পুলিশের উপর হামলার পর তাকে খুঁজছে পুলিশ, সাজা পরোয়ানা পৌঁছেনি দু’বছরেও !

পুলিশের উপর হামলার পর তাকে খুঁজছে পুলিশ, সাজা পরোয়ানা পৌঁছেনি দু’বছরেও !

নাজিম মুহাম্মদ ।। 

পাহাড় দখল-কাঠ পাচার-অস্ত্রবাজিসহ অনেক কাজের কাজী নুুরে আলম নুরু। পুলিশের উপর হামলার পর থেকে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। নানা অপরাধে নুরুর বিরুদ্ধে নগরীর আকবরশাহ ও খুলশী থানায় দায়ের করা মামলার সংখ্যা ২৮টি। এরমধ্যে অস্ত্র আইনের একটি মামলায় দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ১৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে ১৭ বছর সাজার আদেশ হলেও সেই সাজা পরোয়ানা থানার নথিতে নেই।

ধারণা করা হচ্ছে, কৌশলে সাজা পরোয়ানা গায়েব করেছে নুরু। পুলিশের দাবি- নুরুর বিরুদ্ধে ১৭ বছরের সাজা হয়েছে এ ধরনের কোন পরোয়ানা বিগত দুই বছরে থানায় আসেনি। অথচ সাজা পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুর্ব ফিরোজশাহ নাছিয়াঘোনা এলাকায় সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তুলেছে নিজস্ব সাম্রাজ্য।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হুমায়ন কবির জানান, নুরুর বিরুদ্ধে ১৭ বছরের সাজা পরোয়ানার বিজ্ঞ আদালতের আদেশের কপি আমাদের থানায় আসেনি। দুই বছরেও সাজা পারোয়ানা থানায় না পৌঁছায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন।

তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যে আদালত সাজা দিয়েছে সেই আদালত থেকে সাজা পরোয়ানা দণ্ডিত আসামি যে থানা এলাকায় থাকেন সেই থানায় যাবে। দুইশো বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে। কিন্তু থানা বলছে একজন আসামির ১৭ বছরের সাজা পরোয়ানা তাদের কাছে নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন আছে।

মামলার রায়ের আদেশে বলা হয়েছে, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম জেলার গুনবতী থানার চাঁপাচো হাজি বাড়ির তনু মিয়া ভাণ্ডারির ছেলে নুর আলম প্রকাশ নুরু বর্তমানে নগরীর আকবরশাহ থানার পুর্ব ফিরোজশাহ ১ নম্বর ঝিল এলাকায় থাকেন। তাকে অস্ত্র আইন ১৮৭৮ এর ১৯ এ ধারায় দশ বছর সশ্রম ও ১৯ (এফ) ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হল। পলাতক আসামি নুরু যে দিন আদালতে হাজির হবেন কিংবা পুলিশের হাতে ধরা পড়বেন সেদিন থেকে তার সাজার মেয়াদ গণনা করা হবে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা ইস্যু করা হোক।

অভিযোগ আছে, সাজাপ্রাপ্ত নুরু থাকেন আকরবশাহ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেনের আশীর্বাদে। আওয়ামীলীগ নেতার সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যেতেন নুরু। তবে নুরুর সাথে সম্পর্ক দূরের কথা যোগাযোগও নেই বলে জানান কাজী আলতাফ।

তিনি বলেন, ‘সরকারি পাহাড় দখল, পাহাড় কাটা, চুরি, ডাকাতি এমন কোন কাজ নেই নুরু করে না। আমরা পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করি। কোন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত নই। আমার কারণে যাদের সমস্যা হচ্ছে তারা আমার বিরুদ্ধে এ বদনাম ছড়াচ্ছে’।

একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে নুরুর সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি থাকা প্রসঙ্গে আওয়ামীলীগ নেতা আলতাফ বলেন, ‘নুরু বিএনপি সমর্থক। বিএনপির লোক আওয়ামীলীগ সভাপতির অনুসারী হতে পারে না। তার সাথে আমার চার/পাঁচ বছর আগে একবার দেখা হয়েছে। তবে ঘনিষ্ঠতা নেই। ওই ধরনের কোন ছবি থাকলে কেউ হয়তো ষড়ষন্ত্র করছে’।

সাজার কথা জানে না পুলিশ 

২০১৪ সালের ৬ জুলাই রাত তিনটা দশ মিনিটে আকবরশাহ থানার ফিরোজ শাহ কলোনির ওবেট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে নুরুকে আটক করে পুলিশ। তার কোমরে লুঙ্গির সাথে গোজানো অবস্থায় একটি দেশীয় তৈরি এলজি ও এক রাউন্ড কার্তুজ পাওয়া যায়। অভিযানকালে তার সাথে থাকা আরো কয়েকজন পালিয়ে গেলেও সঙ্গীদের ফেলে যাওয়া একটি দেশিয় তৈরি বন্দুক ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে এসআই সেলিম মিয়া বাদি হয়ে অস্ত্র আইনে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনির হোসেন। এ ব্যাপারে ১০ ব্যক্তি আদালতে স্বাক্ষী দেন। অবৈধ অস্ত্র ও গুলি রাখার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই নুরুর বিরুদ্ধে সতেরো বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন মহানগর বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারক মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহ।