মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক যেন এক মায়াজাল

মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক যেন এক মায়াজাল
মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক যেন এক মায়াজাল

।।

এক মায়াজাল যেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক । এ লেকে একবার যিনি আসবেন বারবার আসতে চাইবেন তিনি। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি পুরো এলাকাটি। লেকের স্বচ্ছ নীলাভ জল, চারপাশের সবুজের চাদর আর সুনসান নীরবতায় হারিয়ে যেতে চায় যে কেউই। এমন পরিবেশে পর্যটক টানতে নতুনভাবে যোগ হয়েছে কায়াকিং অ্যাডভেঞ্চার।

চারদিকে সবুজের চাদরে মোড়ানো অথৈ জলে নিজেই চালাবেন নৌকা। এমন অ্যাডভেঞ্চার নিশ্চয়ই কেউ মিস করতে চাইবেন না। আর সে কারণেই মহামায়া কায়াকিং পয়েন্টে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। প্রতিদিন কায়াকিং করছেন শতাধিক দর্শনার্থী।

মহামায়া কায়াকিং পয়েন্টের পরিচালক মামুনুর রশিদ রানা বলেন, ‘বাংলাদেশে কাপ্তাইয়ের পরে এখানেই আছে কায়াক নৌকা। আর কোথাও এমন অ্যাডভেঞ্চার নেওয়ার সুযোগ নেই যাত্রীদের। মহামায়ার কায়াকগুলো অন্য স্থান থেকে আরও উন্নত ও নিরাপদ। এ লেকে রয়েছে ১৬টি কায়াক। এগুলো আমদানি করা হয়েছে ব্রাজিল থেকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি কায়াকিং (নৌকা) প্রতি ঘন্টায় ৩০০ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা ছাড় দেওয়া হয়। তবে রয়েছে নির্ধারিত সীমানা রেখা। এর বাইরে গেলে পর্যটকদের গুণতে হয় ১ হাজার টাকা জরিমানা।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মহামায়া প্রকল্পটি ইজারা নেয় হেলাল উদ্দিনের মালিকানাধীন ক্রিয়েটিভ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রকল্পে নিরাপত্তা জোরদার ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন।

এ প্রতিষ্ঠানের অংশীদার আরিফ মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম এ লেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনসারের জন্য আবেদন করেছি। এছাড়া পুলিশ প্রশাসন আমাদের সব সময় সহযোগিতা করছে। আমরা পরিবেশবান্ধব কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। দেশে কাপ্তাই লেকের পর মহামায়াতেই কেবল কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কায়াকিংয়ে বেশ আগ্রহী।’

কায়াকিং করতে আসা দর্শনার্থী এমিল, জিকু, জিসান, সৌরভ ও আফজালের সাথে কথা হলে তারা জানান, নিজ হাতে নৌকা চালিয়ে পাহাড় আর সুবজের নীলাভ জলের বুক চিরে ইচ্ছেমতো ঘুরতে দারুণ লাগে।

আরেক দর্শনার্থী রবিন বলেন, ‘কায়াকিং পয়েন্টের লোকেরাই শিখিয়ে দেয় কিভাবে কায়াকিং করতে হয়। এ কারণে নৌকা চালাতে তেমন বেগ পেতে হয় না। বিষয়টাতে দারুণ অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে।’

মহামায়া লেক
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হৃদ মহামায়া। ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ লেকটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে ১ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আঁকাবাঁকা অপরূপ লেকটি ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত। এ লেকের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে পাহাড়ি ঝরনা। স্বচ্ছ পানির জলাধারের চারপাশ সবুজ চাদরে মোড়ানো। পিকনিকের জন্যও মহামায়া দারুণ একটা জায়গা। এখানে এসে রান্না-বান্না করে খাওয়ারও সুযোগ রয়েছে।

যেতে হবে যেভাবে
ঢাকা-চট্টগ্রামের যে কেনো বাসে করে সরাসরি নামতে হবে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি এলাকায়। সেখান থেকে রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সাযোগে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছা যাবে মহামায়ায়।

দিনে এসে দিনে ফেরা
লেকে ঘুরতে এসে দিন শেষে ফিরে গেলেই ভালো। কারণ মিরসরাইতে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। থাকতে হবে চট্টগ্রাম শহরে। শহরের প্রবেশমুখে একে খান মোড়ে রয়েছে মায়াবী রিসোর্ট ও অলংকার মোড়ে রয়েছে রোজভিউ আবাসিক হোটেল। মহামায়া প্রকল্প থেকে শহরের প্রবেশ মুখে ঢুকতে সময় লাগে ৫০ থেকে ৫৫ মিনিট।