প্রায় শেষের পথে পদ্মা সেতুর কাজ

প্রায় শেষের পথে পদ্মা সেতুর কাজ
প্রায় শেষের পথে পদ্মা সেতুর কাজ

নিউজ ডেস্ক ।।

৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে পদ্মা বহুমুখী মূল সেতুর । এ প্রকল্পের পুরো কাজের ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে এপ্রোচ রোডের কাজ ৯১ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তের কাজ শতভাগ, সার্ভিস এরিয়া (২) শতভাগ, মূল সেতু নির্মাণকাজ ৮৫.৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং নদীশাসনের কাজ ৬৬ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২১.৯৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩০.২২ শতাংশ।

রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির পঞ্চম সভায় এই তথ্য জানানো হয়। পদ্মা সেতুসহ ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পের প্রতিটির অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয় সভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।

ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্টের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানার পর প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু কাজের অগ্রগতির জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ঝামেলা গেছে। আমরা আনন্দিত অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারের মতো বোধহয় হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, নদীতে ব্রিজ বা কোনো কিছু করতে গেলে আমাদের কিন্তু নদীর চরিত্রটা কেমন, বর্ষাকালে কী রূপ ধারণ করে, শীতকালে কী রূপ ধারণ করে এগুলো জেনে নিয়ে করা উচিত। নদীকে শাসন করতে গেলে সে শাসন মানবে না। সব নদী সব শাসন মানে না। সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পদ্মা নদীর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সেতুটা করার সময় নদী শাসন করে আমি কিন্তু নদী ছোট করতে দিইনি। পদ্মা নদীর চরিত্র সম্পর্কে কারও জানা নেই। এই নদীটা অসম্ভব ভাঙনপ্রবণ। এখানে বাঁধ দিয়ে ছোট করতে গেলে এই নদী মানবে না। আমাদের ব্রিজটাই বড় করতে হবে। এখানে জায়গাও রাখতে হবে বাপার জোনও থাকবে। যাতে বন্যার পানিটা ধারণ করতে পারে।’

অন্যান্য প্রকল্পের অগ্রগতি
ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির পঞ্চম সভায় ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পেরই অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের প্রি-ইনসপেকশন শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজকে ৩৪৪টি অঙ্গে বিভক্ত করে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম প্রকল্পে- বেজার উদ্যোগে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরী (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকুণ্ড অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম ও সাবরাং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এবং জাইকা ও সরকারের সমন্বিত প্রয়াসে মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।

বর্তমানে এখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রায় ২০টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বন্দর নির্মাণ, এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ অন্যতম।

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহও শুরু হয়েছে।

গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রারম্ভিক কাজ ও মালামাল সংগ্রহের কাজ ইতোমধ্যে পুরো শেষ হয়েছে। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হুকুম দখলের কার্যক্রম ৯০ দশমিক ৩৩ শতাংশ আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের পাইপ লাইন নির্মাণকাজ শত ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি প্রকল্পের পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ গড়ে ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪০.০২ শতাংশ।

ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্প ছাড়াও অন্য বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে ‘ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি’কে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা সেগুলো তো মনিটর করবই, ভবিষ্যতে আমার মনে হয় এই কমিটি থেকে শুধু এই কয়েকটা দেখলে হবে না, আরও অনেকগুলো প্রজেক্ট আছে যেগুলো দেখতে হবে।

সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নষ্ট হয় না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ যে, অন্তত তারা আমাদের এইটুকু সুযোগ দিয়েছে, আমরা পরপর এবার নিয়ে তৃতীয় বার এসেছি। তাতে আমাদের উন্নয়নের কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছি এবং মানসম্মতও করতে পারছি।

সভায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।