ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন: দিল্লিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ, ফুঁসছে পশ্চিমবঙ্গ

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-কানাডা ফ্রান্সের ভ্রমণ সতর্কতা

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন: দিল্লিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ, ফুঁসছে পশ্চিমবঙ্গ
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন: দিল্লিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ, ফুঁসছে পশ্চিমবঙ্গ

পোস্টকার্ড (আন্তর্জাতিক) ডেস্ক ।।

ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকাতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাজধানী দিল্লিতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ‘ভারত বাঁচাও’ সমাবেশ করেছে। সভায় নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। পিটিআই।

শুক্রবার মুর্শিদাবাদ, বেলডাঙ্গা, উলুবেড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গাড়ি, বাস ভাঙচুরের পাশাপাশি রেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগের খবর দেয় ভারতের গণমাধ্যমগুলো। শনিবারও রাজ্যটির বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ, রেল-সড়ক অবরোধ চলছে বলে জানিয়েছে কলকাতার পত্রিকাগুলো। বেশিরভাগ এলাকায় ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি বাস ভাঙচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকটি স্টেশনে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের দমাতে কোনো কোনো এলাকায় পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।

তবে মাথা ঠান্ডা রেখে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, বিক্ষোভের নামে বাসে আগুন ধরানো, ট্রেনে পাথর ছোড়া এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নাগরিকত্ব আইন না মানার হুমকি মমতাসহ ছয় মুখ্যমন্ত্রীর :

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়সহ ভারতের ছয় মুখ্যমন্ত্রী আইনটি না মানার ঘোষণা দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের পর দিল্লি, পাঞ্জাব, ছত্তিশগড়, কেরালা ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা বিজেপি সরকারের বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত আইন কোনোভাবে তাদের রাজ্যে প্রয়োগ করতে দেবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি মহারাষ্ট্রে শিবসেনা সরকারের শরিক কংগ্রেসের এক মন্ত্রীও আইনটি রাজ্যে প্রয়োগ করতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন।

তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলো থেকে একযোগে প্রতিবাদের ডাক ওঠায় শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি একটি কেন্দ্রীয় আইন। তাই ওই আইন সব রাজ্যেই প্রযোজ্য হবে। কোনো রাজ্য সরকারের তা আটকানোর অধিকার নেই।

কিন্তু মমতা ইতোমধ্যেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএবি) পশ্চিমবঙ্গে হতে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে নিজে মাঠে নামার ঘোষণা ছাড়াও বিজেপি বাদে অন্য সব রাজনৈতিক দলকে এর প্রতিবাদে গণআন্দোলনে শরিক হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন।

মমতার মতো অন্য রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরাও একই সুরে কথা বলেছেন। দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও পাঞ্জাবে রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও একই নাগরিকত্ব আইন তাদের রাজ্যে প্রয়োগ হতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

এ ছাড়া ছত্তিশগড়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলীয় মুখমন্ত্রী ভ‚পেশ বাঘেলও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশেও রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস। দলটির মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের সরকারও আইনটি না মানার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া কেরালায় ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সবাদী) মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও এমন কথাই বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-কানাডা-ফ্রান্সের ভ্রমণ সতর্কতা :

এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিরতায় ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোতে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স। প্রয়োজন ছাড়া ওইসব এলাকায় না যেতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে দেশ চারটি। ভারতে অবস্থানরত নাগরিকদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এবং গণমাধ্যমের খবর অনুসরণেরও পরামর্শ দিয়েছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের আসাম ভ্রমণে স্থগিতাদেশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কানাডা এবং ফ্রান্সও উত্তরপূর্ব ভারতে ভ্রমণে নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে বলে জানা গেছে।