বাংলাদেশ সুন্দরী প্রতিযোগিতায়,স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনায়

বাংলাদেশ সুন্দরী প্রতিযোগিতায়,স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনায়
বাংলাদেশ সুন্দরী প্রতিযোগিতা ,স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনায়

মোহাম্মদ তারেক ।।

বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে সুন্দরী খোঁজার প্রতিযোগিতা জমে উঠেছে। মিস ওয়ার্ল্ড, মিস ইউনিভার্সসহ বিউটি পেজেন্টে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। স্থানীয় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর মুকুট মাথায় চাপিয়ে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন তারা। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে আর পারছেন না। বিউটি পেজেন্টগুলোয় বাংলাদেশের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে জানিয়েছেন কয়েকজন সুন্দরী।

মাকসুদা আখতার প্রিয়তি, মিস আয়ারল্যান্ড-২০১৪ ও মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল-২০১৬
বাংলাদেশে বিউটি পেজেন্টগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলা চলে। পাশের দেশে অনেক বছর ধরে কার্যক্রম হচ্ছে, তারা নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। তারা জানে তাদের কীভাবে এগুতে হবে। তাই তারা ভালো ফলাফল উপহার দিতে পারছে। আমাদের সে পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে, হয়তো পাঁচ বছর পরে আমরা নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করতে পারব। আরেকটা বিষয় হলো আমাদের প্রতিযোগীদের সব প্রস্তুতি নিজেদের নিতে হয়, এ বিষয়ে যে কোচিংয়ের ব্যবস্থা আছে সেটিও অনেকে জানেন না। সব বিবেচনা করে আমাদের মেয়েরা যে পর্যায়ে যাচ্ছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতে তাদের অভিজ্ঞতা জেনে নতুনরা ভালো করার চেষ্টা করতে পারবে।

জেসিয়া ইসলাম, মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭
বাংলাদেশ রিসেন্টলি বিউটি পেজেন্টগুলোয় ইন্টারন্যাশনালি অংশ নেওয়া শুরু করেছে। আমি ২০১৭ সালে অংশ নিয়ে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হয়েছি। এবার মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ অংশ নিয়ে একটা পজিশন পেয়েছি। বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু খারাপ হয়নি। এসব প্রতিযোগিতায় জিততে হলে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়। অন্যান্য দেশের তা আছে বলে তারা বিজয়ী হয়।
বাংলাদেশেরও অভিজ্ঞতা হচ্ছে। আমার মনে হয় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা অনেক ইমপ্রুভ করব। যারাই বিউটি পেজেন্টে আসতে চায় তাদের পড়াশোনা করতে হবে, গ্রুমিংয়ে যুক্ত হতে হবে। নিজের লাইফের জন্যও গ্রুমিং জরুরি।

জাহারা মিতু, প্রথম রানার আপ, মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭
বাইরের দেশে একটা মেয়ে ছোটবেলাতেই সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে হাঁটার স্বপ্ন দেখে। সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলে। অন্যদিকে আমাদের দেশের মেয়েরা বিজ্ঞাপন দেখে জানতে পারছে। বাইরের দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগীদের এটি অন্যতম পার্থক্য। আরেকটি বিষয় হলো একজন বিজয়ীকে মুকুট পরানোর এক মাসের মধ্যে তাকে অংশ নিতে হয় মূল প্রতিযোগিতায়। যদি সে ন্যূনতম চার মাস সময় পায় তাহলেও নিজেকে তৈরি করতে পারে ভালোভাবে। এ দেশে দেখা যায় ভুল বিচারকার্যের জন্য প্রকৃত মেধাবী প্রতিযোগী বাদ পড়ে যান, মূল আসরে গিয়ে বিজয়ী প্রতিযোগী প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারেন না। বিচারক নির্বাচনের আগে দেখতে হবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার কোনো অভিজ্ঞতা তাদের আছে কি না। সব ঠিকঠাক হলে ভালো ফল পেতে বাংলাদেশের সময় লাগবে না।

নিশাত নাওয়ার সালওয়া, প্রথম রানার আপ মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৮
বাংলাদেশে নতুন একটি যুগের শুরু হয়েছে। আগে ইন্টারন্যাশনাল বিউটি পেজেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। গত ২-৩ বছর ধরে তা শুরু হয়েছে । আমার মনে হয় ভালো ফলাফলের জন্য অংশগ্রহণকারীদের সোশ্যাল ইস্যুগুলো নিয়ে জানতে হবে। বিউটি কিন্তু শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যকে বোঝায় না। টাইটেল অর্জন শুধু নয় দেশের উন্নয়নে যাতে কাজ করা যায় সেদিকে ফোকাস করতে হবে। বাইরের দেশের দিকে তাকালে আমরা কিন্তু দেখি বিজয়ীরা চ্যারিটি, সোশ্যাল ইস্যু নিয়ে কাজ করছে। আমাদের পাশের দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা অনেক আগে থেকেই বিউটি পেজেন্টে অংশ নিচ্ছে। আমরা তো শুরু করলাম মাত্র। তবে আমার বিশ্বাস খুব শিগগিরই আমরা কোনো একটি বিউটি পেজেন্ট থেকে ক্রাউন নিয়ে আসতে পারব।

শিরিন আক্তার শিলা, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ-২০১৯
বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবার মিস ইউনিভার্সে গিয়েছি। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি সবাই বাংলাদেশকে নতুন করে জেনেছে। তারা জানতে চেয়েছে সামনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে কি না। আমি আশাবাদী ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভালো কিছু করবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। নিজের দেশের মানুষকে সাপোর্ট করছে। আমি মনে করি ভালো ক্যান্ডিডেট বাছাই করা অনেক কঠিন। আমাদের অনেক ট্যালেন্টেড মেয়ে আছে। সবার কাছে তথ্যগুলো ঠিকভাবে পৌঁছে দিতে হবে এবং সমানভাবে জাজ করতে হবে। ভালো জাজেস থাকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন যেই আসুক না কেন তার ইমপারফেকশন নিয়ে ভাবা ঠিক না। তারা ইচ্ছা করলে বিউটি পেজেন্টে অংশ নিয়ে অবশ্যই ভালো ফল বয়ে আনতে পারবে।

ফারহানা আফরীন ঐশী, মিসেস ট্যুরিজম গ্লোব-২০১৯
ইন্টারন্যাশনাল বিউটি পেজেন্টগুলোয় বাংলাদেশ ভালো পর্যায়ে আছে। এবার অনেক মেয়েই অংশ নিয়েছে। যেমন অবনী মিসেস ওয়ার্ল্ডে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলো, আমি ক্রাউন পেলাম। অনেক মেয়েই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে একটু চেষ্টা করলে কিছু করা সম্ভব। আমার ধারণা ছেলেরাও বুঝতে শুরু করেছে স্ত্রীদের একটু সাপোর্ট দিলে তারা সম্মানজনক কিছু নিয়ে আসতে পারবে। আমার বিশ্বাস ২০২০ সাল থেকেই বাংলাদেশের মেয়েরা আরও ভালো ফল বয়ে আনবে। আমাদের দেশে গ্রুমিং স্কুল নেই, অথচ ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে যেতে হলে সে মানের গ্রুমিং দরকার। এখানকার বিভিন্ন পেজেন্টের প্রশ্নগুলোও ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের না। সে জন্য মূল আসরে গিয়ে আমাদের মেয়েরা একটু অসুবিধায় পড়ে যায়। ভালো জাজের চেয়েও প্রয়োজন ভালো একজন গ্রুমার। কারণ একদিনে কাউকে বিচার করা সম্ভব না। তবে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের অভিজ্ঞতা আছে এমন কেউ জাজ হলেই সবচেয়ে বেটার। একটা মেয়ে নিজেকে গ্রুম করে বিউটি পেজেন্টে আসা উচিত। তাকে নিশ্চিত করতে হবে দেশের বিউটি পেজেন্টে তার কোনো খুঁত পাওয়া যাবে না, তখন ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে গিয়ে সে আরও ভালো করবে।

মুনজারিন অবনী, মিসেস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৯ / অ্যাম্বাসেডর অ্যাওয়ার্ড
বিউটি পেজেন্টগুলোয় বাংলাদেশ আরও ৫-৬ বছর পর ভালো পর্যায়ে যেতে পারবে বলে আমার ধারণা। আমাদের একটি ভুল ধারণা আছে যে বাহ্যিক সৌন্দর্য থাকলেই এসব পেজেন্টে ভালো করা যায়। আসলে তা নয়, এসব জায়গায় অন্যান্য যোগ্যতা যেমন স্পোকেন ইংলিশ, সোশ্যাল ওয়ার্কের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি দেখা হয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করাও জরুরি। কারণ ওসব পেজেন্টে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের কস্টিউম পরতে হয়, তাদের মতো চলতে হয় যা আমাদের মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। যদি আমরা যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদের দিয়ে ওয়ার্কশপ করাতে পারি তাহলে নতুনদের পক্ষে ক্রাউন জেতা কঠিন হবে না। বিচারক প্যানেলে ফিটনেস বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। আমাদের প্রশ্নের ধরনে পরিবর্তন আনাও জরুরি। আর সোশ্যাল কাজে ডোনেট করার মানসিকতা থাকতে হবে। আমাদের যারা অর্গানাইজার তাদের লোকাল নয় ইন্টারন্যাশনাল মানটা বুঝতে হবে। তাহলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে। যে মেয়ে বিউটি পেজেন্টে অংশ নিতে চাচ্ছে তাকে শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতাও একটি গুণ এসব ক্ষেত্রে।

সুন্দরীদের অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে বিউটি পেজেন্টগুলোর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা। আন্তর্জাতিক ইভেন্টে ভালো ফলাফল করতে হলে গ্রুমিংয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে খুব বেশি দূরে নয় যেদিন বিশ্বেরর শীর্ষ সুন্দরীর মুকুট জয় করে নেবে বাংলাদেশের মেয়ে।