সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ে

সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ে
সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ে

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ।।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড কুমিরায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এ সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল- মিটিং সম্পুর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আইআইইউসি কৃর্তপক্ষ।

আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা এগারোটায় ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম হলে এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

আইআইইউসি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর কে এম গোলাম মহিউদ্দিন এর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রেজিস্টার আবুল কাসেম। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর মোস্তফা মনির, ট্রেজারার আবদুল হামিদ, এবং সায়েন্স ফ্যাকাল্টি দেলোয়ার হোসেন।

লিখিতি বক্তব্যে আবুল কাসেম বলেন, বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় একটি বহুল নন্দিত এবং সফল উদ্যাগ এর নাম,যা জাতির জন্য ব্যাপক কল্যান বয়ে এনেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজট, অপরাজনীতি ও অপতৎপরতা মুক্ত উচ্চ শিক্ষা প্রদানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ সারাদেশে একটি বিপ্লব সাধন করেছে। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এই বিল্পবে প্রথম সারির অংশীদার। এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে অল্প সময়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি লাভ করে। বিগত ২৫ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটের শিকার হতে হয়নি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে নি। গুণগতমান ও নৈতিকতার সমন্বিত শিক্ষা প্রদানে সুদৃঢ় থাকায় আমরা কেবল সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে এই সামনে চলায় হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। আমাদের সন্তানতুল্য কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ছাত্রসুলভ নয় এমন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ডীন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট নানা অনৈতিক, অযৌক্তিক, অবৈধ ও অন্যায় দাবীর অভিযোগ আসতে থাকে। এসকল দাবীর মাঝে রয়েছে- ফেল করা ছাত্রকে পাশ করিয়ে দেয়া, বিরাট অঙ্কের বকেয়া টাকা মওকুফ করে দেয়া, নকলের অভিযোগে অভিযুক্তকে শাস্তির আওতামুক্ত করা, বকেয়া পরিশোধ না করে সনদপত্র উত্তোলন করতে চাওয়া, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিকট চাঁদা দাবী করা এবং পরীক্ষার হলে অনৈতিক সুবিধা দাবী করা ইত্যাদি।

নিয়মের পরিপন্থী এ সকল দাবী পুরণ করা সম্ভব না হলে তারা দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের নামে পেশী শক্তির মাধ্যমে দাবী আদায়ে অন্যায্য চাপ দিতে থাকে। একই সাথে তাদের কর্মকাণ্ডে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অনেক নজির ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে শিক্ষকবৃন্দের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন, পিতৃতুল্য শিক্ষকবৃন্দকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হেনস্থা করা, হুমকি দেয়া, অফিস কক্ষ ভাংচুর করা, শিক্ষকদের বাসভবনে বিশৃঙ্লা করা।

এছাড়া রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ অবস্থান, বহিরাগতদের আশ্রয় প্রদান, হল প্রশাসনের সাথে অসহযোগীতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ, ডাইনিং এ ফ্রি খাওয়া, ডাইনিং ম্যানেজারের নিকট হতে জোরপূর্বক টাকা ছিনতাই ইত্যাদি।

এছাড়া র‌্যাগিং এর নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং নেশাজাতীয় দ্রব্যের বহুল ব্যবহারের মতো গুরুতর অভিযোগ ও রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারী হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থীর উপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এই হৃদয় বিদারক ঘটনার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করে এবং তারা ক্লাস ছেড়ে প্রতিবাদে যোগ দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ শে জানুয়ারী জরুরী সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ এবং শ্রেণী কার্যক্রম অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিগত ৮ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি বক্তব্য উল্লেখ করেন, ” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসর ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাইলে সরকার তাতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না ” প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ১৮ এবং ধারা ৩৭ অনুযায়ী বিগত ২২৯ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুষ্ঠু ও সুন্দর শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সোমবার হতে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং ও সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জ্ঞানের চর্চা করুক ও প্রতিভার বিকাশ ঘটাক। আমাদের পরম স্নেহের সন্তানতুল্য ছাত্ররা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষায় জ্ঞানমখি হবে। ছাত্র হিসেবে মানানসই নয় এমন কর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যস্ত না করে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মহারথীদের কাতারে নিজেদের সামিল করতে প্রতিটি মুহূর্তেকে ব্যবহার করবে।