শেখ মুজিবুর রহমান থাকবেন ১০০ বছরের সেরা বাঙালি রাজনীতিকের তালিকায় পয়লা নম্বরে

শেখ মুজিবুর রহমান থাকবেন ১০০ বছরের সেরা বাঙালি রাজনীতিকের তালিকায় পয়লা নম্বরে
শেখ মুজিবুর রহমান থাকবেন ১০০ বছরের সেরা বাঙালি রাজনীতিকের তালিকায় পয়লা নম্বরে

সুমন ভট্টাচার্য।।

কেন মুজিব? কেন শতবর্ষে মুজিবকে স্মরণ? কেন এপারের চোখে মুজিব বইয়ের পরিকল্পনা এবং প্রকাশ? তিনি একমাত্র বাঙালি যিনি একটা রাষ্ট্র তৈরি করতে পেরেছেন । 

আমার মনে হয়, ইতিহাস এবং রাজনীতির একজন ছাত্র হিসেবে বিশ্বাসও করি, শুধু এই একটা কারণের জন্য আগামী ৫০০ বছরও ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷ বাঙালিকে জাতি হিসেবে আইডেন্টিটি দেওয়ার বা বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ সবচেয়ে জরুরি বিষয় ছিল৷

আজ থেকে দুই দশক আগে যখন আমি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করতাম, তখন সেই পত্রিকার মালিক এবং সম্পাদক গত ১০০ বছরের সেরা ৫ বাঙালি রাজনীতিকের নাম বাছতে বলেছিলেন৷ আমরা সাংবাদিকরা, বিভিন্ন বিভাগের সম্পাদকরা অনেক নাম বললেও উনি প্রথম যে দুজনের নাম বলেছিলেন, তা আমাদের অবাক করে দিয়েছিল৷ পয়লা নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমান ও দু নম্বরে চারু মজুমদার ৷ আজীবন নিজেকে বুর্জোয়া এবং দক্ষিণপন্থী বলে প্রচার করতে ব্যগ্র আমার প্রাক্তন সম্পাদকের বাছাইতে চারু মজুমদারের নাম থাকাটা খুব অবাক করেছিল৷ কিন্তু ওঁর যুক্তি খুব পরিষ্কার ছিল, নিজের রাজনৈতিক দর্শনের বিরোধী হলেও চারু মজুমদারের রাজনৈতিক চিন্তাধারা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিকে, বিভিন্ন রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করেছে৷ তাই চারু মজুমদার ২ নম্বরে থাকবেনই ৷ আর ১ নম্বরে মুজিব, বাঙালিকে রাষ্ট্র দেওয়ার জন্য৷

২০২০ তে দাঁড়িয়ে আমিও সেই রাজনৈতিক বিশ্লেষণে বিশ্বাস করি৷ গত ১০০ বছরের সেরা বাঙালি রাজনীতিকের তালিকায় পয়লা নম্বরে থাকবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর দু নম্বরে চারু মজুমদার৷ আমিও এতদিনে নিজেকে বুর্জোয়া বলে আইডেন্টিফাই করতে শিখে গেলেও তালিকায় বদল নেই৷

সেই বঙ্গবন্ধু মুজিবের জন্মশতবর্ষ ৷ বাংলাদেশে তাঁর জন্মশতবর্ষের মেগা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মার্চ থেকে করোনার দাপট সবকিছুকে পিছনে ঠেলে দেয়৷

করোনা না থাকলে হয়তো কলকাতাতেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে অনেক অনুষ্ঠান হতো, কিছু স্মরণিকাও বেরোতো ৷ কিন্তু ভাইরাস আমাদেরকে থ্রি ইডিয়টস এর ভয়াবহ জীবনে ঠেলে দেওয়ার পর সেইসব কিছুই কল্লোলিনী তিলোত্তমা করে দেখাতে পারেনি৷ সেই পরিস্থিতিতে আমাদের মনে হল এমন একটা সংকলন করা যাক যা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন এবং কাজের বিভিন্ন দিককে বিশ্লেষণ করে৷ কিন্তু ঢাকায় যেহেতু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক বই বেরোবে, সেহেতু আমাদের সংকলনের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও গবেষকদের বাদ দিয়ে এপারের বিশিষ্ট লেখকদের দিয়ে মালা গাঁথা৷

সুখের কথা, ভারতবর্ষে যে সব লেখকদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশই সাড়া দিলেন৷ রাজ্যের মন্ত্রী হোন কিংবা দিল্লির সাংসদ, সেলিব্রিটি গায়ক হোন কিংবা কূটনীতিক, সবাই চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যেও লেখা পাঠালেন৷ অনেক গবেষক একটা ভাল লেখা দেওয়ার জন্য তিনবার খসড়া তৈরি করার পর চূড়ান্ত করেছেন৷ এরা সবাই সাহায্য না করলে ৪১ জনের লেখা নিয়ে সংকলন বার করা অসম্ভব ছিল৷

জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক, কিন্তু এখন প্রবাসে থাকেন এমন পাঁচজন বিশিষ্ট মানুষকে লিখতে অনুরোধ করলাম । প্যারিস প্রবাসী মূকাভিনেতা পার্থপ্রতিম মজুমদার, ওয়াশিংটন প্রবাসী সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিস আহমেদ, অস্ট্রেলিয়া নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আহসান খান, শহিদ বুদ্ধিজীবীর পু্ত্র ও নিউইয়র্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক তৌহিদ রেজা নুর এবং মস্কোতে ১০ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থাকা সাইফুল হক৷ এদের প্রত্যেকের বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে অনেক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশ নিয়ে প্রগাঢ় জ্ঞান লেখাগুলোকে অন্য মাত্রা দিল৷ 

সংকলনের কলেবর এবং গুণগত উৎকর্ষতা কোথায় পৌছচ্ছে তার সম্পর্কে কিছুটা আন্দাজ পাওয়ার পরে বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রকাশক, লেখক ও সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম৷ তিনি আমাদের পরিকল্পনা শুনে যৌথ প্রকাশনার বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন ৷

১৬ ডিসেম্বরের আগে বইটা বার করব, এই টা মাথায় ঢুকে গিয়েছিল অনেক কারণে ৷ দিনটা তো শুধু বাংলাদেশের বিজয়দিবস নয়, বঙ্গবন্ধুর হাতে জিন্নার দ্বিজাতিতত্ব উড়ে যাওয়ার দিন এবং একইসঙ্গে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানচিত্র বদলে যাওয়ার দিন ৷ ভারতের রাষ্ট্র হিসেবে, এশীয় শক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার মাইলফলকের দিন৷

সুত্র. খাসখবর