হাদিসটি যখনি পড়ি, তখনি চোখে অশ্রুর ফোটা টলমল করে।।।

হাদিসটি যখনি পড়ি, তখনি চোখে অশ্রুর ফোটা টলমল করে।।।

একটি_লাভজনক_ব্যবসা !
মদীনার বাগানগুলোর মধ্যে এক ইয়াতীম ছেলের একটি বাগান ছিল। তার বাগানের সাথে লাগোয়া বাগানের মালিক ছিলেন আবু লুবাবা নামের এক লোক। সেই ইয়াতীম ছেলেটি নিজের বাগান বরাবর একটি প্রাচীর দিতে গিয়ে দেখল, প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ সীমানার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। ছেলেটি তার প্রতিবেশীর কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বলে সীমানার খেজুর গাছটি কিনতে চাইলো যাতে প্রাচীরটি সোজা হয়। কিন্তু প্রতিবেশী আবু লুবাবা কোনভাবেই রাজী হচ্ছিল না।
কোন উপায় না পেয়ে সেই ইয়াতীম রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এর কাছে গিয়ে পুরো ঘটনা বুঝিয়ে বললো। আল্লাহর রাসুল ﷺ ডেকে পাঠালেন আবু লুবাবাকে। সে মসজিদে নববীতে আসলে নবী করীম ﷺ সেই খেজুর গাছটি অর্থের বিনিময়ে হলেও ইয়াতীম ছেলেটিকে দিয়ে দিতে অনুরোধ করলেন।
আবু লুবাবা যথারীতি রাজী হলো না। রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এক পর্যায়ে তাকে বললেন, "তোমার ভাইকে ওই খেজুর গাছটি দিয়ে দাও। আমি তোমার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছের জিম্মাদার হব।"
বিস্ময়কর হলেও আবু লুবাবা তারপরেও সেই খেজুর গাছ দিতে রাজী হলো না। রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এই পর্যায়ে চুপ হয়ে গেলেন। এর চেয়ে বেশী তিনি ﷺ তাকে আর কী বলতে পারেন!
উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে সাবিত (রাঃ)ও ছিলেন। তিনি আবু দাহদাহ নামে পরিচিত ছিলেন। মদীনায় তাঁর খুব সুন্দর একটি বাগান ছিল। প্রায় ৬০০ খেজুর গাছ ছাড়াও একটি মনোরম বাড়ি ও একটি পানির কুয়া ছিল সেখানে। মদীনার সব বড় ব্যবসায়ীদের কাছে আবু দাহদাহ (রাঃ) এর বাগানটি সুপরিচিত ছিল। তিনি স্বপরিবারে সেখানে বসবাসও করতেন।
আবু দাহদাহ (রাঃ) হঠাৎ রাসুলুল্লাহ্ ﷺ -এর কাছে গিয়ে বললেন, 'হে আল্লাহ্'র রাসুল ﷺ ! আমি যদি আবু লুবাবার কাছ থেকে ঐ খেজুর গাছটি কিনে এই ইয়াতীমকে দিয়ে দেই, তাহলে আমিও কি জান্নাতে একটি খেজুর গাছের মালিক হবো?' রাসুলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, "হ্যাঁ, তোমার জন্যও জান্নাতে খেজুর গাছ থাকবে।" আবু দাহদাহ (রাঃ) সাথে সাথে আবু লুবাবাকে বললেন, 'আপনি আমার সেই সম্পূর্ণ বাগানটি গ্রহণ করে সেই খেজুর গাছটি আমাকে দিয়ে দিন।'
আবু লুবাবা 'দুনিয়াবী' এই বিনিময় বিশ্বাস করতে পারছিল না! হুঁশ ফিরলেই সে বলল, 'হ্যাঁ আমি আপনার খেজুর গাছের বাগানটি গ্রহণ করলাম। বিনিময়ে আমার সেই খেজুর গাছটি আপনাকে দিয়ে দিলাম।'
হযরত আবু দাহদাহ (রাঃ) সেই মূহুর্তেই খেজুর গাছটি ইয়াতীম ছেলেটিকে উপহার হিসাবে দিয়ে দিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এর দিকে তাকিয়ে বললেন, 'হে রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ! এখন আমি কি জান্নাতে একটি খেজুর গাছের মালিক হলাম'? রাসুলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, "আবু দাহদাহ'র জন্য জান্নাতে এখন কত বিশাল বিশাল খেজুরের বাগান অপেক্ষা করছে।"
বর্ণনাকারী হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, এ কথাটি রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এক, দুই বা তিনবার বলেননি; বরং খুশী হয়ে বারবার বলেছেন।
শেষে আবু দাহদাহ (রাঃ) সেখান থেকে বের হয়ে সদ্য বিক্রি করে দেয়া সেই বাগানে ফিরে গেলেন। বাড়ির দরজায় এসে স্ত্রীকে ডাক দিলেন তিনি, 'হে উম্মে দাহদাহ! বাচ্চাদেরকে নিয়ে এ বাগান থেকে বের হয়ে আসো। আমি দুনিয়ার এই বাগান বিক্রি করে দিয়েছি'। তাঁর স্ত্রী বললেন, 'আপনি কার কাছে এটি বিক্রি করেছেন? কে কত দাম দিয়ে এটি কিনে নিয়েছে?'
আবু দাহদাহ (রাঃ) বললেন, 'আমি জান্নাতে একটি খেজুর বাগানের বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিয়েছি'। তাঁর স্ত্রী বললেন, 'আল্লাহু আকবার! হে আবু দাহদাহ! আপনি অবশ্যই অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা করেছেন'।
সুবহানাল্লাহ ' যেমন আল্লাহ রাসূলের আশেক ছিলেন প্রিয় নবীর (সাঃ ) সাহাবীগণ তেমনই আশেকে দিওয়ানা ছিলেন তাঁদের স্ত্রী গণ :সমস্ত দুনিয়া এক কথায় ছেড়ে দিয়ে হয়ে গেছেন বাদশা থেকে ভিখেরি -'পরকালের ভিখারি থেকে হয়েছেন বাদশা ' এরাই তো ছিলেন বুদ্ধিমান 'আল্লাহ আমাদের মনে তাঁদের মত সঠিক বুঝ দান করুন -আমিন "আমিন

[মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৫০৪; ইবনে হীব্বান, হাদীস ৭১৫৯; আস-সিলসিলা সাহীহাহ, হাদীস ২৯৬৪; মুস্তাদরাকে হাকীম, হাদীস ২১৯৪]