ভারতীয় পুলিশের গুলি চালানোর কথা স্বীকার

ভারতীয় পুলিশের গুলি চালানোর কথা স্বীকার
ভারতীয় পুলিশের গুলি চালানোর কথা স্বীকার

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

ভারতজুড়ে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দীর্ঘ এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৫ জনেরও বেশি নিহতের খবর দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম। এদিকে  চলমান বিক্ষোভে গুলি চালানোর কথা প্রথম বারের মতো স্বীকার করেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ পুলিশ। এই বিক্ষোভে রাজ্যটিতে ১৫ জন নিহত হয়েছে। এদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও রাজ্য পুলিশের দাবি ছিলো তাদের তরফে একটি গুলিও ছোড়া হয়নি। তবে উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা বিজনর পুলিশ সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেছেন, ওই শহরে নিহত দুই জনের এক জন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা পুলিশ প্রধান।

 
গত ১২ ডিসেম্বর ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পর থেকেই দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছে। এসব বিক্ষোভে সহিংসতায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু উত্তর প্রদেশেই নিহত হয়েছে ১৫ জন। গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজ্যটিতে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিনের বিক্ষোভে বিজনরে নিহতদের মধ্যে ছিল সুলেমান নামে ২০ বছরের এক তরুণ।

বিজনর জেলা পুলিশের প্রধান সঞ্জিব ত্যাগী বলেন, আত্মরক্ষার্থে সুলেমানকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এক কনস্টেবল। তিনি বলেন, ‘ছিনিয়ে নেওয়া একটি বন্দুক কেড়ে নিতে আমাদের এক কনস্টেবল বিক্ষোভকারীদের দিকে এগিয়ে গেলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তার পালানোর উপায় ছিলো না। আত্মরক্ষার্থে দাঙ্গাকারীকে গুলি করা হয়। তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে যায়। তার নাম সুলেমান পরে সে মারা যায়। আরেক বিক্ষোভকারী আনিস, ভিড়ের মধ্য থেকে ছোঁড়া গুলিতে নিহত হয়’।

শুক্রবারের ওই বিক্ষোভে হতাহতের পর শনিবার (২১ ডিসেম্বর) উত্তর প্রদেশ রাজ্য পুলিশের প্রধান ওপি সিং দাবি করেন, আমরা একটা গুলিও ছুড়িনি। তিনি বলেন, কেবলমাত্র বিক্ষোভকারীরাই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। গুলিতে বেশ কয়েকজন পুলিশও আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে নিহত সুলেমানের ভাই শোয়েব মালিক বলেন, ‘আমার ভাই নামাজ পড়তে গিয়েছিল। নামাজ শেষে খাওয়ার জন্য বাড়ি ফিরছিল। গত কয়েক দিন ধরে তার জ্বর ছিল। আমাদের বাড়ির কাছে মসজিদে সে যায় না। দূরে আরেকটা মসজিদে যেত। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরই পুলিশ লাঠি চার্জ ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। পুলিশ তাকে আটকের পর গুলি করে’। বিক্ষোভের সঙ্গে সুলেমানের সংশ্লিষ্টতা ছিলো না দাবি করে তিনি বলেন, আমার ভাই সরকারি চাকুরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এখন পুলিশ তাদের ভয় দেখাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

রবিবার এক অনির্ধারিত সফরে উত্তর প্রদেশের বিজনরে যান কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা গান্ধী। তিনি সুলেমান ও আনিসের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ধর্মীয় বিবেচনায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেবে। সরকার বলছে, এসব অমুসলিম ওই দেশগুলোতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে এসেছে। সমালোচকরা বলছেন, মুসলিমবিরোধী এই আইন ভারতের নিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ভারতীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর গত ১১ ডিসেম্বর থেকে উত্তরপূর্ব ভারতে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রথমে বিক্ষোভ আসামে শুরু হলেও পরে তা উত্তরপূর্বের অন্য রাজ্যগুলোতেও শুরু হয়। পরে পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিতেও ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে সবচেয়ে জোড়ালো বিক্ষোভ চলছে উত্তরপ্রদেশে। বৃহস্পতিবার থেকেই নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ লক্ষ্য করা যায় উত্তরপ্রদেশে।