ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মোরশেদ খানের বিএনপি থেকে পদত্যাগ

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মোরশেদ খানের বিএনপি থেকে পদত্যাগ

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান। তিনি দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব ধরনের পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লোক মারফত পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।

পদত্যাগের কারণ হিসেবে মোর্শেদ খান ‘নেহাত ব্যক্তিগত’ উল্লেখ করলেও তার ঘনিষ্টজনরা বলছেন দীর্ঘদিনের জমানো রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকেই বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির সিনিয়র এই নেতা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর পাঠানো পদত্যাগপত্রে মোরশেদ খান বলেন, ‘মানুষের জীবনে কোনও না কোনও সময় কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমার বিবেচনায় সেই ক্ষণটি বর্তমানে উপস্থিত এবং উপযুক্তও বটে। তাই অনেকটা দুঃখ ও বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে পদত্যাগের এ চিঠি।’

মোরশেদ খান আরও বলেন, ‘রাজনীতির অঙ্গনে আমার পদচারণা দীর্ঘকালের। কিন্তু দেশের রাজনীতি এবং দলের অগ্রগতিতে নতুন কিছু সংযোজন করার মতো সঙ্গতি নেই। তাই ব্যক্তিগত কারণহেতু আমার উপলব্ধি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার এখনই সময়। বহুবিধ বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমি অবিলম্বে আজ (মঙ্গলবার) থেকে বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ অবস্থায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহারসহ বর্তমানে অলঙ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ করছি।’

পদত্যাগী এ নেতার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, দলীয় অবমূল্যায়ণের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কর্মকান্ডও মোরশেদ খানকে প্রচন্ড হতাশ করেছে। তিনি তার কাছের মানুষদের বলেছেন, তারেক রহামন তার মায়ের মুক্তির বিষয়েও জোরালো কোনো আন্দোলন গড়ে তুলবেন না। দলীয় প্রধানের কারামুক্তিও তাই সুদূরপরাহত বিষয়। আর খালেদা জিয়া বিহীন বিএনপির রাজনীতি করে করার কোনো ইচ্ছা তার নেই। মূলত: বিভিন্ন  ক্ষোভ থেকেই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বিহীন দল পরিচালনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একক কর্তৃত্ব নিয়ে তার প্রতি দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে যে আস্থাহীনতা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, মোর্শেদ খানের পদত্যাগের মধ্যদিয়ে তা প্রকাশ্যে এলো। এতদিন সিনিয়র নেতাদের নানা ক্ষোভের কথা শোনা গেলেও এই প্রথম কেউ পদত্যাগ করলেন।

মোরশেদ খান ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাল, এর পর জুন ’৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ দূত ছিলেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ স্পেশাল কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।