শত বছরের খাল ও সরকারি জমি দখল করে সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড নির্মাণ

শত বছরের খাল ও সরকারি জমি দখল করে  সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড নির্মাণ
শত বছরের খাল ও সরকারি জমি দখল করে সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড নির্মাণ

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।

শত বছরের পুরনো একটি খাল ভরাট ও বিপুল পরিমাণ সরকারি খাস জমি দখল করে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নির্মাণ করা হচ্ছে শিপইয়ার্ড। ইতোমধ্যে খালের মুখে সাগরপাড়ের স্লুইস গেটটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আশপাশের অন্তত ১০ টি গ্রামের মানুষ। পুরনো এই খালটির অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবেশকর্মীরা। শর্তভঙ্গের অভিযোগে জমির ইজারা ও ইয়ার্ডের অনুমতি বাতিলের আহবান জানিয়েছেন তারা।

উপজেলার উত্তর সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মাঝ বরাবর দুটি শাখা নিয়ে বয়ে গেছে কন্যা খাল। এই ইউনিয়নের রাজাপুর, আলোকদিয়া, জেলেপাড়া, কোর্টপাড়া ও লোহারপুলসহ সাগরপাড়ের অন্তত ১০ গ্রামের বৃষ্টির পানি নামার একমাত্র মাধ্যম এই খালটি। সাগরপাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় জোয়ারের পানি যাতে গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য খালটির মুখে একটি স্লুইচ গেটও নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সম্প্রতি খালটির পাশের একটি সরকারি জমিতে শিপ ব্রেকিংইয়ার্ড নির্মাণের শর্তে ইজারা নিয়েছে মহররম ইস্পাত নামের একটি কোম্পানী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজারা নেয়া ১০০ ফিট জমির বাইরে অন্তত আরো আড়াইশো ফুট জমি দখলে নিয়েছে কোম্পানীটি। এর মধ্যে ৩০ ফিট খালের জমিও রয়েছে। বিপুল পরিমাণ সরকারি জমি দখলে নেয়ার পাশাপাশি কন্যা খালের মুখটিও ভরাট করে ফেলেছে নির্মানাধীন ইয়ার্ডটির কর্তৃপক্ষ। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে স্লুইচ গেটটিও। এতে বর্ষায় জলাবদ্ধতার পাশাপাশি অমাবশ্যা পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে সমুদ্র উপকূলের গ্রামাঞ্চল।

গ্রামবাসী জানান, খালটি অবমুক্ত রাখতে ইয়ার্ডের মালিকের কাছে আকুতি জানিয়েও লাভ হয়নি। বরং প্রতিবাদী গ্রামবাসীর অন্তত ৩০ জনের নামে উল্টো মামলা করে হয়রানি করছেন মহররম ইস্পাতের মালিক কামাল পাশা।

জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের ওপর কাজ করা স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ইপসার চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী শাহীন জানান, সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট থেকে সোনাইছড়ি পর্যন্ত সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকাকে শিপ ব্রেকিং জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এরপর থেকে ইজারার মাধ্যমে শিপইয়ার্ডের অনুমতি দেয়া হলেও তাতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সরকারি খাল ও পাহাড়ি ছড়া রক্ষণাবেক্ষণের শর্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব শর্তভঙ্গ করায় মহররম ইস্পাতের ইজারা বাতিলের আহবান জানান মোহাম্মদ আলী শাহীন।

সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী মিল্টন রায় জানান, খালের জমি ও স্লুইচ গেইট রক্ষণাবেক্ষণের শর্তেই জমির ইজারা দেয়া হয়েছে কোম্পানীটিকে। শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

এদিতে অভিযুক্ত মহররম ইস্পাতের মালিক কামাল পাশার দাবি, খালের জমি ও স্লুইচ গেইট দখল করেননি তিনি। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে টাকা দিয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে ম্যানেজ করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে একটি মহল। সূত্র. পূর্বপশ্চিমবিডি