বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট রয়েছে একাধিক রোহিঙ্গার হাতে

আমিরুল ইসলাম মো. রাশেদ , কক্সবাজার ।।

বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট রয়েছে একাধিক রোহিঙ্গার হাতে
বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট রয়েছে একাধিক রোহিঙ্গার হাতে

বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট রয়েছে একাধিক রোহিঙ্গার হাতে । গড় অনুপাতে ৫ শতাংশ রোহিঙ্গার হাতে রয়েছে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট। এসব জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট অধিকাংশ চট্টগ্রামের হালি শহরের ঠিকানায় করা। চট্টগ্রাম হালি শহরকেন্দ্রিক দালাল চক্র টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিক সাজিয়ে স্মার্টকার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) দিয়ে নাগরিকত্ব বিক্রির পেশায় লিপ্ত রয়েছে। দেশবিরোধী এ কার্যক্রমের সঙ্গে কে কে জড়িত তা তদন্ত করে শনাক্ত করা জরুরি বলে সবাই মনে করেন।

 
উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়ার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের অধিকাংশ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি এনআইডি কার্ড রয়েছে, অনেকে পাসপোর্টও করে ফেলেছে। ১৯৯২ থেকে শরণার্থী হিসেবে অবস্থানের সুযোগে বাংলাদেশের সর্বত্র তাদের চেনা-জানা হয়ে গেছে। অনেকের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে নানাভাবে সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। রেজিস্টার্ড ক্যাম্প দুটোর শত শত রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে অবস্থান করছে। এমনকি তারা ক্যাম্পে যাতায়াতও করছে।
 
অন্যদিকে ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট তুমরু স্থল সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় কামাল উদ্দিন (৫০)। তিন মাসের মাথায় তার ছেলে নূরুল আমিনকে (২২) ওমরা ভিসা নিয়ে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেন। ২০১৭ সালে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আসার আরও কয়েক বছর আগেই তিনি মিয়ানমার থেকেই বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়ে নেন। ফলে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পরও তাকে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নতুন আসা রোহিঙ্গা নূরুল বাংলাদেশি দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছেন। শুধু নূরুল আমিন নয় এ ধরনের অনেক রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে আশ্রয়শিবির ছেড়ে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছে।
 
নূরুল আমিন মিয়ানমারের তুমরু গ্রামের ঢেকিবুনিয়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি মিয়ানমার থাকতেই বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নং ১৯৮৭১৯১৩১৫৭০৩৩৩৯০ বানিয়ে নেন। তিনি ২০১৪ সালের ২১ মে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার তারাসাইল কুমারদোঘা ঠিকানায় দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নং বিবি ০২২৪৮৯৯ বানিয়ে নেন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি ভিসা নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি দেন। তার বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা এখনও উখিয়ার বালুখালী ৯নং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের নিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক।
 
উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ১নং ক্যাম্পের নিবন্ধিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক মরজিনা আক্তার, তার স্বামী মৌলভী আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকার ঠিকানায় ১৯৮২১৫৯১০১৮০০০১১৩নং বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে নিয়ে উদ্বাস্তু আশ্রয় শিবিরে দিব্যি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। উখিয়ার কুতুপালং বালুখালী মেগা আশ্রয় শিবিরের ২০নং ক্যাম্পে অবস্থান করছেন ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা আবছার। তিনি পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৭৮ বাইশারি মৌজার দক্ষিণ বাইশারি এলাকার ঠিকানায় ০৩১৭৩১৯৩৭৫১৪৯নং বাংলাদেশি এনআইডি বানিয়ে নিয়েছেন। তিনিও আশ্রয় ক্যাম্পের একজন উদ্বাস্তু হিসেবে বিনামূল্যে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
 
টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের একজন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী হলো হোসেন আহাম্মদের ছেলে জয়নাল আবেদীন। তিনি গত ৭ বছর ধরে সপরিবারে উখিয়ার কুতুপালং সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ির কচুবনিয়া এলাকায় বসবাস করছেন। ১৯৯২ সালে অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। শরণার্থী ক্যাম্পে থেকেই তিনি রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরএসও-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। আরএসওর সামরিক কমান্ডার হিসেবে তাকে অনেকে জানেন। তিনি দীর্ঘদিন নাইক্ষ্যংছড়ির পার্বত্য এলাকায় থাকার সুবাদে রেজু আমতলী ঠিকানা ব্যবহার করে ০৩০২৯৫৩৭৪৯৩২নং বাংলাদেশি এনআইডি বানিয়ে নেন। তার এক ভাই মো. আয়ুব কুতুপালং ২নং ক্যাম্পে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন।
 
মিয়ানমারে থাকতেই অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি এনআইডি সংগ্রহ করেন দালালদের মাধ্যমে। তারা এখানকার দালালদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে পেয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের এনআইডি কার্ড।
 
অন্যদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর টেকনাফের জাদিমুরা পাহাড়ি এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নুর মোহাম্মদ নিহত হয়। তিনি মিয়ানমারের আকিয়াব এলাকার কালা মিয়ার ছেলে। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছিলেন। বাংলাদেশে তার চারটি বাড়িও রয়েছে। সম্প্রতি তার মেয়ের কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এক কেজির বেশি স্বর্ণ ও কয়েক লাখ টাকার উপহার সামগ্রী পান। তারও ছিল বাংলাদেশের স্মার্টকার্ড। কার্ড নম্বর ৬০০৪৫৮৯৯৬৩।