সারা দেশে আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৬৭ পরিবারকে প্রদানকৃত ‘ঈদ উপহার’ নিয়ে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ

সারা দেশে আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৬৭ পরিবারকে প্রদানকৃত ‘ঈদ উপহার’ নিয়ে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ
সারা দেশে আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৬৭ পরিবারকে প্রদানকৃত ‘ঈদ উপহার’ নিয়ে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

সারা দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা নিহত, গুম ও পঙ্গু হয়েছেন তাদের পরিবারকে এবারও ‘ঈদ উপহার’ দিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এ উপহার দেয়া হয়।

তবে মাত্র আড়াই হাজার টাকার উপহার নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হতাশা প্রকাশ করেছে। আবার টাকা ঠিকভাবে বণ্টন না করায় এবং মামলার আসামি ও সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের টাকা দেয়ায় জেলা নেতাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক স্থানে বিএনপির জেলা কমিটির নেতাদের বাদ দিয়ে অন্যদের দিয়ে উপহার দেয়া হয়েছে। এতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা ও বরিশালসহ বেশ কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, এ বছর সারা দেশে ৮৬৭ পরিবারকে ঈদ উপহার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ৩৩৩ জন, যুবদলের ২৫২ জন, ছাত্রদলের ২৩১ জন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের ৫১ জন রয়েছে। উপহারের টাকা বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ছাত্রদলের উপহার তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়া হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে নিজ জেলায় উপহার দেয়া হয়েছে। একইভাবে বিএনপি ও অন্যসব অঙ্গসংগঠনেরও জেলা নেতাদের মাধ্যমে উপহার দেয়ার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তবে যারা আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আবার কেউ গুম হয়েছিলেন তাদের বেশ কয়েকজনের নাম এ তালিকায় স্থান পায়নি। তাদের মধ্যে রয়েছেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নয়ন বাছার (পায়ে গুলিবিদ্ধ), একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মিরাজ (গুম থেকে ফিরেছেন)। ঢাকা মহানগরের এ রকম আরও কয়েকজন ঈদ উপহার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

টাকা দেয়ার নামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে অমানবিক আচরণ :

এক নেতা জানান, কুমিল্লার প্রত্যন্ত এলাকায় বিএনপির একটি নির্যাতিত পরিবার রয়েছে। সিএনজি ভাড়া করে কুমিল্লা সদর থেকে পরিবারের সদস্যকে ঈদ উপহার নিতে হয়েছে। টাকা হাতে পাওয়ার পর পরিবারটি কেঁদে ফেলেছে। বলেছেন, যাতায়াতের খরচের পর যা থাকবে সেই টাকা দিয়ে কী হবে? সাতক্ষীরায় বিএনপি নেতা অলি মোল্লা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। তার স্ত্রী গ্রাম থেকে ৪০০ টাকায় ভ্যান ভাড়া করে শ্যামনগর সদর থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়েছেন। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাতজন। নীলফামারীর বিএনপির নেতা গোলাম রাব্বানীও ক্রসফায়ারে নিহত হন। এভাবে তার স্ত্রীও টাকা পেয়েছেন।

নীলফামারীর এক বিএনপি নেতা বলেন, ঈদ উপহার দেয়ায় নামে তামাশা করা হয়েছে। এ টাকায় গোলাম রাব্বানীর ছয় সদস্যের পরিবারের কী হবে? তাও নেতারা টাকা দিতে গিয়ে ফটোসেশন করে তা ফেসবুকে দিচ্ছেন। পরিবারগুলোরও সম্মান আছে তা নেতারা একবারও চিন্তা করছেন না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, কত টাকা তা বড় কথা নয়। এটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঈদ উপহার। দলের নির্দেশনা ছিল নিহত, গুম, আহত ও পঙ্গু নেতাকর্মীদের বাড়িতে উপহার পৌঁছে দেয়া হবে। কিন্তু এক জায়গায় জড়ো করে ফটোসেশন করে দেয়াটা অবশ্যই ঠিক হয়নি।