শব্দদূষণে ও বায়ু দদূষণে নগরবাসী নাকাল, আজ জরুরি সভা প্রতিকারে

শব্দদূষণে ও বায়ু দদূষণে নগরবাসী নাকাল, আজ জরুরি সভা প্রতিকারে

শাহনেওয়াজ ।।

চারিদিকে শব্দ আর শব্দ। আর এই শব্দ কখনও বিরক্তি ধরায়। আবার কখনও কান ঝালাপালা করে দেয়। বাসা থেকে পা বাড়ালেই , রাস্তায় বের হলেই নানা ধরনের শব্দ প্রতিনিয়ত শুনতেই হচ্ছে। কিন্তু এই শব্দ কখন যে নিজের অজান্তে কানের ভেতরে এক অজানা রোগের বাসা বাঁধছে অনেকে তা জানে, আবার অনেকে জানে না। এর মধ্য দিয়ে প্রতিদিনের জীবন চলছে। এই শব্দের সঙ্গে আরেক নীরব যন্ত্রণা বায়ুদূষণ, যা অনেক সময় চোখে দেখা যায় না। কিন্তু আঁচ করা যায়। যে কারণে মুখে মাস্ক ব্যবহার এখন বেড়ে গেছে। মাস্ক ব্যবহারের কারণ সম্পর্কে একাধিক ব্যবহারীকারী বলেছেন, চারদিকে ধুলা আর ধুলা। এই ধুলা কখনও কখনও ধূসর করে দেয় প্রকৃতিকে।

অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অর্থাৎ বায়ুমান সূচক। এখন ঢাকার অবস্থান বেশি ভালো নয়, যা অস্বাস্থ্যকর। বায়ুতে ক্ষুদ্র বস্তুকণা ও চার ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ পরিমাপ করে এই সূচক তৈরি করা হয় বলে জানা গেছে। আর সূচক অনুযায়ী ঢাকার অবস্থান ১৬৭। সংশ্লিষ্ট সূূত্রে জানা গেছে, বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে, পিএম ২.৫। এখন এই পিএম সহনীয় মাত্রায় নেই। এটি এখন চরম অস্বাস্থ্যকর। অতি ক্ষুদ্র কণা, যা সরাসরি নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করে। আর পিএমের ক্ষুদ্র কণাগুলো সাধারণ মানুষের নাকের লোমক‚পে কিছুটা আটকে যায়। অতি ক্ষুদ্র কণার কারণে মানুষের অ্যাজমা, ফুসফুস ক্যানসারসহ অনেক রোগ দেখা দিতে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।

বর্তমানে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। ঢাকার পর রয়েছে নেপাল। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলকাতা। বায়ুদূষণ পরীক্ষা করার জন্য ঢাকায় বেশ কয়েকটি এলাকায় পরিমাপ যন্ত্র রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু তা কতটুকু কার্যকর, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এই দূষণের জন্য ইটেরভাঁটা ৫০ শতাংশ দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্য বায়ুদূষণ হচ্ছে ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, জ্বালানি ও শিল্প বর্জ্যও বায়ুদূষণ করছে। ইতোমধ্যে এই শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও শব্দ আর বায়ুদূষণ কমছে না। তবে এই বায়ুদূষণ কিসে কমানো যায় তার প্রতিকার খুঁজতে আর পরিবেশ, বন ও জলবাযু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে শব্দদূষণ কমানোর জন্য বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, হাইড্রলিক হর্ন বন্ধ করা। এছাড়া স্থানভেদে শব্দের মান নিয়ন্ত্রণ করা। একই সঙ্গে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে পানি ছিটানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এসব প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে যেসব লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন তা অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে শব্দদূষণ প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার অংশীদারিত্ব রয়েছে। এককভাবে এই শব্দদূষণ রোধ করা সম্ভব নয়।

অন্যদিকে বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণের ব্যাপারে অনেকে তেমন সচেতন নয়। যে কারণে সচেতনতার কার্যক্রম চালানোর মতো তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ধুলায় ধূসর ঢাকা শহর হয়ে গেলেও, ধুলা নিবারণে কার কী ভ‚মিকা তা অনেকের অজানা। আজকের সভায় কার কী ভূমিকা তা নিয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে নির্দিষ্ট কর্মসূচি বেঁধে দেওয়া হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।