজারে দাম কম বলে। আমরা চিন্তা করলাম আনারসটাকে প্রক্রিয়া করে যদি চিপস আকারে নেয়া হয় তাহলে সবাই খেতে পারবে।

গত জানুয়ারি থেকে এ চিপস উৎপাদনের কাজ শুরু করেছি। ২০২৩ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে বলে জানান তিনি। যারা শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ী তারা যেন ভবিষ্যতে যেন এ ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে আমাদের প্রকল্প যখন একনেকে পাস হয় তখন আমরা একশ’ প্যাকেট আনারসের চিপস দিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী এটা পছন্দ করেছিলেন। তিনি বলেন, এটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে।

মাসুদ বলেন, এই চিপস তৈরিতে কিন্তু কোনো ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়নি। শুধুমাত্র আনারসকে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা হয়ছে। তিনি বলেন, পরবর্তী বছরে আমরা আম, কাঁঠালেরও আচার ও চিপস তৈরি করতে পারবো।

মেহেদী মাসুদ জানান, এ প্রকল্পের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মূলত তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে শুরু করলে লাভজনক এবং বিদেশে রপ্তানিও করতে পারবেন বলে মনে করেন এ প্রকল্প পরিচালক।

প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ আরো বলেন, ভবিষ্যতে নানিয়ারচরের এ চিপস উৎপাদন কেন্দ্রের মতো শিল্প গড়ে উঠলে বাংলাদেশে আরো নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

তিনি জানান, এখানে আনারসের চিপস তৈরির জন্য হানিকুইন আনারসটা খুবই উপযুক্ত। তিনি বলেন, আমরা মালয়েশিয়া থেকে এমডি-২ জাতের আনারসের চারা আনার চেষ্টা করছি সেটাও আমরা নানিয়ারচরে দিব। প্রথমে নানিয়ারচরে ৫ হাজার ও টাঙ্গাইলের মধুপুরে ১০ হাজার চারা চাষিদের বিনামূল্যে দেয়া হবে। এই জাতের আনারস সহজে পঁচে না। এটা অনেক পর্যন্ত দিন থাকে। এ আনারসের ফলন এখানে ভাল হলে বিদেশে রপ্তানিও করা যাবে।

ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, আনারস জলাবদ্ধতা পছন্দ করে না। পাহাড়গুলো হচ্ছে জীবন্ত। এখানকার মাটিতে পুষ্টি আছে। গাছ বেঁচে থাকার জন্য উপজীব্য এবং জীবন্ত পাহাড়ে আনারস ভালো হয়।