সীতাকুণ্ডের ওজন স্কেল, ব্যবসায়ীদের গলার ফাঁস

সীতাকুণ্ডের ওজন স্কেল, ব্যবসায়ীদের গলার ফাঁস
সীতাকুণ্ডের ওজন স্কেল, ব্যবসায়ীদের গলার ফাঁস

মেজবাহ খালেদ ।।

 

সারাদেশে মহাসড়ক আছে ৩৫টি। কিন্তু ওজন স্কেল আছে শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে। আর এই ওজন স্কেল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের এবং অন্যান্য ব্যাবসায়ীসহ যারা চট্টগ্রামের সাথে ব্যাবসায় জড়িত তাদের জন্য যেন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের মহাসড়কে ২০১৮ সালে ১৩ টন ওজনের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল চালু করা হয়। এর ফলে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে ওজন স্কেল না থাকায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হন। আগে প্রতি গাড়িতে ২০ থেকে ৩০ টন পণ্য আনা-নেয়া করা হলেও ওজন স্কেল চালুর পর এখন ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। মালামাল আনা নেওয়ায় দ্বিমুখী পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে খরচ বেশি পড়ায় চট্টগ্রামের মালামাল বাজারজাত করতে পাইকাররা আগ্রহ হারাচ্ছেন। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বেশি পণ্যবাহী গাড়ি আসা-যাওয়া করে। আবার চট্টগ্রামের ভারী শিল্পকারখানার উৎপাদিত পণ্যও সারাদেশে নেয়া হয় এই পথে। অবশ্য  ওজন স্কেল কার্যকরের দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগও আছে।  উৎকোচ দিলে অতিরিক্ত ওজনের পণ্যবাহী গাড়িও তারা যেতে দেয়।

 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল বিষয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেনএকদেশে দুই আইন চলতে পারে না। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্যই একটি পক্ষ এই ধরনের বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জানা উচিত। তাই আমরা ওজন স্কেল নিয়ে সোচ্চার হচ্ছি। কারণ এই স্কেলের কারণে চট্টগ্রামের বদনাম হচ্ছে। এই স্কেলের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের মংলা বন্দরবেনাপোল স্থলবন্দরসহ অনেকগুলো বন্দর রয়েছে। প্রতিটি বন্দর দিয়েই পণ্য আমদানি হয়। কিন্তু একমাত্র ভুক্তভোগী হলো চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এবং চট্টগ্রামের সাথে যারা ব্যবসা করেন তারা। তাই এবার ব্যবসায়ীরা এই ওজন স্কেল প্রত্যাহারের জন্য তীব্র আন্দোলন করবে।

 

এদিকে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যানট্রাক প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল চৌধুরী জাফর আহমদ বলেনআমরা চাই সব মহাসড়কেই ওজন স্কেল বসানো হোক। তাহলে বৈষম্য দূর হবে। বর্তমানে চট্টগ্রামের পরিবহন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেনতাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার ২৮টি মহাসড়কে ওজন স্কেল বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া একটি গাড়িতে কি পরিমাণ পণ্য বহন করা হচ্ছে একটি স্লিপ চালকের হাতে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত আছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও বৈষম্য কিছুটা নিরসন হত। কিন্তু তাও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

 

এবিষয়ে সীমা ষ্টীল রি - রোলিং মিলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দীন জানান, আগে আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বোচ্চ ২০/২৫ টন রড পাঠাতাম কিন্তু এখন ১৩ টনের বেশী রড পাঠাতে পারিনা কিন্তু গাড়ীভাড়া একই থেকে যাচ্ছে। যে কারণে রডের দাম বেড়ে যাচ্ছে ।  

 

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেনসীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাট এলাকায় গাড়ির ওজন পরিমাপক যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে আগে। এই স্কেলটি সরানোর দাবির মাঝেই ফৌজদারহাট এলাকায় আরও একটি স্কেল বসানোর পরিকল্পনা করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। একারণে দেশের অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;