বাংলাদেশের সঙ্গে থাকার জন্য মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রধানমন্ত্রীর আহবান

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

বাংলাদেশের সঙ্গে থাকার জন্য মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রধানমন্ত্রীর আহবান
বাংলাদেশের সঙ্গে থাকুন

বাংলাদেশের আরও উন্নয়নের জন্য অধিকতর মার্কিন বিনিয়োগ ও সম্পৃক্ততা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটি হবে দু’দেশের জন্য একটি ‘উইন উইন অপশন।

আপনারা বাংলাদেশের সঙ্গে থাকুন।’ তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও বৃহত্তম বিনিয়োগ অংশীদার হিসেবে দেখতে পেয়ে আমি আনন্দিত। শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার লোট নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ‘মধ্যাহ্নভোজ গোলটেবিল বৈঠকে’ বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন অভিন্ন সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের অভিযাত্রায় আপনাদের আমাদের সঙ্গে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি সবচেয়ে উদার। ‘এর বহুবিধ সুবিধার মধ্যে কয়েকটি হলোÑ আইনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি শুল্ক, অবাধ ও এক্সিট নীতি, এক্সিটের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ও মূলধনের পূর্ণ প্রত্যর্পণ।’

 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সংসদের প্রাসঙ্গিক আইন ও দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সংরক্ষিত। বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি’ ও ‘দ্বৈত করারোপ সমঝোতা’ স্বাক্ষর করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ানস্টেপ সুবিধা সম্বলিত ১শ’টি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। তিনি বলেন, ‘এগুলোর মধ্যে এক ডজন প্রস্তুত রয়েছে এবং চারটি তিনটি দেশকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য বেশকিছু হাইটেক পার্কও প্রস্তুত হয়েছে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে তার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের অব্যাহত বৃদ্ধি বাংলাদেশের ওপর বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বর্ধমান আস্থারই প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘এমনকি বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ গত ৫ বছরে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। যদিও অর্থনৈতিক ও কারিগরি সক্ষমতার বিচারে এটি মার্কিন বিনিয়োগ সম্ভাবনার অনেক কম।’ শেখ হাসিনা বলেন, কৌশলগত অবস্থার কারণে বাংলাদেশ আঞ্চলিক ইকোনমিক হাব হওয়ার বিপুল সম্ভাবনাময়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পশ্চিমে ভারত, উত্তরে চীন, পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং নিজের সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ ৪শ’ কোটি লোকের একটি সম্মিলিত বাজারের মাঝখানে অবস্থিত।’ তিনি বলেন, যেহেতু বাণিজ্যের জন্য আঞ্চলিক সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু প্রতিবেশী ও পুরো অঞ্চলের সঙ্গে ভৌতভাবে সংযুক্ত হওয়ার জন্য সার্ক, বিমসটেক, বিবিআইএন ও বিসিআইএন-ইসির আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম, চাল উৎপাদনে চতুর্থ বৃহত্তম, অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম বৃহত্তম এবং তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশে^ দ্বিতীয় শীর্ষস্থান দখল করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য বর্ধমান খাতগুলো হলোÑ ওষুধ, সিরামিকস, জাহাজ নির্মাণ, চামড়া ও আইসিটি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় ছিল ৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে এবং চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটি অর্থনৈতিক সূচক হলোÑ মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১৯শ’ ৯ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩ হাজার ৩শ’ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে, রফতানি আয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ৪ হাজার ৫৩ কোটি বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে; মানব উন্নয়ন সূচক বেড়ে বার্ষিক ১ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে পিপিপির ভিত্তিতে বিশে^ ৩০তম শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশ এবং এটি ক্রমবর্ধমানভাবে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বৈশি^ক স্বীকৃতি পাচ্ছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আউটলুক-২০১৯ বাংলাদেশকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইচএসবিসি তাদের ২০১৮ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশে^র ২৬তম শীর্ষ অর্থনীতি এবং বিশে^র তিনটি দ্রæত বিকাশমান অর্থনীতির দেশের অন্যতম হবে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইউএস চেম্বার অব কমার্স এবং বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকে যোগ দেন।