শেখ হাসিনা কথা রেখেছেন, বিস্ময়কর সাফল্যে এখন বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা কথা রেখেছেন, বিস্ময়কর সাফল্যে এখন বাংলাদেশ
শেখ হাসিনা কথা রেখেছেন, বিস্ময়কর সাফল্যে এখন বাংলাদেশ

আসাদুজ্জামান আজম ও বেলাল হোসেন ।।

বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আকাশচুম্বি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা আর অগ্রগতির নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করে সাফল্যের এক যুগ পূর্ণ করেছে ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুকরণীয় নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই সরকারে থাকা এবং উন্নয়নমুখী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অদম্যগতিতে এগিয়ে চলছে।

২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে সরকার। এরপর ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাষ্ট্রক্ষমতায় টানা ১২ বছর পূর্ণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ। এরপর ২৩ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার দায়িত্বভার গ্রহণ করে শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে নির্বাচনি ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের স্লোগান ছিলো ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এতে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা দেয়া হয়। প্রতিটি ইশতেহারে গণতন্ত্র, ক্ষমতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক নির্মূলের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায়। ২০০৮ সালে ১২ ডিসেম্বর ‘দিনবদলের সনদ’ শিরোনামে দলের নির্বাচনি ইশতেহার তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

ওই ইশতেহারে ‘রূপকল্প ২০২১’ শিরোনামে বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যে এটা বাস্তবায়নই ছিলো আওয়ামী লীগের প্রধান নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি।

২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে ১০০ বছর মেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান’।

কথা রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১২ বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য কুড়িয়েছে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সেবা, মাথাপিছু আয়, হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের বদৌলতে পাল্টে গেছে জীবনমান। বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের শেষ প্রান্তে রয়েছে।

২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এরপর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। এখন পর্যন্ত এই ১০ বছরে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে মোট ৩৫টি যুদ্ধাপরাধ মামলার নিষ্পত্তি করেছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর শুধু রায় নয়, আপিল পেরিয়ে মোট সাতটি যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। গত ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতোই চ্যালেঞ্জ নিয়েই ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্র সীমানার বিরোধেরও নিষ্পত্তি করে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পায়। এটা ছিলো শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার ফসল।

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ২০০৯ সালে সরকারে আসে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্রে বিস্তর ফারাক। গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নেও বিশ্বের রোল মডেল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো তিন হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিলো চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমান সরকারের এক যুগে ২০২০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিলো ৪২টি। ২০০৯ সালে আরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র হয় ২৭টি। ২০১৮ সালে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা হয় ১২৩টি।

বর্তমানে ২০২০ সালে এর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মোট ১৪০টিতে। ২০০৬ সালে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিলো ১৭৬ কিলোওয়াট/ঘণ্টা। ২০০৯ সালে ছিলো ২২০ কিলোওয়াট। ২০১৮ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৪৬৪ কিলোওয়াট। বর্তমানে ২০২০ সালে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়ায় ৫১২ কিলোওয়াট/ঘণ্টা। ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ আওতাধীন জনগোষ্ঠী ছিলো ৩৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশে। ২০১৮ সালে ছিলো ৯৫ শতাংশ। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ শতাংশে।

২০০৬ সালে কৃষিতে কোনো ভর্তুকি দেয়া হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়। তা ২০১৮ সালে এসে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা।

বর্তমান সরকারের এক যুগে বিগত ২০২০ সালে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রদান করে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে রপ্তানি আয় ১.০৫ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালে রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ১.২৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে রপ্তানি আয় হয় ৪১.১ বিলিয়ন ডলার। টানা একযুগ পূর্তিতে ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০০৬ সালে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ছিলো ২০০ টাকা। ২০০৯ সালে তা এসে দাঁড়ায় ২৫০ টাকায়। বর্তমানে ২০২০ সালে ভাতার পরিমাণ বেড়ে হয় ৫০০ টাকা।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে অতি দারিদ্যের হার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে ছিলো ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৮ সালে কমে তা ১১ দশমিক ৩ শতাংশে আসে। বর্তমান ২০২০ সালের তথ্য চিত্র অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।  

২০০৬ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিলো ৪৫ দশমিক ৬ কোটি ডলার। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে ছিলো ৯৬ দশমিক এক কোটি ডলার। ২০১৮ তা বেড়ে ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তিতে এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের বছর ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৮ সালে হয় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আজ একযুগ পূর্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ০৯ ডলার।

২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৬০ মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে আয় ছিলো ৭১০ ডলার। ২০১৮ সালে তা এসে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৫২ ডলারে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। ২০০৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছিলো ৫০০ টাকা। ২০০৯ সালে দেয়া হয় ৯০০ টাকা করে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা। বিএনপি-জামায়াত সরকারের ২০০৬ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ৯১তম। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০০৯ সালে ৯৩তম হয়। ২০১৮ সালে এর অবস্থান হয় ৪৭তম। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের একযুগ পূর্তিতে এখন বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম।

উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের বছর ২০০৯ সালে ৩৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ছিলো ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমানে সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা এসে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। ২০০৬ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয় ৪৫ দশমিক ৬ কোটি ডলার। ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ দশমিক ১ শতাংশে। ২০১৮ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয় ৩০০ কোটি ডলার। সর্বশেষ বর্তমান সরকারের আমলে ২০২০ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের বছরে ২০০৬ সালে খাদ্য উৎপাদন ছিলো ২৭২ লাখ মেট্রিক টন।

আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের বছর ২০০৯ সালে খাদ্য উৎপাদন ছিলো ৩৭৪ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৮ সালে ছিলো ৪০০ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে খাদ্য উৎপাদন হয় ৪০০ লাখ মেট্রিক টন।

২০০৬ সালে রপ্তানি আয় ছিলো ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের ২০০৯ সালে ছিলো এক দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে রপ্তানি আয় হয় ৪১ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা এসে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে। ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের বছর ২০০৯ সালে রিজার্ভ ছিলো এক বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে রির্জাভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ০৯ ডলারে।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিলো ৬৫ দশমিক ৪ বছর। ২০০৯ সালে গড় আয়ু হয় ৬৬ দশমিক ৮ বছর। ২০১৮ সালে ছিলো ৭২ দশমিক এক বছর। আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়ায় ৭২ দশমিক ৬ বছর। ২০০৬ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের বছর ২০০৯ সালে তা ছিলো ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। একযুগ পূর্তিতে এখন প্রবৃদ্ধি এসে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছিলো ৪ মাস। ২০০৯ সালেও ছিলো ৪ মাস। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ মাস।

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েও বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। করোনা মাহামারির কারণে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও এখন পুরোদমে এগিয়ে আনা হচ্ছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনি ইশতেহারের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ।

ক্ষমতায় আসার পরই পদ্মা সেতু নির্মাণকে অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে শেখ হাসিনা সরকার। নানা ষড়যন্ত্র ও দেশ-বিদেশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে।

গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ সুগম হয়েছে। চলছে রেল সংযোগের কাজও। গত ১২ মার্চ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের নকশাও করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। এই এক্সপ্রেসওয়েটি এশীয় মহাসড়কের অংশ। এত গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হয়েছে আটটি পথ।

আগামী ২০ বছরের ক্রমবর্ধমান যান চলাচলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩১ শতাংশের বেশি ভৌতকাজ এ পর্যন্ত শেষ হয়েছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু করার নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে কাজ। এমআরটি-৬ নামের এ প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার অংশ পর্যন্ত ২০২১ সাল এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ছিলো।

গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আগের বছরের নভেম্বরে সার্বিক অগ্রগতি ছিলো ৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর এ বছরের জানুয়ারিতে ৪০ দশমিক ৩৬ শতাংশ কাজ এগিয়েছিল।  ‘ওয়ান সিটি-টু টাউন’ মডেলে চট্টগ্রাম শহরের সাথে আনোয়ারাকে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হচ্ছে সাড়ে তিন কিলোমিটারের সুড়ঙ্গপথ। চীনা অর্থায়নে চলমান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬১ শতাংশ।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক যুগে নবপরিচয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয় গত ডিসেম্বরে। এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতিবছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে ১০ বছর ধরে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে সরকার। গত ১ জানুয়ারি সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে। গত ১১ বছরে ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৬টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এবারের বই বিতরণ শেষ হলে সর্বমোট ৪০১ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮টি বই বিতরণ করা হবে।

মুজিববর্ষ ও করোনা সংকট : এক যুগ ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় বর্তমান সরকারের সবচে বড় চ্যালেঞ্জের বছর ছিলো বিদায়ী ২০২০ সাল। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে দেশব্যাপী উৎসবমুখর কর্মসূচি নেয়া হলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা সবকিছু থমকে দেয়, বড় ধরনের ধাক্কায় পড়ে সরকার। উৎসবের বছর পরিণত হয় আতঙ্ক আর হতাশায়।

২০২০ সালের শুরুতেই সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশে যখন করোনাসংকটে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তখন তা মোকাবিলায় দ্রুত নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ এড়াতে মুজিববর্ষে বছর ব্যাপী নেয়া কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনে সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এবং মানুষের যেনো কষ্ট না হয় সেজন্য জনসমাগম সম্পৃক্ত অনুষ্ঠান পরিহার করার সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানমালায় ভিন্নতা এনে জোর দেয়া হয় নাগরিক সেবা নিশ্চিতের। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও মুজিববর্ষ আরও এক বছর বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত এসেছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ১৪ হাজার বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে মুক্তিযোদ্ধাদের। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে এসব বাড়ি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।

করোনাকালীন সময়ে সরকারের দেয়া সহায়তা সরাসরি পেয়েছে অন্তত সাত কোটি মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নেয়া হয়েছে পদক্ষেপ। কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা সহজ ও দ্রুত করতে পরীক্ষাকেন্দ্র বৃদ্ধির কাজ করছে সরকার। বর্তমানে দেশের ৬৮টি স্থানে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় ১০ হাজার ৫০টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৬২৫ জন চিকিৎসক, এক হাজার ৩১৪ জন নার্স এবং ৫০০টি প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের। এছাড়া কোভিড-১৯ বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন ১০ হাজার ৮১২ জন চিকিৎসক। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের সূত্রমতে ডাক্তার ও চিকিৎসা সেবাদানকারীদেরর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার পিপিই, গাউন, সু প্রটেক্টর, এপ্রোন ইত্যাদি বিতরণ করছে।

যেসব পেশার ব্যক্তিরা এই সংকট মোকাবিলায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে থেকে কাজ করছেন তাদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে খেটে খাওয়া, হতদরিদ্র ও ভাসমান মানুষরা। এদের কথা মাথায় রেখে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নেয়। সারা দেশে নিম্ন আয়ের মানুষদের ১০ টাকা কেজি দরে ৯০ হাজার টন চাল দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেয়া হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সারা দেশে অতিরিক্ত ১৩.৭৫ কোটি টাকা ও ২৩ হাজার টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এসব চাল ও টাকা ত্রাণ হিসেবে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। গত জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন এবং বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ১৯৩ মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা এক কোটি ৩৪ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪টি এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা ছয় কোটি তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৮২ জন। নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ১২২ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা। এর মধ্যে জি আর নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮১ কোটি ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা এবং বিতরণ করা হয়েছে ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ২৭১ টাকা। এতে উপকারভোগীর পরিবার সংখ্যা ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৪টি এবং উপকারভোগী লোক সংখ্যা তিন কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার ৮৫৮ জন। শিশুখাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ ২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ১৮ কোটি আট লাখ ৬৫ হাজার ২২০ টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ৭৭৯টি এবং লোক সংখ্যা ১২ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৯ জন।

সরকারের পাশাপাশি সারা দেশে বছরজুড়েই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কর্মহীন, দুস্থ, অসহায় মানুষের সহায়তা দিয়েছে।

দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আসার পরপরই সারা দেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। করোনায় সারা দেশে দলীয়ভাবে এক কোটি ২৫ লাখ আট হাজার ৮১ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয় ১০ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। পিপিই, চশমা, মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস, ফিনাইল, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, ব্লিচিং পাউডার, স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করা হয়। গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি সারা দেশে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করেন। অনেক স্থানে সবজি, ফল ও দুধ বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে।

রোহিঙ্গা সংকট : মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট যেসব রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তে ভিড় করেছিল, মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে বিশ্বমানবতার বিবেক হিসেবে প্রশংসা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন সময় প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে এসেছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, কুতুপালংসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের নিরাপদ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ সরকার। আধুনিক সুবিধাসম্বলিত একটি সিটি গড়ে তোলা হয়েছে ভাসানচরে। শরণার্থীদের সহায়তায় বিশ্বের বুকে এটি অনন্য দৃষ্টান্ত। চারপাশে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ মানুষের আবাসনের জন্য এটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ভাসানচরে আধুনিক সুযোগসম্বলিত আবাসনব্যবস্থার পাশাপাশি আরও রয়েছে সাইক্লোন সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার, মসজিদ, পুলিশ স্টেশন এবং ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা। এছাড়াও এখানে রয়েছে শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার, এতিমখানা এবং সুপার শপ। এদিকে রোহিঙ্গাদের জীবনমান পর্যবেক্ষণ ও তাদের সহায়তার জন্য সরকারের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন এনজিওর অফিসও করা হয়েছে ভাসানচরে।

আগামী দিনে পদ্মা সেতুর দুপাড়ে সিঙ্গাপুরের আদলে শিল্পনগরী গড়ে তোলা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পকে গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি গুচ্ছশিল্প কাঠামোয় সংযুক্ত করা, ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড রিংরোড এবং ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণ করা, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এক্সপ্রেসওয়ে রেললাইন নির্মাণ করা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা এবং কলকাতা পর্যন্ত বুলেট ট্রেন সার্ভিস সম্প্রসারণ করা, ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, বাগেরহাটে খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ অগ্রাধিকার ভিক্তিতে শেষ করা, কক্সবাজারে সুপিরিয়র বিমান অবতরণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা, ঢাকায় পাতাল রেল, মেট্রোরেল, সার্কুলার রেলপথ এবং নব্য ও প্রশস্ত নৌপথ নির্মাণ করা, ৫ বছরে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা, ঢাকার আশপাশের চার নদীকে দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলাসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশকে ঈর্ষান্বিত সাফল্য এনে দেয়ায় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা কুড়িয়েছেন বেশকিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে শিক্ষা খাতের উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ সম্মাননা, ২০১৫ সালে দারিদ্র্যবিমোচনে ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’, পরিবেশ রক্ষা জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার, আইসিটি খাতের উন্নয়নের জন্য ‘আইটিইউ অ্যাওয়ার্ড’, ২০১৬ সালে জাতিসংঘের ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’, ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কার, ২০১৮ সালে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং মানবতায় দৃষ্টান্ত দেখিয়ে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।