পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ

পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ
 
 

প্রশান্ত মিত্র ।।

ভ্রমণ পিপাসু মন কখনো দিন-কাল-সময়ের হিসেব করে না । সময় পেলেই পথে-প্রান্তরে ছুটে যেতে চায় অজানায়। চিরাচরিত একঘেঁয়ে জীবন থেকে একটু দম ফেলার ফুরসত খুঁজতে চান অনেকেই। এর মধ্যে শীত আসছে মানেই ভ্রমণ পিপাসুদের একটু নড়েচড়ে বসার দিন এলো বলে! বছরের শেষভাগ বিশেষ করে এই শীতের সময়ে ঘুরে বেড়ানোর যেন বাড়তি ধুম পড়ে যায় সবার মধ্যে।

এই ভ্রমণকালীন সময়ে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাই কেড়ে নিতে পারে সব আনন্দ। আর অপরিচিত স্থানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় হয়তো করণীয় ঠিক করে উঠতে পারেন না অনেকেই। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ যেকোনো পরিস্থিতিতে সার্বক্ষণিক সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকের যেকোনো আহ্বানে দ্রুততার সঙ্গেই পাশে এসে দাঁড়াতে বদ্ধ পরিকর বাহিনীটি।
 
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, দেশের কোথাও যেকোনো পর্যটক আমাদের হট লাইনে (০১৭৬৯৬৯০৭৪০) যোগাযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রয়োজনে কখনো কখনো স্থানীয় থানার সহায়তা নেওয়া হয়। কখনো ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নানামুখী বিড়ম্বনা দূর করে দেশের পর্যটনশিল্পে গতি আনার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের নভেম্বরে গঠন করা হয় ‘ট্যুরিস্ট পুলিশ’। পুলিশের বিশেষ ইউনিট হিসেবে এদের কর্মতৎপরতা পুরোটাই পর্যটকদের ঘিরে। দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে শুরু করে পর্যটন এলাকায় থাকার জায়গায়ও নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন এই ইউনিটের সদস্যরা। বিদেশিরা যাতে নির্ভয়ে দর্শনীয় স্থানে চলাচল করতে পারেন সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের রয়েছে পৃথক নজরদারি। হোটেল-মোটেলে পোশাকধারী পুলিশের বাইরেও সাদা পোশাকের ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা পর্যটকদের খোঁজখবর রাখছেন। সমগ্র দেশকে চারটি বিভাগে ভাগ করে পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশের এক হাজার ৩৮৮ জন সদস্য। 
.পর্যটন স্পটের গুরুত্ব বিবেচনা করে বর্তমানে দেশের ২৯ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, সিলেটের জাফলং, বিছানাকান্দি, মাধবকুণ্ড, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কুমিল্লা, সোনারগাঁ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ও জাতীয় চিড়িয়াখানা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি ভ্রমণে সহযোগিতা দিচ্ছে।
 
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের পর্যটনের মূলকেন্দ্র কক্সবাজার। তবে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় ও প্রত্নসম্পদ সমৃদ্ধ স্থানে বেড়ানোর প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে। তরুণরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে নতুন দর্শনীয় স্থান খুঁজে বের করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই স্থানগুলোর স্থির ও ভিডিওচিত্র পোস্ট করে বাংলাদেশকে নতুন করে চিনিয়ে দিচ্ছেন।
 
যেমন সিলেটের বিছানাকান্দি ও রাতারগুল কয়েক বছর আগেও তেমন পরিচিত ছিল না। অপরিচিত ছিল চট্টগ্রামের মীরেরসরাইয়ের খইয়াছড়া, শ্রীমঙ্গলের হামহাম ঝরনা, বগুড়ার ভাসুবিহার, ভিমেরজাঙ্গাল, সারিয়াকান্দির যমুনার ঘাট, বান্দরবানের বগালেক, নীলগিরি, বোয়াংছড়ি, তিনাপ সাইতার, রাঙামাটির বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝরনা, সুনামগঞ্জের টাঙুয়ার হাওর, জাদুকাটা নদী, দিঘীনালার তৈদুছড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। দর্শনীয় এই স্থানগুলো সামাজিক মাধ্যমে উন্মোচিত হওয়ায় দেশ ও বিদেশের ভ্রমণপিয়াসীরা নতুন স্থান খুঁজে পেয়েছেন।
 
সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি ছুটি, বিভিন্ন দিবসের ছুটি, ঐচ্ছিক ছুটি ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো লোকজনের সংখ্যা বেড়েছে। ছুটি কাটাতে পরিবার পরিজন, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধবসহ বেরিয়ে পড়ছেন তারা।
 
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, দেশের ৮শর বেশি স্থান পর্যটন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে ৪শটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। তরুণরা নতুন যে দর্শনীয় স্থানগুলো খুঁজে বের করছেন সেগুলোও পর্যটন স্পটে যুক্ত করা হচ্ছে।
 
বতর্মানে দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটক ১ কোটি ৬০ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। ক্রমেই এই সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার। ২০১৭ সালে ছিল ৮৫ হাজার এবং ২০১৬ সালে ছিল মাত্র ৪৫ হাজার। ছুটি ও শীতের সময় অন্যস্থানে পর্যটকদের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যায়।
 
ট্যুরিস্ট পুলিশ জানায়, পর্যটকদের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে ড্রোন প্রজেক্ট, গেস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস ও ক্রাইসিস রেসপন্স টিম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বিমানবন্দরে পর্যটকদের হয়রানির কথা বিবেচনায় বিমানবন্দরে হেল্পডেস্ক চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বাহিনীটির। যেসব পর্যটন এলাকায় অফিস নেই, সেখানে দ্রুত অফিস স্থাপনের চেষ্টা চলছে।
 
ট্যুরিস্ট স্পটের প্রধান শর্ত নিরাপত্তা মন্তব্য করে অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, একসময় কক্সবাজার বিচে অনেক অনিয়ম পর্যটকদের হয়রানি ছিলো, এখন প্রায় নেই। পর্যটন এলাকায় চুরি-ছিনতাই বন্ধসহ পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে সার্বক্ষণিক আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারে প্রায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের শিশু, দামি জিনিসপত্র হারিয়ে যায়। এগুলো খুঁজে পেতে সহায়তাসহ প্রচুর কাজ করা হচ্ছে।
 
তবে বাহিনীটির লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। লোকবল বাড়ানো গেলে আরো নিবিড়ভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

সুত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম