‘বেঙ্গল উলাইয়াত’ নামে বাংলাদেশে এবার নতুন জঙ্গি সংগঠন

‘বেঙ্গল উলাইয়াত’ নামে বাংলাদেশে এবার নতুন জঙ্গি সংগঠন
‘বেঙ্গল উলাইয়াত’ নামে বাংলাদেশে এবার নতুন জঙ্গি সংগঠন

নাজিম মুহাম্মদ ।। 

বাংলাদেশে ‘বেঙ্গল উলাইয়াত’ নামে নতুন সংগঠনের ঘোষণা দিয়েছে জঙ্গি গ্রুপ নব্য জেএমবি। নিজেদের অবস্থান ও শক্তিমত্তা জানান দিতে তারা পুলিশ, বিদেশি মিশন ও শিয়া মতাবলম্বীদের প্রতিষ্ঠান টার্গেট করেছে এমন তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে দেশের সকল থানা ও ফাঁড়িগুলোকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ তিন পথচারী আহত হন। ঘটনার পরদিন অনলাইন সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ থেকে এই হামলার সাথে আইএস জড়িত বলে জানায়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জঙ্গি সংগঠন আইএস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের তৎপরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আইএস মতাদর্শের নব্য জেএমবি বাংলাদেশে ‘বেঙ্গল উলাইয়াত’ নামে নতুন সংগঠনের ঘোষণা এবং নিজেদের অবস্থান ও শক্তিমত্তা জানান দিতে পুলিশ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সরকার গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি মিশন, দূতাবাস, শিয়া মতাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে গোপনে জানা যায়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলার কৌশল হিসাবে নিজেদেরকে প্রকাশ্যে কোন ছোটখাট অপরাধে জড়িয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার কিংবা আটক হবার পর তাদের সাথে থাকা মালামালের মধ্যে গ্রেনেড, বোমা কিংবা শক্তিশালী বিস্ফোরক দ্রবাদি লুকিয়ে রেখে সুযোগমত বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এ অবস্থায় জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, কোন আসামি গ্রেপ্তার হলে তার সাথে থাকা মালামাল হেফাজতে নেয়ার পূর্বেই যথাযথ তল্লাশি করে তাতে কোন ধরনের বিস্ফোরক রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।

জেএমবি থেকে বেঙ্গল উলাইয়াত :

১৯৯৮ সালে জঙ্গি গ্রুপ জামায়াতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটলেও শায়খ আবদুর রহমান আরো ১০ বছর আগে এদেশে জঙ্গি সদস্য সংগ্রহ শুরু করে। ১৯৯৮ সালে ঘোষণা দিয়ে এ জঙ্গি গ্রুপ তাদের কর্মকান্ড শুরু করে। সেই সময় থেকে জেএমবি বিপুল অর্থ ব্যয় করে আসছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের মোট ৬৪ জেলার মধ্যে একটি বাদে ৬৩ টি জেলার মধ্যে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসে জঙ্গি গ্রুপ জামায়াতুল মোজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই দিনের হামলায় একজন নিহত হয়।

২০১৫ সালের ২৩ মার্চ নগরীর আকবরশাহ থানার মীর আউলিয়া মাজার রোড এলাকার একটি ভাড়া ঘর থেকে বিস্ফোরকসহ এরশাদ হোসেন মামুন নামে এক যুবককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় লোকজন। আটক হবার পর মামুনের কাছ থেকে চট্টগ্রাম ঘিরে জঙ্গি গ্রুপের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। তবে সেই সময় চট্টগ্রামে জঙ্গি গ্রুপের বিশাল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে যেসব বক্তব্য দিয়েছিলো তা তেমন আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তবে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে নগরীতে অবস্থান করছে এমন বেশ কিছু সংখ্যক জঙ্গি গ্রুপের সদস্যদের নাম প্রকাশ করেছিলেন। মামুন জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরীতে একশোর বেশি জেএমবির সদস্য দোকানের কর্মচারী হিসাবে কাজ করে। এসবের মধ্যে রয়েছে ফাস্ট ফুড, স্টেশনারি, কসমেটিকস, ফটোস্ট্যাট, ফ্যাশন হাউস, সেলুন ও ফুটপাতের দোকান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে তারা এ কৌশল বেছে নিয়েছে। মামুন নিজেও নিউ মনসুরাবাদ স্টেশনারি এন্ড কসমেটিকস নামে একটি দোকানে চাকরির আড়ালে জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসাবে কাজ করতেন। মামুন আটক হবার পর ছয়মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর সদরঘাট মাঝিরঘাটে রেকিট বেনকিজার পরিবেশকের ম্যানেজার সাহা বাবুর কাছ থেকে গুলি করে ফিল্মি কায়দায় টাকাভর্তি ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই ছিনতাইয়ের ঘটনায় গুলিতে সাহা বাবু ও দুই ডাকাতদলের সদস্য মারা যায়। ডাকাতির এ মামলা তদন্ত করতে চট্টগ্রামে জেএমবির শক্ত অবস্থানের কথা জানতে পারে পুলিশ।

পুলিশের এন্টিটেরোরিজম ইউনিটের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ‘বেঙ্গল উলাইয়াত’ বলতে সংগঠনটির বাংলাদেশের শাখা বোঝানো হয়েছে। নিজেদের সদস্যদের উজ্জীবিত রাখতে ও গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তারা বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের শাখার নাম ঘোষণা করে থাকে।