শিল্পপতি নাসির উদ্দিনের ইন্তেকাল , প্রধানমন্ত্রীর শোক

শিল্পপতি নাসির উদ্দিনের ইন্তেকাল , প্রধানমন্ত্রীর শোক
শিল্পপতি নাসির উদ্দিনের ইন্তেকাল , প্রধানমন্ত্রীর শোক

পোস্টকার্ড ডেস্ক।।

প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের কর্ণধার বিশিষ্ট শিল্পপতি নাসির উদ্দিন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি….রাজিউন)। তিনি সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সলিমপুর গ্রামের মরহুম আবদুল জলিলের পুত্র।

সোমবার বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র, ভাই, ভাতিজাসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আগামী ২ মার্চ বুধবার তাঁর মরদেহ দেশে আনা হবে। ঐদিন সকাল সাড়ে ৯.৩০ মিনিটে ইপিজেডে তার প্রথম জানাজা, দ্বিতীয় জানাজা বাদে জোহর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদে ও বাদে আছর সীতাকুণ্ডের সলিমপুরস্থ নিজ বাড়িতে তার তৃতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

শিল্পপতি নাসির উদ্দিনের ইন্তেকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, দিদারুল আলম এমপি, এম এ লতিফ এমপি, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম, সাবেক চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছেনানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল প্রমুখ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শিল্পপতি নাসির উদ্দিন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ব্যবসায় সাফল্যর শিখরে থাকায় সাত বার পেয়েছেন পোশাক শিল্পের সবোচ্চ রপ্তানিকারক হিসাবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি। এছাড়া বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিকাশে বিশেষ অবদান রাখায় ২০০৬ সালে ‘বিজনেস অফ দ্যা ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত হন। অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থেকে তিনি সীতাকুণ্ডের অবহেলিত মানুষের সেবা করে গেছেন সুদীর্ঘকাল। তার প্রতিষ্ঠিত একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক অনুদানে বহু ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত আছেন।

জীবন বৃত্তান্ত : শিল্পপতি নাসির উদ্দীন ১৯৫০ সালের ৫ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সলিমপুর গ্রামের ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্নাতক পাস করার পর তিনি ১৯৭০ সালে পারিবারিক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি প্রথমে নতুন আঙ্গিকের ব্যবসা, স্টিল তৈরিকরণ, সিরামিক শিল্প এবং জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি এনজেডএন গার্মেন্টস, এনজেডএন ফ্যাশন অয়্যার এবং ডায়মন্ড ফ্যাশন অয়্যার (প্রা.) লিঃ নামে তিনটি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্থাপনের মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্পে পর্দাপণ করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি সিইপিজেডে প্যাসিফিক জিন্স লিঃ নামে অত্যাধুনিক তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের যোগ্যতা ও নেতৃত্ব গুণে তিনি সিইপিজেডে আরও ছয়টি শিল্প কারখানা স্থাপন করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্যাসিফিক জিন্স, জিন্স ২০০০, ইউনিভার্সেল জিন্স, প্যাসিফিক এক্সেসরিজ, এনএইচটি ফ্যাশনস এবং প্যাসিফিক ক্যাজুয়্যালস অত্যাধুনিক। বর্তমানে বিশ্বে ২৫টি দেশে এসব কারখানায় উৎপাদিত পোশাক রপ্তানি হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩৫ হাজার জনবল কর্মরত আছেন। তিনি বেপজিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালকসহ নানা শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংযুক্ত ছিলেন।

ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি সমাজসেবায় তিনি স্থাপন করেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। সীতাকুন্ড উপজেলায় শিক্ষার আলো বিকাশে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাঁর বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘লতিফপুর আলহাজ আবদুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়’ এবং মাতার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘আমেনা বিদ্যানিকেতন’। এছাড়া তিনি সীতাকুন্ডে নারী শিক্ষাকে বেগবান করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘হযরত কালুশাহ্ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ ও বাড়বকুন্ড স্কুল এন্ড কলেজ এর নতুন একাডেমিক ভবন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির , মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর এই সামাজিক দায়বদ্ধতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন’-যা সীতাকুন্ডবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের ইন্তেকালে আরো শোক প্রকাশ করেছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সম্মিলিত পরিষদ, চিটাগাং চেম্বার পরিচালকমণ্ডলীর পক্ষে সভাপতি মাহবুবুল আলম ও সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন, চিটাগাং উইম্যান চেম্বার পরিচালকমণ্ডলীর পক্ষে সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের ট্রেজারার ও বিজিএমইএ ফোরামের পার্টি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুস সালাম, বেপজিয়ার জোনাল প্রেসিডেন্ট খাজা মঈনুদ্দিন ফরহাদ, সেক্রেটারি আজিজুল বারী চৌধুরী জিন্নাহ, চট্টগ্রামের সভাপতি এরশাদ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি মজহারুল হক শাহ চৌধুরী, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম, পৌর মেয়র বদিউল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন ছাবেরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি, জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলশাদ, সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, শিল্পপতি নাসির উদ্দিন চিটাগাং চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরের পিতা, সীতাকুণ্ডের সাবেক সাংসদ মরহুম এবিএম আবুল কাসেমের ভাই ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুনের চাচা।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;