ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেই, ব্যবসা করি না : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেই, ব্যবসা করি না : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেই, ব্যবসা করি না : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

দেশের ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং’ পণ্যকে ২০২০ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা নিজেরা ব্যবসা করি না; কিন্তু সরকার ব্যবসাবান্ধব। আমরা ব্যবসার জন্য অন্যদের সুযোগ করে দেই। আর বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান গত বছরের ৮৯তম থেকে বর্তমানে ৭২তম অবস্থানে আমরা চলে এসেছি। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করতে পারব। বিভিন্ন পণ্য রফতানির মাধ্যমে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এ খাতে বিশেষ মনোযোগ দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইডিএফ) ২০২০ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, আমরা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের অধীনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হব। তিনি উল্লেখ করেন, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোমোবাইলস, অটোপার্টস, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, অ্যাকুমুলেটর ব্যাটারি, সোলার ফটো-ভল্টিং মডিউল, বিভিন্ন খেলনাসামগ্রীসহ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বাংলাদেশ আরও পণ্য উৎপাদন করতে পারে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ আকৃষ্টে আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে আমাদের বিশাল বাজার আছে।

পণ্যভিত্তিক রফতানিকে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিবছর একটি পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণার রীতি অনুযায়ী অতীতে চামড়া এবং পাটকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করায় এগুলোর বিকাশ ঘটে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর আমরা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ এ শিল্পটির বিনিয়োগ আকর্ষণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বিশে^ এখন বিনিয়োগ এবং সোর্সিংয়ের জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজ করার লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন ২০২টি দেশে ছয় শতাধিক পণ্য রফতানি করছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বরাবরের মতো এবারও সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইবিপি) যৌথভাবে মেলার আয়োজন করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য সচিব মো. জাফরউদ্দীন এবং এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠারে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা ইয়াসমিন স্বাগত বক্তৃতা করেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে সামনে রেখে দেশের পণ্য প্রদর্শনী এবং পারিবারিক বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দৃষ্টিনন্দন করে এবারের মেলাকে সাজানো হয়েছে। মেলায় বাংলাদেশসহ ২১টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৮৩টি স্টল থাকছে। প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগরের মেলা প্রাঙ্গণের গেটের ফিতা কেটে মেলা উদ্বোধনের পর এর বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৭ কোটি ভোক্তার বাজার নিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে হওয়ায় প্রায় ৪ বিলিয়ন ভোক্তার সঙ্গে সংযুক্ত। বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি একই সঙ্গে বিশে^র বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। তিনি বলেন, আমি কূটনীতিক এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাব যে, উইন-উইন পরিস্থিতির জন্য ব্যবসার সুবিধার্থে বিনিয়োগ এবং সোর্সিংয়ের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিন।

শেখ হাসিনা বলেন, রফতানি বৃদ্ধি এবং ‘ডুয়িং বিজনেসে ব্যয় হ্রাসে’র জন্য বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি এবং উন্নয়নের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসসহ সামগ্রিকভাবে ইকোনমিক জোন এবং সারা দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক আপডেট-২০১৯-এর রিপোর্ট অনুসারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতে আমাদের রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

দেশের রিজার্ভ এখন অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে বেশি সমৃদ্ধ আখ্যায়িত করে সরকারপ্রধান ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের নিয়ে লন্ডনে দূত সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বৃদ্ধিতে তার সরকারের পদক্ষেপও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন আসলে ডিপ্লোমেসিটা হয়ে গেছে ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি’। এখন আর শুধু পলিটিক্যাল দিকে দেখলে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।

টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জনে অর্থনৈতিক খাত বিশেষ করে শিল্প ও উৎপাদনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগ একান্ত প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোক্তাদের আইসিটিসহ অন্য সব সেবা খাতের রফতানিতে এগিয়ে আসার মাধ্যমে সীমিত পণ্যের ওপর রফতানিনির্ভরতা দূর করারও আহ্বান জানান।

প্রতিবেশী দেশে রফতানি বৃদ্ধির উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকেই আমাদের দৃষ্টি। যে কারণে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং ব্যবসা-বাণিজ্যটাকে সহজ করে দেওয়ার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। একই সঙ্গে দেশে যাতে বিনিয়োগ আসে সেদিকেও দৃষ্টি দিয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ^ বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে এই মেলার আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তারা তাদের নতুন পণ্যসম্ভার প্রদর্শনীর সুযোগ পাবেন।

মেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিদেশি অংশগ্রহণকারীসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং একই সঙ্গে আরও বেশি পণ্য নিয়ে ভবিষ্যতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের অনুরোধও জানান।